Home LATEST NEWS bangla সর্বশেষ সংবাদ যুগপৎ সঙ্গীদের সাথে আবার আলোচনা, কোন পথে এগোতে চায় বিএনপি

যুগপৎ সঙ্গীদের সাথে আবার আলোচনা, কোন পথে এগোতে চায় বিএনপি

4
0

Source : BBC NEWS

ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের জন্য শক্ত অবস্থানের ইঙ্গিত দিচ্ছে বিএনপি

ছবির উৎস, Getty Images

‘সরকারের মধ্যেই কোনো গোষ্ঠী নির্বাচন বিলম্বিত করতে সক্রিয় হয়েছে’- এমন আশঙ্কা বিবেচনায় নিয়ে ডিসেম্বরেই নির্বাচনের জন্য ‘সরকারের ওপর চাপ তৈরির’ জন্য সব দলকে এক জায়গায় আনতে কাজ শুরু করেছে বিএনপি।

দলটির সিনিয়র নেতাদের কয়েকজন এই ধারণা দিয়েছেন যে, সরাসরি সরকারের বিরোধিতা করার চিন্তা এখনও নেই। তবে শেষ পর্যন্ত পরিস্থিতি ও নির্বাচনের জন্য মাঠে নামার প্রয়োজন হলে সবাই যেন একযোগে কর্মসূচি নিয়ে নামতে পারে- সেই প্রেক্ষাপট তৈরিই এখন দলটির লক্ষ্য।

বিএনপি ও আরও দুটি দলের নেতারা বলেছেন, নির্বাচন আয়োজন নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের কথায় তারা কোনো আস্থা পাচ্ছেন না। যার মূল কারণ হলো নির্বাচনের বিশাল কর্মযজ্ঞের কোনো প্রাক-প্রস্তুতিই সরকার এতদিনে শুরু করেনি বা করতে পারেনি।

এমন পটভূমিতে সমমনা দলগুলোর সঙ্গে শনিবার থেকে ধারাবাহিক বৈঠক শুরু করেছে বিএনপি। আগামী দু’সপ্তাহ জুড়ে এসব বৈঠকের পর দলের পক্ষ থেকে নির্বাচন নিয়ে সরকারের ওপর চাপ তৈরির জন্য আরও সুনির্দিষ্ট বক্তব্য আসতে পারে বলে জানিয়েছেন দলের একাধিক নেতা।

“নির্বাচনকে বিলম্বিত করা কিংবা না করার একটি চেষ্টা দেখা যাচ্ছে। সরকারের মধ্যেও একটি গোষ্ঠী এগুলোর সাথে আছে বলে মনে হয়। এ প্রেক্ষাপটে আমরা আমাদের কর্মকৌশল ও কর্মপন্থা নিয়ে সমমনা দলগুলোর সাথে আলোচনা শুরু করেছি,” বিবিসি বাংলাকে বলেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন আহমেদ।

তবে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে ‘একটি সর্বোত্তম’ নির্বাচনের প্রস্তুতির কথা আজ আবারো উল্লেখ করেছেন। ঢাকায় এশিয়ান নেটওয়ার্ক ফর ফ্রি ইলেকশনস (এএনএফআরইএল) এর একটি প্রতিনিধি তার সাথে সাক্ষাত করতে গেলে তিনি এমন মন্তব্য করেছেন।

তিনি বলেছেন, “আমরা নিশ্চিত করতে চাই যে নির্বাচনটি হবে দেশের ইতিহাসের সেরা এবং দেশের গণতন্ত্রের যাত্রায় মাইলফলক।”

বিবিসি বাংলায় আরও পড়ুন:
বিএনপির সাথে ১২ দলীয় জোটের বৈঠক

ছবির উৎস, BNP media cell

তারপরেও বিএনপিতে সংশয় কেন

বিএনপি ও সমমনা দলগুলো সবসময়ই জরুরি সংস্কারের পাশাপাশি নির্বাচনের প্রস্তুতির কথা বলে আসছিলো। কিন্তু সরকারের দিক থেকে এতদিন পর্যন্ত সব কার্যক্রম সংস্কার ঘিরে হলেও তাতে কমিশনগুলোর প্রতিবেদন ছাড়া আর কোনো অগ্রগতি হয়নি।

আবার প্রধান উপদেষ্টা আগামী ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে নির্বাচনের কথা বললেও সরকারের দিক থেকে তার কোনো প্রস্তুতির উদ্যোগই নেয়া হয়নি।

এর মধ্যেই সরকার ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত রাজনৈতিক দলের নেতারা ‘আগে সংস্কার পরে নির্বাচন’ কিংবা ‘সংস্কার ও আওয়ামী লীগের বিচারের পরে নির্বাচন’- এসব কথা এসেছে।

একই সাথে ‘ইউনূস ৫ বছর থাকুক’- এমন যে প্রচারণা সামাজিক মাধ্যমে অনেকের চোখে পড়ছে- তার সাথে সরকারেরই একটি অংশের যোগসূত্র আছে বলে ধারণা করছে বিএনপির নীতিনির্ধারকদের অনেকেই।

প্রসঙ্গত, গত কিছুদিন ধরেই সামাজিক মাধ্যমে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে পাঁচ বছর ক্ষমতায় রাখার পক্ষে প্রচার প্রচারণা অনেকেরই দৃষ্টিতে এসেছে।

এসব ক্যাম্পেইন সরকার সমর্থকদের কোনো কোনো অংশের কাজ বলে মনে করছে বিএনপি। একই সাথে কারও কারও মধ্যে ১/১১ এর মতো বিরাজনীতিকরণের একটি চিন্তা দিন দিন ডালপালা মেলছে বলেও মনে করছেন দলটির নেতারা।

এমন পরিস্থিতিতে গত ষোলই এপ্রিল প্রধান উপদেষ্টার সাথে সাক্ষাতের পর নিজেদের অসন্তোষের কথা জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

বৈঠকের সময় তিনি প্রধান উপদেষ্টাকে একটি চিঠি দিয়েছেন, যেখানে ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণার মাধ্যমে জনমনে সৃষ্ট বিভ্রান্তি অবসানে প্রধান উপদেষ্টার প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।

নির্বাচন নিয়ে সরকারের কথায় অসন্তুষ্টির কথা জানিয়েছে বিএনপি

ছবির উৎস, Getty Images

দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন আহমেদ বিবিসি বাংলাকে বলছেন, “দ্রুত নির্বাচন না করা বা বিলম্বিত করার জন্য কোনো কোনো পক্ষের তৎপরতা আমাদের কাছে দৃশ্যমান এবং তাতে সরকারেরও কেউ কেউ জড়িত আছে বলে অনেকের কাছে মনে হচ্ছে। সামাজিক মাধ্যমেও সেটি দেখা যাচ্ছে।”

দলের নেতারা যে ধারণা দিচ্ছেন তাতে গত বুধবার প্রধান উপদেষ্টার সাথে ও তার পরদিন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সাথে যে বৈঠক বিএনপির হয়েছে, তা দলটির নীতিনির্ধারকদের ‘অনেকটাই ক্ষুব্ধ’ করেছে কিংবা তাদের মধ্যে অসন্তোষ তৈরি হয়েছে।

একই সাথে নির্বাচনের একটি সময় ঘোষণা করে তার জন্য প্রস্তুতি শুরুর জন্য যে রোডম্যাপ বিএনপি চাইছে, সেটি এড়ানোর একটি প্রচেষ্টা জোরদার হচ্ছে বলেই তাদের কাছে মনে হয়েছে।

কিন্তু কেন এই অনাস্থা- জানতে চাইলে মি. আহমেদ বলেছেন, “প্রধান উপদেষ্টা ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে নির্বাচনের কথা বলেছেন। কিন্তু এ সময়ের মধ্যে নির্বাচন করার জন্য দিনক্ষণ নির্ধারণ করে প্রস্তুতি নেয়ার কথা তিনি বলছেন না বা সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিচ্ছেন না। আমরা এ বিষয়টিতেই স্পষ্ট হতে চাই।”

জানা গেছে, বৃহস্পতিবার দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এসব বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনার পর শেখ হাসিনা বিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় ছিল, এমন সব দলকে নির্বাচন নিয়ে এক জায়গায় নিয়ে আসার প্রক্রিয়া শুরু হয়।

দলটির চিন্তা হলো, নির্বাচনের দাবিতে রাস্তায় নামতে হলে সরকারের পক্ষে যেন কোনো দল (‘কিংস পার্টি’ ব্যতীত) অবস্থান না নেয়। একই সাথে যুগপৎ আন্দোলনের কর্মসূচি শেষ পর্যন্ত ঘোষণা হলে তাতে যেন সবাই সক্রিয় হয়ে অংশ নেয় সেটি নিশ্চিত করা।

খালেদা জিয়া

ছবির উৎস, Getty Images

বিএনপির সাথে দীর্ঘদিন ধরে যুগপৎ আন্দোলনে করেছে নাগরিক ঐক্য। দলটির সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলছেন, কাউকে যদি দীর্ঘসময় ক্ষমতায় থাকতে হয় সেজন্যও তো নির্বাচন দরকার।

“নির্বাচন ছাড়া তো ক্ষমতায় থাকার সুযোগ নেই। সেজন্যই দলগুলো জরুরি সংস্কার ও নির্বাচনের কথা বলে আসছে। নির্বাচন ছাড়া তো আর কোনো উপায় নেই,” বলছিলেন তিনি।

ধারাবাহিক বৈঠকের অংশ হিসেবে আগামী ২১শে এপ্রিল লেবার পার্টির সাথে বৈঠক করবে বিএনপি। দলটির সভাপতি মুস্তাফিজুর রহমান ইরান বিবিসি বাংলাকে বলছেন, সরকার নির্বাচনের কথা বলছে, কিন্তু সেটি নিয়েই ধোঁয়াশা তৈরি করেছে।

“কোন নির্বাচন করবে সরকার সেটিই তো বলেনি। কেউ বলছে সংসদ নির্বাচন আবার কেউ বলছে গণপরিষদ নির্বাচন। সরকার কি বলেছে তারা কী করতে চায়? আবার উপদেষ্টারা একেকবার একেক কথা বলছেন। দলগুলো তাদের কথা আস্থায় নিতে পারছে না।”

তিনি বলেন, নির্বাচন আয়োজনের আগের যেসব কাজ করতে হয় সেগুলোই সরকার শুরু করেনি।

“তাদের কাজের গতিতে মনে হচ্ছে না যথাসময়ে নির্বাচন তারা দিতে চায়,” বলেছেন তিনি।

ওদিকে বিএনপির সাবেক মিত্র জামায়াতে ইসলামী এতদিন সংস্কারে বেশি গুরুত্ব দিলেও সম্প্রতি দলটির আমির লন্ডনে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের সাথে সাক্ষাতের পর ঢাকায় এসে জরুরি সংস্কার করে আগামী রোজার (২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে) আগেই নির্বাচনের কথা বলেছেন।

মূলত, নির্বাচন দীর্ঘমেয়াদের জন্য বিলম্বিত হলে দেশে বিরাজনীতিকরণের পরিস্থিতি তৈরি হবে এবং তাতে বিএনপি ও জামায়াত ক্ষতিগ্রস্ত হবে- এমন চিন্তা থেকেই দুই দলই ডিসেম্বর বা জানুয়ারির মধ্যে নির্বাচনের বিষয়ে ‘আপাত: একমত’ হয়েছে ইঙ্গিত পাওয়া গেছে।