Home LATEST NEWS bangla সর্বশেষ সংবাদ জাতীয় নির্বাচন ২০২৬ সালের এপ্রিলের প্রথমার্ধে, জাতির উদ্দেশে ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা

জাতীয় নির্বাচন ২০২৬ সালের এপ্রিলের প্রথমার্ধে, জাতির উদ্দেশে ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা

6
0

Source : BBC NEWS

শুক্রবার সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস

ছবির উৎস, CA PRESS WING

৩ ঘন্টা আগে

বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস জাতীয় নির্বাচনের সম্ভাব্য সময় জানিয়েছেন। শুক্রবার জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে তিনি বলেছেন, আগামী জাতীয় নির্বাচন ২০২৬ সালের এপ্রিলের প্রথমার্ধের যেকোনো একটি দিনে অনুষ্ঠিত হবে।

এই ঘোষণার ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন উপযুক্ত সময়ে নির্বাচনের বিস্তারিত রোডম্যাপ দেবে বলেও জানান প্রধান উপদেষ্টা।

নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা নিয়ে এর আগে জোরালো অবস্থান নেয় দেশের অন্যতম প্রধান দল বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। এমনকি আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন দাবি করে বিএনপি।

তবে প্রধান উপদেষ্টা ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে নির্বাচন দেওয়ার কথা বলছিলেন বারবার।

সম্প্রতি রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে এ নিয়ে তার বেশ কয়েক দফা আলোচনাও হয়।

সর্বশেষ গত দোসরা জুন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের নিয়ে বসেন তিনি।

অবশেষে আজ নির্বাচনের সম্ভাব্য একটি মাস ঘোষণা করলেন প্রধান উপদেষ্টা।

তিনি বলেন, “আমরা এমন নির্বাচন চাই যা দেখে অভ্যুত্থানের শহীদদের আত্মা তৃপ্তি পাবে, তাদের আত্মা শান্তি পাবে। আমরা চাই আগামী নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি ভোটার, সবচেয়ে বেশি প্রার্থী ও দল অংশ নিক। এটা সবচেয়ে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হিসেবে জাতির কাছে স্মরণীয় থাকুক।”

গত দোসরা জুন প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বে ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে ছিলেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা

ছবির উৎস, CA PRESS WING

জাতীয় নির্বাচন কখন হবে সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানার জন্য রাজনৈতিক দল ও জনগণের মধ্যে বিপুল আগ্রহ রয়েছে উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “আমি বারবার বলেছি এই নির্বাচন ডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের জুনের মধ্যে অনুষ্ঠিত হবে। এই সময়ের মধ্যে দেশে নির্বাচন উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টির জন্য যা যা করা দরকার, সরকার তাই করছে।”

“এখানে মনে রাখা জরুরি, বাংলাদেশ স্বাধীনতার পর থেকে যতবার গভীর সংকটে নিমজ্জিত হয়েছে তার সবগুলোরই প্রধান কারণ ছিল ত্রুটিপূর্ণ নির্বাচন। ত্রুটিপূর্ণ নির্বাচন প্রক্রিয়ায় বারবার ক্ষমতা কুক্ষিগত করার মধ্য দিয়ে একটি রাজনৈতিক দল বর্বর ফ্যাসিস্টে পরিণত হয়েছিল। এই ধরনের নির্বাচন যারা আয়োজন করে তারা জাতির কাছে অপরাধী হিসেবে চিহ্নিত হয়ে যায়। এমন নির্বাচনের মধ‍্য দিয়ে যে দল ক্ষমতায় আসে তারাও জনগণের কাছে ঘৃণিত হয়ে থাকে,” বলেন তিনি।

সংস্কার, বিচার ও নির্বাচন এই তিনটি ম্যান্ডেটের ভিত্তিতে দায়িত্ব নিয়েছিলেন বলেও তিনি জানান।

আগামী রোজার ঈদের মধ্যে সংস্কার ও বিচারের বিষয়ে একটি গ্রহণযোগ্য জায়গায় পৌঁছাতে পারবের বলে বিশ্বাস প্রকাশ করেন মুহাম্মদ ইউনূস।

“যেসব সংস্কার প্রশ্নে ঐকমত্য অর্জিত হয়েছে তা কোনো প্রকার কাটাছেঁড়া ছাড়াই” যেন নির্বাচিত সরকার বাস্তবায়ন করে সেটা নিশ্চিত করতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

“আপনারা ওয়াদা আদায় করে নেবেন যে তারা বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, আঞ্চলিক অখণ্ডতা ও জাতীয় মর্যাদার প্রশ্নে কখনো কোনো প্রকার আপস করবেন না এবং দেশের বাইরের কোনো শক্তির কাছে দেশের স্বার্থ বিকিয়ে দেবেন না,” প্রধান উপদেষ্টা যুক্ত করেন।

আরও পড়তে পারেন-
জাতির উদ্দেশে ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস নানা বিষয়ে কথা বলেন

ছবির উৎস, CA PRESS WING

করিডর নিয়ে ‘চিলে কান নিয়ে যাওয়ার গল্প’

মিয়ানমারকে মানবিক করিডর দেওয়া নিয়ে ভুল তথ্য ছাড়ানো হচ্ছে বলে দাবি করেছেন প্রধান উপদেষ্টা।

তিনি বলেছেন, “জাতিসংঘের মহাসচিব গত মার্চ মাসে ঢাকা সফরকালে রাখাইন‌ রাজ্যে মানবিক বিপর্যয়ের মোকাবিলার জন্য একটি ত্রাণ চ্যানেলের প্রস্তাব করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন এই প্রস্তাবটি রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে সহায়ক হবে। বিষয়টি প্রস্তাব পর্যায়েই রয়ে গেছে।”

“আমরা লক্ষ্য করেছি রাখাইনের জন্য বাংলাদেশ করিডোর দিয়ে দিয়েছে বলে একটা অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। আমি সুস্পষ্টভাবে বলছি, এটি সর্বৈব মিথ্যা। এটা চিলে কান নিয়ে যাওয়ার গল্প।”

“যারা অসত্য কল্পকাহিনী বানিয়ে বাংলাদেশের মানুষকে ক্রমাগত বিভ্রান্ত করে অশান্তি সৃষ্টিতে নিয়োজিত, এটা তাদেরই শিল্পকর্ম,” বলেন তিনি।

দেশবাসীকে বিভ্রান্ত না হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

বন্দর ইস্যু

সম্প্রতি চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব বিদেশি কোম্পানি দেওয়ার গুঞ্জনকে কেন্দ্র করে নানা সমালোচনা এবং আন্দোলন-বিক্ষোভ হতে দেখা যায়। এ বিষয়েও কথা বলেছেন প্রধান উপদেষ্টা।

তিনি বলেন, “চট্টগ্রাম বন্দর নিয়ে অনেকের মধ্যে কৌতূহল তৈরি হয়েছে। মাঝেমাঝে এমন কথাও শুনেছি যে এ বন্দর বিদেশিদেরকে নাকি দিয়ে দেওয়া হচ্ছে।”

চট্টগ্রাম বন্দরকে “বাংলাদেশের অর্থনীতির হৃৎপিণ্ড” উল্লেখ করে তিনি বলেন, “বর্তমানে এই হৃৎপিণ্ড অতি দুর্বল। এখন যে অবস্থায় আছে সে অবস্থায় তাকে রেখে দিলে আমাদের অর্থনীতিকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে না। এই হৃদপিণ্ডকে বড় করতে হবে। মজবুত করতে হবে।”

“অভিজ্ঞদের সাহায্য লাগবে” বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

“আমরা যাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি তারা বন্দর ব্যবস্থাপনায় বিশ্বের সেরা, সবচেয়ে অভিজ্ঞ। তারা ইউরোপ, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, চীন, দক্ষিণ কোরিয়া, ভারত, পাকিস্তান, তুরস্ক, মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকাসহ বিশ্বজুড়ে বন্দর পরিচালনা করে। তাদের কাজ বন্দর ব্যবস্থাপনা করা, আমাদের লক্ষ্য হলো বন্দর ব্যবস্থাপনার কাজ যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তাদের কাছ থেকে শিখে নেওয়া।”

“আমি গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি, যদি ৩১ সালের মধ্যে আমরা বন্দরের কাজ শিখে ফেলি এর পরবর্তী ৫ বছরে অর্থাৎ ৩৬ সালের মধ্যে পৃথিবীর যত দেশে যত বন্দর এই কোম্পানিগুলো চালায় তাদের বহু বন্দর এই বাংলাদেশিরাই পরিচালনা করবে।”

আরও পড়তে পারেন-
গত মে মাসে বিএনপির প্রতিনিধি দলের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠক

ছবির উৎস, CA PRESS WING

সংস্কার

এখন পর্যন্ত মোট ৫৪টি মন্ত্রণালয়ে এক হাজারেরও ওপরে সংস্কার ও উন্নয়ন সংক্রান্ত পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলেও ভাষণে জানান প্রধান উপদেষ্টা।

তিনি বলেন, “মে মাস পর্যন্ত বিভিন্ন সংস্কার কমিশন থেকে প্রাপ্ত সুপারিশের ভিত্তিতে ৫৪টি মন্ত্রণালয়ে ১২৯টি সুপারিশ বাস্তবায়ন করা হয়েছে।”

জুলাই-আগস্ট হত্যাযজ্ঞের বিচার ও জুলাই চার্টার

বিগত সরকার পতনের পর “তাদের আজ্ঞাবহ ব্যক্তিরা বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষ্যপ্রমাণ বিনষ্ট করার চেষ্টা করেছে” বলে জানান প্রধান উপদেষ্টা।

“গুরুত্বপূর্ণ স্থানের দলিলপত্র পুড়িয়ে বা লুকিয়ে নষ্ট করার চেষ্টা করা হয়েছে” বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের এজলাস কক্ষ ডিজিটাল প্রযুক্তিতে সমৃদ্ধ করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “ইতিহাসে প্রথমবারের মতো কোনো বিচার পর্ব আদালতের অনুমতিক্রমে সরাসরি কিংবা রেকর্ডকৃত পদ্ধতিতে গণমাধ্যমে প্রচারিত হচ্ছে। আমরা বিশ্বাস করি, এতে করে বিচার বিভাগের প্রতি মানুষের আস্থা বাড়বে। বিচার নিয়ে অপপ্রচার বন্ধ হবে।”

আগামী জুলাই মাসেই সব রাজনৈতিক দলের ঐকমত্যের ভিত্তিতে একটি ‘জুলাই সনদ’ প্রস্তুত করে জাতির সামনে উপস্থাপন করতে পারবেন বলেও আশা প্রকাশ করেন প্রধান উপদেষ্টা।

‘একটা যুদ্ধাবস্থায় আছি’

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “আমাদের সবসময় মনে রাখতে হবে, পতিত ফ্যাসিবাদ ও তার দেশি-বিদেশি দোসররা নতুন বাংলাদেশ গড়ার সম্মিলিত প্রচেষ্টাকে পদে পদে বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তারা নানামুখি অপপ্রচারে লিপ্ত।”

“তারা সবসময় চাইবে জুলাই অভ্যুত্থানের মাধ্যমে তৈরি হওয়া জাতীয় ঐক্যের শক্তিকে পরাভূত করতে, গণতান্ত্রিক আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নের প্রচেষ্টাকে লাইনচ্যুত করতে এবং বাংলাদেশকে পুনরায় করায়ত্ব করতে।”

“আমি আগেও বলেছি, আজ আবারও বলছি, আমরা একটা যুদ্ধাবস্থায় আছি। এখন আমাদের একতাবদ্ধ থাকতে হবে যেকোনো মূল্যে। পরাজিত শক্তি এবং তাদের সহযোগীরা ওত পেতে বসে আছে আমাদের ছোবল মারার জন্য, আমাদের অগ্রযাত্রাকে রুখে দেয়ার জন্য। আমরা তাদের কিছুতেই এই সুযোগ দেব না,” বলেন তিনি।