Home LATEST NEWS bangla সর্বশেষ সংবাদ ট্রেইনি ও ইন্টার্ন চিকিৎসকদের ‘টানা কর্মবিরতি’ স্থগিত, তবে থেকেই গেল কিছু প্রশ্ন

ট্রেইনি ও ইন্টার্ন চিকিৎসকদের ‘টানা কর্মবিরতি’ স্থগিত, তবে থেকেই গেল কিছু প্রশ্ন

1
0

Source : BBC NEWS

চার দাবিতে টানা চারদিন ধরে দ্বিতীয় দফায় দেশজুড়ে কর্মবিরতি পালন করছিলেন প্রাইভেট পোস্ট গ্রাজুয়েট ট্রেইনি ও ইন্টার্ন চিকিৎসকরা।

ছবির উৎস, BBC BANGLA

ভাতা বাড়ানো, নয় মাসের বকেয়া ভাতা পরিশোধ, ১২টি প্রতিষ্ঠানের ভাতা বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার এবং চিকিৎসক সুরক্ষা আইন বলবৎ করা – এই চারটি দাবিতে টানা চারদিন ধরে দ্বিতীয় দফায় কর্মবিরতি পালন করছিলেন বাংলাদেশের প্রাইভেট পোস্ট গ্রাজুয়েট ট্রেইনি ও ইন্টার্ন চিকিৎসকরা।

কিন্তু আপাতত কর্মসূচি স্থগিত করে তারা তাদের কাজে ফিরে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

বৃহস্পতিবার বিকেলে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেনের সঙ্গে বৈঠক শেষে তারা তাদের ‘দাবি পূরণের আশ্বাস পেয়ে’ সাময়িকভাবে আন্দোলন থেকে সরে এসেছেন।

ডাক্তারদের দাবির সাথে ‘সহমত’ প্রকাশ করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী তাদেরকে বলেছেন যে এক মাসের মধ্যে তাদের দাবির বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানানো হবে এবং সেই সিদ্ধান্ত আসা অবধি তারা যেন কাজে ফিরে যান।

আরও পড়ুন:

রোগীদের ভোগান্তি

এদিকে, বৃহস্পতিবার বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর এসেছে, ট্রেইনি ও ইন্টার্ন চিকিৎসকদের ধর্মঘটের কারণে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে রোগীরা ভোগান্তির শিকার হয়েছেন।

এর মাঝে সবচেয়ে আলোচিত খবরটি ছিল রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বিনা চিকিৎসায় একজন ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর মৃত্যুর অভিযোগ।

যদিও রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এএফএম শামীম আহমেদ চিকিৎসকের অভাবে মৃত্যুর অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

তিনি বিবিসিকে বলেন, “আমি এই খবরটা মারফত জানলাম, আমার কাছে কেউ সরাসরি অভিযোগ করে নি। কিন্তু তারপরও খবরটা দেখে আমি নিজে ব্যক্তিগতভাবে সবটা তদন্ত করে দেখেছি।”

“যিনি মারা গেছে, তিনি শকের পেশেন্ট ছিল। এই রোগের একটা ফিচার হল ডায়রিয়া থাকে। রোগী হাসপাতালে আসার সঙ্গে সঙ্গে তাকে সব ধরনের চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। আমি নিজে ট্রিটমেন্ট শিট চেক করেছি। তাহলে চিকিৎসার অভাবে মারা গেছে, এই প্রশ্ন কোত্থেকে আসে?”

“চিকিৎসা পায় নাই মানে, তাকে ডাক্তার দেখে নাই। কিছুই করে নাই। কিন্তু ওনাকে তো চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে”, বলেন তিনি।

এসময় তিনি আরও বলেন, গত কয়েকদিন ধরে মেডিকেল কলেজের ইন্টার্ন ও ট্রেইনি চিকিৎসকরা ধর্মঘট করায় লোকবল সংকট দেখা দিয়েছে। কিন্তু এর মাঝেও ডাক্তাররা রোগীদের সেবা দিচ্ছেন।

“এখানে ইন্টার্নরা, কোর্স স্টুডেন্টরা ধর্মঘট করছে। ফলে আমাদের চিকিৎসকদের ওপর চাপ বেড়ে গেছে। ডাক্তাররা রাত দিন এক করে পরিস্থিতি সামাল দিচ্ছে”, তিনি যোগ করেন।

এ সপ্তাহের শুরুতে গত ২৫শে মার্চ থেকে ২৯ শে মার্চ পর্যন্ত, এই পাঁচ দিনে সারা দেশে পূর্ণ কর্মবিরতি (ক্যাজুয়ালিটিসহ) এবং কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছিলেন ট্রেইনি ও ইন্টার্ন চিকিৎসকরা।

ছবির উৎস, BBC BANGLA

তবে ইন্টার্ন ও প্রাইভেট ট্রেইনি চিকিৎসকদের কর্মবিরতির কারণে যে কম-বেশি সব হাসপাতালেই বাড়তি চাপ তৈরি হয়েছে, তার প্রমাণ মিলেছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) গিয়ে।

হাসপাতালগুলোয় রোগীর তুলনায় চিকিৎসক কম থাকায় হিমশিম খাচ্ছিলেন কর্তব্যরত চিকিৎসকরা।

নাম প্রকাশ করতে অনিচ্ছুক, বিএসএমইউ-তে অধ্যয়নরত একজন সরকারি ডাক্তার বলেন, “আমরা আমাদের বেতন পাচ্ছি, তাই আমাদের আন্দোলনে যেতে হচ্ছে না। কিন্তু ওরা আন্দোলন করছে। তাই আমাদের ওপর বাড়তি চাপ পড়ছে। আমার নিজের পেশেন্ট তো দেখাই লাগছে, সাথে ওদেরটাও।”

বিএসএমএমইউ’র শিশু বিভাগের ট্রেইনি ডা. রেজওয়ানা রহমান বলেন, “একেকটা ডিপার্টমেন্টের অর্ধেক, কোনও কোনও ডিপার্টমেন্টের এক তৃতীয়াংশ হলেন প্রাইভেট ডাক্তার। তাই তারা টানা এতদিন ধরে কর্মবিরতিতে থাকায় আমাদের (এমবিএসএস) এখন বেশি রোগী দেখা লাগছে।”

“এই হাসপাতালে তো এমনিতেও রোগীর চাপ বেশি থাকে সব সময়, সেই তুলনায় তো ডাক্তার বেশি না। তাই এখন দেখা যাচ্ছে, যে বেডটা আমি আগে দেখতাম না, ক’দিন ধরে সেটাও আমায় দেখতে হচ্ছে”, বলছিলেন ডা. রহমান।

বিএসএমএমইউ প্রাঙ্গণ

ছবির উৎস, BBC BANGLA

কবে থেকে আন্দোলন চলছে?

এ সপ্তাহের শুরুতে গত ২৫শে মার্চ থেকে ২৯ শে মার্চ পর্যন্ত, এই পাঁচ দিনে সারা দেশে পূর্ণ কর্মবিরতি (ক্যাজুয়ালিটিসহ) এবং কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছিলেন ট্রেইনি ও ইন্টার্ন চিকিৎসকরা।

তবে সবাই মিলে একযোগে কর্মবিরতি পালন করলে হাসপাতালগুলো চরম দুর্ভোগের মাঝে পড়ে যাবে বলে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর অনুরোধে গত দু’দিন ধরে ইন্টার্ন চিকিৎসকরা কর্মবিরতি থেকে সরে এসেছিলেন।

ঢাকা মেডিকেল কলেজের ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি জাবের আব্দুল্লাহ শোভন বলেন, “আমরা শুরু থেকেই এই আন্দোলন করছি। তবে গত দু’দিন ধরে আমরা কাজ করছি।”

তবে ভাতা নিয়ে এটি ছিল তাদের দ্বিতীয় দফার আন্দোলন। শুরু থেকে হিসেব করলে, গত ১৮ই মার্চ থেকে তাদের কর্মবিরতি চলছে।

পোস্ট গ্র্যাজুয়েট প্রাইভেট ট্রেইনি ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ডা. জাবির হোসেন বিবিসিকে বলেন, “গত ১৮ই মার্চ থেকে কর্মবিরতি চলছে ডাক্তারদের। কিন্তু মানবিক দিক বিবেচনা করে আমরা ২৪শে মার্চ পর্যন্ত হাসপাতালের ইমার্জেন্সি বা ক্যাজুয়ালটি রান করি।”

“কিন্তু ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ আমাদের প্রতি কোনও সহানুভূতিশীল দৃষ্টিভঙ্গি দেখায়নি। এই প্রেক্ষিতে হাসপাতালের সমস্ত কর্মকাণ্ড বাদ দিয়ে আমাদের আবার রাস্তায় নামতে হয়েছে।”

এর আগে গত বছরের জুলাই মাসেও এই চিকিৎসকরা পাঁচ দফা দাবিতে আন্দোলনে নেমেছিলেন।

সেই সময়ের কথা উল্লেখ করে ডা. হোসেন বলেন, “গত বছরের জুলাইতে যে আন্দোলন হয়েছিল, সেখানে পাঁচটি শর্তের একটিও পূরণ হয়নি।”

গত ১৮ই মার্চ থেকে তাদের কর্মবিরতি চলছে।

ছবির উৎস, BBC BANGLA

বিবিসি বাংলার আরও খবর:

চিকিৎসকদের চার দফা দাবির ব্যাখ্যা

বাংলাদেশে একজন মেডিকেল শিক্ষার্থী এমবিবিএস পাশ করার পর উচ্চ শিক্ষা তথা বিশেষায়িত ডাক্তার হওয়ার জন্য হয় তারা বিএসএমএমইউ-র অধীনে এমডি বা এমএস; অথবা বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিশিয়ানস অ্যান্ড সার্জনস (বিসিপিএস)-এর অধীনে এফসিপিএস কোর্স করেন।

তবে যারা বিসিএস পাশ করার পর এসব কোর্সে ভর্তি হন, তারা অন্যান্য সরকারি ডাক্তারের মতোই বেতন পান। কিন্তু বাকিদের মাঝে যারা এইসব কোর্স করেন, তাদের জন্য ২৫ হাজার টাকা করে ভাতা বরাদ্দ।

এ বিষয়ে ডা. হোসেন বলেন, “প্রথম পাঁচ বছর এমবিবিএস করি। তারপর এক বছর ইন্টার্নশিপ করি। তারপর পোস্ট গ্রাজুয়েটে চান্স পাওয়ার জন্য একটা স্টুডেন্ট গড়ে দুই থেকে তিন বছর পড়াশুনা করে। এরপর বিএসএমইউ বা বিসিপিএস-এর অধীনে পরীক্ষা দিয়ে আমরা এফসিপিএস কোর্সে ঢুকি।”

“এফসিপিএস ও রেসিডেন্সি যে কোর্সটা, সেখানে আমাদের ভাতা দেওয়া হয়। বিশ্বের সব দেশেই হয়। বাংলাদেশে আগে ২০ হাজার দিত, বর্তমানে বলছে ২৫ হাজার দিবে। কিন্তু এই ২৫ হাজারও আমরা নয় মাস ধরে পাচ্ছি না।”

“কিন্তু অন্যান্য দেশের কথা যদি আমরা চিন্তা করি, ইন্ডিয়াতে এই ভাতার পরিমাণ হলো এক লাখ ২০ হাজার রুপি, অর্থাৎ প্রায় দেড় লাখ টাকা।”

পোস্ট গ্র্যাজুয়েট প্রাইভেট ট্রেইনি ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ডা. জাবির হোসেন

ছবির উৎস, BBC BANGLA

“পাকিস্তানে দেওয়া হয় ৫০ থেকে ৭০ হাজার রুপি। এই ভাতাটা দেওয়া হয়, যাতে আমরা সম্পূর্ণ মনোযোগ দিয়ে হাসপাতালে থাকতে পারি। ভালো স্পেশালিস্ট হওয়ার জন্য প্রতিদিন হাসপাতালে আমাদেরকে ১২ থেকে ১৪ ঘণ্টা দিতে হবে এবং আইনে আছে যে এই সময়টাতে আমরা বাইরে প্র্যাকটিস করতে পারব না, যাতে আমরা ডেডিকেটেডলি সময়টা হাসপাতালে দিতে পারি।”

এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, “বর্তমান বাজারে ২৫ হাজার টাকা পর্যাপ্ত না। আমার ২৮ থেকে ৩৭ বছর পর্যন্ত, এই পুরো সময়টায় যদি আমার মাথায় চিন্তা ঘোরে যে বাসায় গিয়ে আমি পরিবার কীভাবে চালাব, কারেন্ট বিল কীভাবে দিব, বাচ্চাদের খাওয়াবো কী, তাহলে দেশে ভালো স্পেশালিস্ট তৈরি হবে না”, মন্তব্য করেন তিনি।

বিএসএসএমইউ-র অধীনে ১২টি প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানের রেসিডেন্ট এবং নন-রেসিডেন্ট চিকিৎসকদের ভাতা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, “এম আর খান হসপিটাল, বারডেম, নিপসম-সহ ১২টা প্রতিষ্ঠান বলেছে যে তারা ট্রেইনিদের ভাতাই দিবে না। তাহলে এই ডাক্তারদের চলবে কীভাবে?”

বিএসএমএমইউ’র ফিজিক্যাল মেডিসিন এন্ড রিহ্যাবিলিটেশন বিভাগের ট্রেইনি ডা. স্বীকৃতি সরকার হিমিকা

ছবির উৎস, BBC NEWS

চিকিৎসক সুরক্ষা আইন প্রসঙ্গে তার বক্তব্য, “সব জায়াগায় শুনছি, ভুল চিকিৎসায় মারা গেছে। কিন্তু চিকিৎসা ভুল ছিল কি না, সেটা বিশ্লেষণ করার ক্ষমরা সাধারণ জনগণের নাই। এমনকি, ডাক্তার বাদে অন্য কেউ বলতেও পারবে না। কাউকে দোষারোপ করার আগে একোটা ট্রাইবুনালের মাধ্যমে দেখতে হবে যে তার চিকিৎসাটা ভুল ছিল, নাকি রোগীটা সার্ভাইভ করে নাই। ভুল থাকলে সে পানিশড হোক।”

বিএসএমএমইউ’র ফিজিক্যাল মেডিসিন এন্ড রিহ্যাবিলিটেশন বিভাগের ট্রেইনি ডা. স্বীকৃতি সরকার হিমিকা বলেন, “বর্তমান যুগে ৫০ হাজার টাকা কোনও টাকাই না। আমার নন-মেডিকেল বন্ধুরা এক লাখ টাকা বেতন পায়। অথচ আমাদের ভাতা ২৫ হাজার…”

“সেই কত বছর আগে ডাক্তাররা কত টাকা সেটার সাথে এখন তুলনা করলে মুশকিল। সেইসময়ে ১৫ হাজার টাকা দিয়ে অনেককিছু কেনা যেত। এখন এই টাকায় চলা মুশকিল। আমরা যদি এত বছর পড়াশুনা করে একজন ড্রাইভারের চেয়েও কম টাকা বেতন-ভাতা পাই, সেটা লজ্জার।”

চিকিৎসকদের সাথে বৈঠকে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন

মন্ত্রী যা জানিয়েছেন

চিকিৎসকদের সাথে বৈঠকে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন বলেন, “চিকিৎসক ও শিক্ষানবিশ যারা আছেন, বেতন বৃদ্ধির ব্যাপারে তাদের বহুদিনের কয়েকটা দাবি ছিল।”

“বর্তমান বাজারে যেভাবে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে, তাতে তাদের সংসার, দৈনন্দিন জীবন-যাপন অত্যন্ত কষ্টকর। এ দাবির সাথে প্রথম থেকেই আমি একাত্মতা ঘোষণা করেছি। এটা খুবই যৌক্তিক দাবি।”

“বড় বড় প্রফেসররা ওয়ার্ডে যান, দুই ঘণ্টা রাউন্ড দিয়ে চলে আসেন। কিন্তু হাসপাতালকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য ইন্টার্ন, মেডিকেল অফিসাররা জরুরি। তারাই একটা হাসপাতালের প্রথম অলঙ্কার।”

তিনি নিজে এর আগেও দফায় দফায় চিকিৎসকদের সঙ্গে বসেছেন উল্লেখ করে বলেন, “আমি এ বিষয়টা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সাথে কথা বলেছি। উনি শুনেছেন আমার কথা। উনি আমায় বলেছেন, ‘তুমি ওদেরকে কাজে ফিরে যেতে বলো। ওদের বেতন বৃদ্ধি আমি করবো, কিছুদিন সময় দাও’।”

মন্ত্রী জানান, কবে ভাতা বাড়ানো হবে, তা মাসখানেক পরে জানানো হবে এবং “আমার ছেলে-মেয়েরা আজ থেকেই কাজে যোগদান দিবেন।”

ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদের (মিডফোর্ড) সাধারণ সম্পাদক সাদেকুল ইসলাম বলেন, “আমাদের কাজটা দ্রুত গতিতে আগাচ্ছে বলে আমাদেরকে আশ্বস্ত করা হয়েছে।”

“একই সাথে, আমাদের আরও আশ্বস্ত করেছে যে রেসিডেন্ট, নন-রেসিডেন্ট ও এফসিপিএস ট্রেইনি যারা আছেন, ঈদের আগে সকলের বকেয়া ভাতা পরিশোধ করা হবে এবং এক মাসের মধ্যে আমাদের ভাতা বৃদ্ধির বিষয়েও সুনির্দিষ্ট তথ্য জানানো হবে যে আমাদের ভাতাটা কবে বাড়বে, ভাতাটা কত হবে। ভাতা বাড়বে, এই নিশ্চয়তা স্যার (মন্ত্রী) দিয়েছেন। তাই, এক মাসের জন্য আমরা আন্দোলন প্রত্যাহার করছি।”

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল চত্ত্বর।

ছবির উৎস, BBC BANGLA

সেবা বন্ধ রেখে আন্দোলন কতটা যৌক্তিক ছিল?

চিকিৎসকদের দাবির সাথে শুধু মন্ত্রী নন, অনেকেই একাত্মতা প্রকাশ করেন। কিন্তু এ ক্ষেত্রে এই প্রশ্নও সামনে আসে যে নৈতিকতার জায়গা থেকে তারা সব সেবা বন্ধ করে এটি করতে পারেন কি না!

জনস্বাস্থ্যবিদ ও সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইডিসিআর) উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেন এ প্রসঙ্গে বলেন, “তাদের যে হারে বেতন ভাতা দেওয়া হচ্ছে, তা সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য, অমানবিক ও অনৈতিক।”

“কারণ ট্রেইনি ডাক্তাররা রাত-দিন খেটে হাসপাতালে কাজ করে। বাইরে গিয়ে তো এরা কিছু করতে পারে না। এদের বেশির ভাগকেই নাইট ডিউটি দেওয়া হয়। হাসপাতালের মূল কাজ তাদেরকে দিয়েই করানো হয়। কিন্তু এদের এই বেতন বিষয়ক সংকটটা এবারও রয়েই গেল।”

“এরা তো দীর্ঘদিন ধরে বেতন পাচ্ছে না। এরা ঈদ করবে কীভাবে? যাদের বাবা-মায়ের টাকা আছে, তারা পরিবার থেকে টাকা নিয়ে সংসার চালাচ্ছে। এটা তো হওয়া উচিত না, বিষয়টা সম্পূর্ন অমানবিক।”

কিন্তু যে উপায়ে শিক্ষানবিশ ও ডাক্তাররা কর্মবিরতি পালন করলেন, সেটা চিকিৎসা বিজ্ঞানের নৈতিকতার জায়গা থেকে কতটা ঠিক, এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “এথিকস সবারই মানা উচিত।”

“তারা শ্রম নিবে, কিন্তু মাসের পর বেতন বাকি রেখে দিবে, এটাও তো নৈতিকতা না। হ্যাঁ, সাধারণ মানুষ তো (ডাক্তার ও ইন্টার্নদের) প্রতিপক্ষ না। কিন্তু কেন এদেরকে এখানে (কর্মবিরতিতে) যেতে হচ্ছে?”

“এরা তো আজ নতুন না, অনেক আগে থেকেই এই দাবির কথা বলে আসছে। তাহলে কেন সরকার এদের সিদ্ধান্তটা ঝুলিয়ে রাখল, সেটাও তো এক ধরনের ধর্মঘট। সেটা কি নৈতিক?”, পাল্টা প্রশ্ন ডা. মুশতাক হোসেনের।