Source : BBC NEWS

ছবির উৎস, Getty Images
৯ মিনিট আগে
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, শান্তি চুক্তিতে পৌঁছানোর বিষয়টিকে মস্কো ও কিয়েভ জটিল করলে রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে আলোচনার মধ্যস্থতা থেকে যুক্তরাষ্ট্র সরে দাঁড়াবে।
শুক্রবার ওভাল অফিসে সাংবাদিকদের তিনি বলেছেন, সুনির্দিষ্ট কয়েক দিনের মধ্যে একটি যুদ্ধবিরতি তিনি আশা করছেন না বরং তিনি চেয়েছেন এটা দ্রুত হোক।
এর কয়েক ঘণ্টা আগেই পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও অগ্রগতির সুস্পষ্ট লক্ষণ না দেখলে যুক্তরাষ্ট্র এই আলোচনা বাদ দিবে বলে সতর্ক করেছিলেন।
“আমরা সপ্তাহ বা মাস ধরে এই প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবো না,” বলেছিলেন মি. রুবিও। তিনি এও বলেছিলেন যে নজর দেয়ার মতো যুক্তরাষ্ট্রের আরও অগ্রাধিকার আছে।
এর মধ্যেই রাশিয়া ইউক্রেনে হামলা অব্যাহত রেখেছে। খারকিভ ও সুমিতে শুক্রবারের হামলায় দুজন নিহত এবং অন্তত একশ মানুষ আহত হয়েছে।
মস্কো ২০২২ সালে ইউক্রেনে সামরিক আগ্রাসন শুরু করেছিলো। রাশিয়ান বাহিনী ধীর গতিতে হলেও ক্রমান্বয়ে দেশটির পূর্বাঞ্চলে অগ্রসর হচ্ছে।
প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন যেকোনো সম্ভাব্য যুদ্ধবিরতির জন্য কয়েকটি শর্ত দিয়েছেন।

ছবির উৎস, Reuters
রাশিয়ান ও ইউক্রেনের মধ্যকার চুক্তির বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প বলেছেন: “আমরা আলোচনা করছি যে মানুষ মারা যাচ্ছে। আমরা তা বন্ধ করতে চাই”।
“এখন কোন কারণে কোন একটি পক্ষ এটিকে জটিল করলে আমরা শুধু বলবো ‘তোমরা বোকা, তোমরা গর্দভ, তোমরা ভয়ানক’ এবং আমরা সরে দাঁড়াচ্ছি”।
ট্রাম্প প্রশাসন শুরুতে এই চুক্তির বিষয়ে আত্মবিশ্বাস দেখালেও এখন পর্যন্ত পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধবিরতির চেষ্টা বাস্তব রূপ লাভ করতে পারেনি। ওয়াশিংটন এজন্য দু পক্ষকেই দোষারোপ করছে।
ওদিকে বৃহস্পতিবার প্যারিসে সম্ভাব্য যুদ্ধবিরতির বিষয়ে ইউরোপীয় নেতাদের এক বৈঠকের পর মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেছেন “আমাদের এখন খুব দ্রুত করতে হবে এবং কয়েক দিনের মধ্যে এটা করা যাবে কি-না সেটার কথা বলছি”।
“যদি সেটি না হয় তাহলে আমরা আমাদের মতো এগিয়ে যাবো,” বলছিলেন তিনি। শান্তি চুক্তি কার্যকর যে কঠিন সেটিও তিনি স্বীকার করেছেন।
আর ট্রাম্প বলেছেন তার দায়িত্ব গ্রহণের ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই এ যুদ্ধ বন্ধ করা উচিত ছিলো।
ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেছেন যে আলোচনা হচ্ছে তা খুবই কঠিন।
“রাশিয়ান পক্ষ নিজেদের স্বার্থ নিশ্চিত করতেই এই সংঘাতের শান্তিপূর্ণ সমাধানে পৌঁছানোর চেষ্টা করছে এবং তারা আলোচনার জন্য প্রস্তুত,” বলেছেন তিনি।

ছবির উৎস, Getty Images
এদিকে রোমে ইটালির প্রধানমন্ত্রী জর্জ মেলোনির সাথে শুক্রবার বৈঠক করেছেন মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স। তিনি বলেছেন ইউক্রেন যুদ্ধ অবসানে তিনি এখনো আশাবাদী।
“রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে আলোচনার কিছু বিষয় এবং গত চব্বিশ ঘণ্টায় যা ঘটেছে সেটি আমি প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়েছি,” বলেছেন তিনি।
“আমি কোন পূর্বানুমান করতে চাই না তবে এই নিষ্ঠুর যুদ্ধকে সমাপ্তির দিকে নিয়ে আসতে পারবো বলে আশা করছি”।
খনিজ সম্পদের বিষয়ে ইউক্রেন ও যুক্তরাষ্ট্র একটি চুক্তির বিষয়ে প্রথম পদক্ষেপ নিচ্ছে এমন খবর আসার পরেই ভ্যান্স এমন মন্তব্য করেছে। ফেব্রুয়ারিতে হোয়াইট হাউজে ট্রাম্প ও জেলেনস্কির উত্তপ্ত আলোচনার পর বিষয়টি কিছুটাই খেই হারিয়েছিলো।
বৃহস্পতিবার দুই দেশ একটি সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর করেছে যার লক্ষ্য হলো ইউক্রেন পুনর্গঠনে একটি বিনিয়োগ তহবিল গঠন করা।
ইউক্রেন সরকারের প্রকাশ করা তথ্য অনুযায়ী ২৬শে এপ্রিলের মধ্যে চুক্তিটি চূড়ান্ত করা তাদের লক্ষ্য।
এর বিস্তারিত জানা না গেলেও আগে যেসব খবরাখবর বেরিয়ে এসেছিলো সে অনুযায়ী খনিজ ছাড়াও সমঝোতাটি হবে ইউক্রেনের জ্বালানি অবকাঠামো এবং তেল গ্যাস পর্যন্ত বিস্তৃত।
ইউক্রেনের আলোচকরা সামরিক সহায়তার বিনিময়ে ট্রাম্প যে অর্থ ফেরত দাবি করছেন সেটি ঠেকানোর চেষ্টা করছে।তবে তারা এই দাবি মানছে যে এটি যুদ্ধ অবসানের পর দেশ পুনর্গঠনে সহায়তা করবে।
ইউক্রেন সরকারের স্মারকে বলা হয়েছে “একটি মুক্ত সার্বভৌম ও নিরাপদ ইউক্রেনে আমেরিকান জনগণের বিনিয়োগ আকাঙ্ক্ষা রয়েছে”।

জেলেনস্কি চুক্তির বিনিময়ে নিরাপত্তা নিশ্চয়তা আশা করছেন। ইউরোপীয় নেতাদের এক বৈঠকে গত মাসে তিনি বলেছেন ‘নিরাপত্তা গ্যারান্টি ছাড়া একটি যুদ্ধবিরতি ইউক্রেনের জন্য বিপজ্জনক হবে’।
কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র নিরাপত্তা নিশ্চয়তা দেয়ার বিষয়টিতে একমত নয়।
হোয়াইট হাউজ বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ীদের উপস্থিতি রাশিয়াকে নতুন আগ্রাসন থেকে বিরত রাখবে।
ইউক্রেনের অর্থমন্ত্রী ইউলিয়া সভিরিদেঙ্কো আর যুক্তরাষ্ট্রের অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট আলাদাভাবে সামাজিক মাধ্যম এক্স-এ সমঝোতা স্বাক্ষরের বিষয়টি ঘোষণা করেছেন।
“আরও অনেক কিছু করতে হবে। কিন্তু এখনকার উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি একটি আশার ভিত্তি তৈরি করেছে যে এই চুক্তি উভয় দেশের জন্য লাভজনক হবে,” সভিরিদেঙ্কো লিখেছেন।
আর বেসেন্ট বলেছেন বিস্তারিত বিষয়গুলো নিয়ে কাজ হচ্ছে তবে চুক্তি আগে যেসব বিষয় নিয়ে ঐকমত্য হয়েছে তার ওপর ভিত্তি করেই হয়েছে।
খনিজ চুক্তিটি আগামী বৃহস্পতিবার স্বাক্ষরের ইঙ্গিত দিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।
ইইউ সংহতির বিষয়ে ইউক্রেনের পার্লামেন্টারি কমিটির চেয়ারম্যান অবশ্য বলেছেন, চুক্তির বিষয়ে শেষ কথা বলবে ইউক্রেনের পার্লামেন্ট।
তিনি বলেন: “যাই স্বাক্ষর হোক না কেন অনুমোদনের জন্য আমি আশা করবো এটা হবে আমাদের দেশ ও জনগণের স্বার্থে”।
বৃহস্পতিবার ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্দ্রি সিবিহা প্যারিসে মার্কো রুবিও এবং ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফের সাথে যুদ্ধ কীভাবে বন্ধ করা যাবে তা নিয়ে আলোচনা করেছেন।
সিবিহা বলেছেন, তারা একটি সুন্দর উপায় ও দীর্ঘস্থায়ী শান্তির বিষয়ে আলোচনা করেছেন যাতে যুদ্ধবিরতি, বহুজাতিক কন্টিনজেন্ট ও ইউক্রেনের জন্য নিরাপত্তা নিশ্চয়তা থাকবে।