Source : BBC NEWS

ছবির উৎস, Reuters
২ ঘন্টা আগে
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের পদত্যাগ ভাবনা নিয়ে আলোচনার মধ্যে বাংলাদেশের রাজনীতি এক ধরনের অস্থির সময় পার করছে।
তবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের পদত্যাগ নিয়ে দু’দিন ধরে যে জল্পনা-কল্পনা চলছিলো, সেটি নাকচ করে দিয়েছেন পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ।
উপদেষ্টা পরিষদের এক বিবৃতিতেও অন্তর্বর্তী সরকারের অবস্থান জানানো হয়েছে।
যদিও রাজনীতির গতিপথ কোনদিকে যাচ্ছে সেটা এখনো পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে না।
শনিবার সন্ধ্যার পর রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টির সাথে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠক করার কথা।
উপদেষ্টা পরিষদের ‘অনির্ধারিত বৈঠক’

ছবির উৎস, CA Press Wing
শনিবার দুপুরে ঢাকার শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের সভার পর উপদেষ্টা পরিষদের ‘অনির্ধারিত বৈঠক’ হয়।
সভা শেষে ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ সাংবাদিকদের বলেন, “উনি তো চলে যাবেন- বলেননি। প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন উনি আমাদের সাথে থাকছেন, অন্য উপদেষ্টারাও থাকছেন।”
“আমরা যে কাজ করছি, আমাদের ওপরে যে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সে দায়িত্ব পালনে অনেক প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়েছে; কিন্তু আমরা সকল প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে আমাদের অর্পিত দায়িত্ব, এটা তো বড় দায়িত্ব, এটার ওপর নির্ভর করছে ভবিষ্যত, বহু বছরের ভবিষ্যত, এ দায়িত্ব ছেড়ে তো আমরা যেতে পারব না।”
তবে প্রধান উপদেষ্টার পদত্যাগ প্রসঙ্গে যেটা ঘুরেফিরে সামনে আসছে সেটি হচ্ছে দায়িত্ব পালনে প্রতিবন্ধকতার ইস্যু যেটা আজকের বৈঠকেও সামনে এসেছে বলে জানান মি. মাহমুদ।
পরিকল্পনা উপদেষ্টাসহ কয়েকজন উপদেষ্টার পদত্যাগের জন্য বিভিন্ন দলের পক্ষ থেকে যেসব দাবি প্রসঙ্গে তিনি সেটা দলীয়ভাবে দাবি করা হয়েছে কিনা সে প্রশ্ন রেখে উল্লেখ করেন ”সেরকম কিছু হলে আমরা তো কেউ স্বপ্রণোদিত হয়ে এখানে আসিনি, এই দায়িত্ব খুব উপভোগ্য দায়িত্ব না, সেরকম হলে আমরা যে কেউ পদত্যাগ করতে পারতাম। কিন্তু আমাকে বলা হয়েছে, আসলে দলীয়ভাবে এমন কোনও কথা আসেনি, বরং উল্টোটাই হবে।”
গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, এই ‘অনির্ধারিত বৈঠক’ চলাকালীন ‘জরুরি কাজ আছে’ বলে বেরিয়ে যান পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। তার বেরিয়ে যাওয়ার পরপর উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন ও স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়াকেও বের হতে দেখা গেছে বলে জানা যায়।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে আজকের বৈঠকে ১৯ জন উপদেষ্টা অংশ নেন।
‘উপদেষ্টা পরিষদের বিবৃতি’
উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকের পর প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে একটি বিবৃতি প্রকাশ করে জানানো হয়েছে “যদি পরাজিত শক্তির ইন্ধনে এবং বিদেশি ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে সরকারের উপর আরোপিত দায়িত্ব পালনকে অসম্ভব করে তোলা হয়, তবে সরকার সকল কারণ জনসমক্ষে উত্থাপন করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে।”
‘উপদেষ্টা পরিষদের বিবৃতি’ শিরোনামের সে বিবৃতিতে বলা হয়েছে––”আজ শনিবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের সভা শেষে উপদেষ্টা পরিষদের এক অনির্ধারিত বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপর অর্পিত তিনটি প্রধান দায়িত্ব (নির্বাচন, সংস্কার ও বিচার) বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।”
সেখানে উল্লেখ করা হয়, “এসব দায়িত্ব পালনে বিভিন্ন সময় নানা ধরনের অযৌক্তিক দাবি দাওয়া, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও এখতিয়ার বহির্ভূত বক্তব্য এবং কর্মসূচি দিয়ে যেভাবে স্বাভাবিক কাজের পরিবেশ বাধাগ্রস্ত করে তোলা হচ্ছে এবং জনমনে সংশয় ও সন্দেহ সৃষ্টি করা হচ্ছে, তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয় বৈঠকে।”
“দেশকে স্থিতিশীল রাখতে, নির্বাচন, বিচার ও সংস্কার কাজ এগিয়ে নিতে এবং চিরতরে এদেশে স্বৈরাচারের আগমন প্রতিহত করতে বৃহত্তর ঐক্য প্রয়োজন বলে মনে করে উপদেষ্টা পরিষদ।”
এ বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকার রাজনৈতিক দলগুলোর বক্তব্য শুনবে এবং সরকারের অবস্থান স্পষ্ট করবে–– বলেও জানানো হয় বিবৃতিতে।
“অন্তর্বর্তীকালীন সরকার জুলাই অভ্যুত্থানের জনপ্রত্যাশাকে ধারণ করে। কিন্তু সরকারের স্বকীয়তা, সংস্কার উদ্যোগ, বিচার প্রক্রিয়া, সুষ্ঠু নির্বাচন ও স্বাভাবিক কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্ত করে এমন কর্মকাণ্ড অর্পিত দায়িত্ব পালন করাকে অসম্ভব করে তুললে সরকার জনগণকে সঙ্গে নিয়ে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে,” বলা হয় এতে।

তিন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠক
বাংলাদেশের অন্যতম রাজনৈতিক দল বিএনপি’র সাথে আজ সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় বৈঠকে বসেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গেও আজ রাতেই বৈঠক হওয়ার কথা তার।
একই দিনে নবগঠিত রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি বা এনসিপি’র সঙ্গেও যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার বৈঠকের কথা শোনা যাচ্ছে।
এনসিপি’র যুগ্ম সদস্য সচিব মুশফিক উস সালেহীন জানিয়েছেন, দলের আহ্বায়্ক নাহিদ ইসলামের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল আজ শনিবার রাত সাড়ে ৮টায় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের আমন্ত্রণে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন।
বিএনপির সঙ্গে প্রথমে সন্ধ্যা ৭টায় প্রধান উপদেষ্টার বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। পরে তা পিছিয়ে সাড়ে ৭টায় নেওয়া হয়।
জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে রাত ৮টায় প্রধান উপদেষ্টার বৈঠক হতে পারে বলে জানা গেছে।
এদিকে, বিবিসি বাংলাকে এবি পার্টির চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান মঞ্জু জানান, রোববারও কয়েকটি দলের সঙ্গে বৈঠক করবেন প্রধান উপদেষ্টা, তিনিও আমন্ত্রণ পেয়েছেন।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং সূত্র জানিয়েছে, রোববার প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে কয়েকটি দল বসবে, তবে তারা কোন কোন দল তা এখনো ঠিক হয়নি।

ছবির উৎস, NCP
তবে রাতে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকের তথ্য জানানোর আগেই শনিবার দুপুরে ঢাকায় একটি সংবাদ সম্মেলন করে জাতীয় নাগরিক পার্টি বা এনসিপি।
সেখানে জুলাই ঘোষণাপত্র, বিচার-সংস্কার ও নির্বাচনি রোডম্যাপ একত্রে প্রকাশ করার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি তাদের পক্ষ থেকে আহ্বান জানানো হয়েছে। সেই সাথে সেনাবাহিনীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে, তাদের যে কাজ সেটাই যেন তারা পালন করেন।
দলটির প্রধান নাহিদ ইসলাম বলেন, “শুধু নির্বাচন আয়োজন নয়, বরং জুলাই গণহত্যাসহ বিগত সময়ের অপরাধসমূহের বিচার, রাষ্ট্রের মৌলিক সংস্কার মধ্য দিয়েই সরকারকে নির্বাচনের দিকে যেতে হবে।”
”তাই আমাদের আহ্বান থাকবে, ড. মুহাম্মদ ইউনূস দায়িত্বে থেকেই রাজনৈতিকভাবে সকল পক্ষের সাথে আলোচনা করে একটি সমাধানের দিকে যাবেন। আমরা মনে করি, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে জুলাই ঘোষণাপত্র, বিচার-সংস্কার এবং নির্বাচন, এই তিনটির রোডম্যাপ একত্রে প্রকাশ করা উচিত। তাহলে জনমনে এবং সকল রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে এক ধরনের স্বস্তি ও আস্থার জায়গা তৈরি হবে,” বলেছেন নাহিদ ইসলাম।
জুলাই আন্দোলনে অংশ নেওয়া ছাত্রদের প্রতিনিধি হিসেবে যে দুই উপদেষ্টা (মাহফুজ আলম ও আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া) অন্তর্বর্তী সরকারে রয়েছে, তাদের সাথে জাতীয় নাগরিক পার্টির কোনো সম্পর্ক নেই বলে দাবি করেন নাহিদ ইসলাম।