Source : BBC NEWS

ছবির উৎস, Getty Images
স্থান: বৈসরণ, পহেলগাম
দিন: মঙ্গলবার, ২২শে এপ্রিল
হামলার সময়: দুপুর ২.১৫মিনিট
পহেলগামেরই বাসিন্দা, ঘোড়া-চালক অ্যাসোসিয়েশনের প্রধান আব্দুল ওয়াহিদ ওয়ানিই স্থানীয় মানুষদের মধ্যে প্রথম ব্যক্তি ছিলেন যিনি ঘটনাস্থলে পৌঁছেছিলেন।
বিবিসিকে তিনি বলছিলেন যে পুলিশই তাকে প্রথম ফোন করে খবর দিয়েছিল।
“আমি তখন গানশিবলে ছিলাম। পুলিশ প্রথম ফোনটা আমাকেই করেছিল দুইটা ৩৫ মিনিটে। আমাকে পুলিশ বলল যে বৈসরণে কিছু একটা হয়েছে, আপনি ওখানে গিয়ে দেখুন তো!”
“আমার ভাই সাজ্জাদকে নিয়ে বৈসরণের দিকে একরকম দৌড়তে শুরু করি। প্রায় সোয়া তিনটে নাগাদ আমরা পৌঁছাই সেখানে। আমি ছাড়া সেখানে আর কেউই যায়নি।”
“চারদিকে রক্তাক্ত মানুষজন। পুলিশ আমাদেরও পরে পৌঁছেছিল সেখানে,” বলছিলেন মি. ওয়ানি।
তবে এক সিনিয়র পুলিশ কর্মকর্তা আমাকে বলেছেন যে ঘটনার এক ঘণ্টার মধ্যেই পুলিশ সেখানে পৌঁছে গিয়েছিল।
দ্বিতীয় এক সূত্র থেকেও আমি জানতে পেরেছি যে পুলিশ অন্তত এক ঘণ্টা পরে বৈসরণে পৌঁছেছিল। ওই সূত্রটি এটাও বলেছে যে সেনাবাহিনী আর কেন্দ্রীয় রিজার্ভ পুলিশ বাহিনী পুলিশেরও পরে ঘটনাস্থলে পৌঁছায়।
ওই হামলা নিয়ে আমি বেশ কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তা এবং স্থানীয় মানুষের সঙ্গে কথা বলেছি। তবে সকলেই নাম গোপন রাখার শর্তেই আমার সঙ্গে কথা বলেছেন।

ছবির উৎস, Getty Images
অমরনাথ যাত্রার রাস্তা
প্রতি বছর পহেলগাম বাজার হয়েই লাখ লাখ তীর্থযাত্রী অমরনাথ গুহার দিকে রওনা হন। পহেলগামেরই নুনওয়ান-এ অমরনাথ যাত্রার বেস ক্যাম্প গড়া হয়। এই বেস ক্যাম্প থেকেই প্রতিদিন যাত্রা শুরু করে তীর্থযাত্রীদের দলগুলো।
অমরনাথ যাত্রার সময়ে পহেলগাম থেকে গুহা পর্যন্ত কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকে।
বৈসরণ উপত্যকা আবার সারা বছরই পর্যটকদের জন্য খোলা থাকে। একটি স্থানীয় সূত্র আমাকে জানিয়েছে যে শুধুমাত্র ২০২৪ সালে অমরনাথ যাত্রার সময়ে বৈসরণ পার্ক পর্যটকদের জন্য বন্ধ রাখা হয়েছিল।
ওই সূত্রটি বলছিল যে ২০১৫ সাল পর্যন্ত অমরনাথ যাত্রার সময়ে বৈসরণ পার্কেও নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন থাকত। তবে তারপর থেকে অমরনাথ যাত্রার সময়ে বৈসরণে নিরাপত্তা বাহিনী আর মোতায়েন করা হত না।

ছবির উৎস, ANI
পর্যটক পার্কে সিসিটিভিও নেই
বৈসরণ পর্যটক পার্কের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে বিবিসি বেশ কয়েকজন স্থানীয় মানুষের সঙ্গে কথা বলেছে। এরা বলছেন এই হামলা সর্ম্পূণভাবেই নিরাপত্তার গাফিলতির কারণে হয়েছে।
তারা দাবি করছেন যে পার্কে এত বড় সংখ্যায় পর্যটক গিয়ে থাকেন, সেখানে একটা সিসিটিভি ক্যামেরাও নেই।
আরেকজন স্থানীয় মানুষ আমাকে বলেছেন যে সারাদিন পর্যটকরা আসেন এখানে, কিন্তু একজনও নিরাপত্তারক্ষী সেখানে নেই।
এক পুলিশ কর্মকর্তাও এই কথাটা স্বীকার করলেন যে বৈসরণে সিসিটিভি নেই।

ছবির উৎস, Getty Images
ছিলেন না কোনো নিরাপত্তাকর্মীও
এক সিনিয়র পুলিশ কর্মকর্তা বিবিসিকে বলেছেন যে বৈসরণ যাওয়ার পথে অথবা পার্কের ভেতরে বা তার আশপাশে কোনো নিরাপত্তারক্ষী ছিল না।
কেন্দ্রীয় বাহিনী সিআরপিএফের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা আমাকে বলেছেন, যে কোনো জায়গায় তাদের বাহিনী মোতায়েন করার আগে পুলিশ বা সেনার অনুমতি নিতে হয়।
জম্মু-কাশ্মীর পর্যটন বিভাগের একজন কর্মকর্তা বলছেন যে হামলার দিন সেখানে তিনজন টুরিস্ট অ্যাসিস্ট্যান্ট গাইড বা পর্যটক-গাইড ছিলেন। তারা বৈসরণ পার্কের বাইরে ছিলেন।
তার কথায়, এই পর্যটক গাইডদের কাজ হলো পর্যটকদের রাস্তা দেখানো বা কেউ যদি পর্যটকদের কোনোভাবে হেনস্থা করে, তার ওপরে নজর রাখা।
এদের সঙ্গে নিরাপত্তা ব্যবস্থার কোনো সম্পর্ক নেই এবং তাদের কাছে কোনো অস্ত্রও থাকে না।
এই পর্যটক গাইডদের বিশেষ পুলিশ অফিসার হিসেবে মাসিক ১২ হাজার টাকা বেতনে পুলিশ দফতর থেকে নিয়োগ পান। বর্তমানে পহেলগামে ৩০ জন পর্যটক গাইড আছেন।
বিবিসি এটাও জানতে পেরেছে যে এই গাইডদের ২০১৫ সালে নিয়োগ করা হয়েছিল এবং এদের নিরাপত্তা সংক্রান্ত কোনো প্রশিক্ষণই নেই।
তবে একজন স্থানীয় বাসিন্দা বলেছেন যে বৈসরণ পার্কে কখনো সখনো সেনা সদস্যরা টহল দিয়ে আসে।

ছবির উৎস, Getty Images
পহেলগামে নিরাপত্তা বাহিনীর কত সদস্য আছেন?
পহেলগামে নিরাপত্তাবাহিনীর একটা ‘কোম্পানি’ সবসময়ে মোতায়েন থাকে। এছাড়া সেনাবাহিনীর সদস্যরাও আছেন সেখান, কিন্তু তাদের সংখ্যা বেশি নয়।
পহেলগাম বাজার থেকে সেনাবাহিনীর এই ছাউনিটা প্রায় ছয় কিলোমিটার দূরে। যার অর্থ হলো বৈসরণের ঘটনাস্থল থেকে অন্তত ১২ কিলোমিটার দূরে সেনাবাহিনীর অবস্থান। আর কেন্দ্রীয় রিজার্ভ পুলিশ ফোর্স বা সিআরপিএফের অবস্থান ঘটনাস্থল থেকে ছয় কিলোমিটার দূরে – পহেলগাম বাজারের কাছে।
পহেলগামে পুলিশ থানাও আছে আর রয়েছে স্পেশাল টাস্ক ফোর্স। মোট পুলিশ কর্মীর সংখ্যা অন্তত ৪০।
পহেলগামের বাসিন্দা বছর ৫০-এর এক নারী বলছিলেন যে কয়েক বছর আগে পর্যন্তও তিনি বৈসরণের রাস্তা দিয়ে কাঠ আনতে জঙ্গলে যেতেন। তিনি এই এলাকায় কখনো পুলিশকর্মীদের দেখেননি।
একজন পুলিশ কর্মকর্তা আমাকে বলেছেন যে গত কয়েক বছর ধরেই পহেলগাম শান্ত রয়েছে। তাই পুলিশ বা নিরাপত্তা বাহিনী আন্দাজই করতে পারেনি যে এরকম কোনো ঘটনা হতে পারে।
তিনি আরও বলছিলেন যে নিরাপত্তাবাহিনীর অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস ছিল যে পহেলগামে কোনো ‘চরমপন্থি’ হামলা হতেই পারে না।
একটি সূত্র জানিয়েছে যে বৈসরণে হামলার আগে ওই পার্কে ১০৯২ জন পর্যটক ছিলেন, আর গুলি চলার সময়ে ২৫০ থেকে ৩০০ পর্যটক হাজির ছিলেন। তার কথায় হামলার আগের দিন প্রায় ২৫০০ পর্যটক ওই পার্কে গিয়েছিলেন।
পহেলগাম বাজার থেকে বৈসরণের রাস্তাটি জঙ্গলের মধ্যে যাওয়া এক পাথুরে পাহাড়ি পথ।
এখানে পর্যটকদের হয় ঘোড়ায় চেপে অথবা পায়ে হেঁটে যেতে হয়।

ছবির উৎস, Getty Images
পর্যটকদের ওপরে তিন দশকে সব থেকে বড় হামলা
পর্যটকদের ওপরে এই হামলাটি পর্যটকদের ওপরে গত তিন দশকে সবথেকে বড় হামলা।
জম্মু-কাশ্মীর থেকে ২০১৯ সালে যখন ৩৭০ ধারা তুলে দিল নরেন্দ্র মোদী সরকার, তখন বলা হয়েছিল যে ‘উগ্রপন্থা’ শেষ করতে এই ধারা বড় বাধা ছিল।
কিন্তু এই ধারা সরিয়ে দেওয়ার পর থেকে জম্মু-কাশ্মীরে ‘উগ্রপন্থি’দের হামলা কিন্তু বন্ধ হয়নি। শুধু তাই নয়, এ ধরনের ঘটনা জম্মুর সেই সব অঞ্চলেও ঘটতে শুরু করেছে যে এলাকাগুলো গত ২০ বছর ধরে শান্ত ছিল।