Home LATEST NEWS bangla সর্বশেষ সংবাদ বৈভব সুরিয়াবংশী: ভারতের ‘১৪ বছর বয়সী’ আইপিএল সেঞ্চুরিয়ান ‘বস বেবি’

বৈভব সুরিয়াবংশী: ভারতের ‘১৪ বছর বয়সী’ আইপিএল সেঞ্চুরিয়ান ‘বস বেবি’

3
0

Source : BBC NEWS

বৈভব সুরিয়াবংশী

ছবির উৎস, Getty Images

২৯ এপ্রিল ২০২৫, ১১:৩৫ +০৬

মাত্র ১৪ বছর বয়সে ৩৫ বলে সেঞ্চুরি–– ভারতের আলোচিত ক্রিকেট টুর্নামেন্ট ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লীগে এর চেয়ে দ্রুত সেঞ্চুরি যিনি করেছেন তার নামের পাশে ‘ইউনিভার্সাল বস’ খেতাব রয়েছে, সেই ক্রিস গেইলের পাশে নাম লিখিয়েছেন ১৪ বছর বয়সী বৈভব সুরিয়াবংশী।

সোমবার রাতে যারা খেলা দেখেছেন তারা অনেকেই তাজ্জব হয়েছেন। যারা দেখেননি, তারাও ক্রিকেটের নানা পোর্টালে চোখ বুলিয়ে নিশ্চিত হওয়ার চেষ্টা করেছেন; কেউ কেউ সোশাল মিডিয়ায় লিখেছেন- ‘ঠিক দেখছি তো?’

এই তো সেদিন অভিষেক ম্যাচে শার্দুল ঠাকুরকে ছক্কা মেরে আলোচনায় এসেছিলেন ‘শিশু’ বৈভব। এবারে আর আলোচনায় নন, সোজা শিরোনামে।

আইপিএল মহা আয়োজন, এর বিজ্ঞাপন, প্রচার প্রচারণা বাজেট কোটি কোটি অর্থ, তবে সেসব বিজ্ঞাপন, বাহারি সব আয়োজন এই এক সেঞ্চুরির কাছে বিবর্ণ।

জয়পুরে সোমবার রাতে এবারের আইপিএলের সবচেয়ে বড় বিজ্ঞাপন বৈভবই দেখিয়েছেন।

কী করেছেন বৈভব সুরিয়াবংশী?

বৈভব সুরিয়াবংশী খেলেন রাজস্থান রয়ালসের হয়ে, রাজস্থানের মাঠ জয়পুরে তিনি মাত্র ৩৫ বলে সেঞ্চুরি করেছেন।

নিজের তৃতীয় আইপিএল ম্যাচেই শতক হাঁকিয়েছেন এই সেনসেশন, এটি আইপিএলে রেকর্ড।

এর আগে মাঠে নামা চতুর্থ ম্যাচে শতক হাঁকিয়েছিলেন মনিশ পাণ্ডে, পল ভলথাটি ও প্রিয়ানশ আরিয়া।

বৈভবই পুরুষ টি২০ ক্রিকেট ইতিহাসের সবচেয়ে কম বয়সী সেঞ্চুরিয়ান।

তাও আবার দ্বিতীয় দ্রুততম হিসেবে রেকর্ড গড়ে- এর আগে ক্যারিবিয়ান তারকা ক্রিকেটার ক্রিস গেইল ২০১৩ সালে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোরের হয়ে ৩০ বলে শতক হাঁকিয়েছিলেন, সেটাই এক যুগ পেরিয়ে আইপিএল ইতিহাসের সবচেয়ে কম বলে করা শতক হয়ে আছে।

বৈভব সুরিয়াবংশী ভেঙেছেন ভারতের হয়ে বিশ্বকাপজয়ী ক্রিকেটার ইউসুফ পাঠানের ৩৭ বলে শতকের রেকর্ড।

ইউসুফ পাঠান এই রাজস্থান রয়ালসের হয়েই ২০১০ সালে ৩৭ বলে শতক হাঁকিয়েছিলেন।

আইপিএলে সবচেয়ে কম বয়সী ক্রিকেটার যারা সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন তাদের মধ্যে রিয়ান পরাগ ও সাঞ্জু স্যামসনও রাজস্থান রয়ালসের হয়েই এই কীর্তি গড়েছিলেন।

আইপিএলে ভারতীয় ব্যাটারদের মধ্যে এক ইনিংসে সবচেয়ে বেশি, ১১টি ছক্কার রেকর্ডেও ভাগ বসিয়েছেন বৈভব সুরিয়াবংশী। তিনি ১০১ রানের ইনিংসে হাঁকিয়েছেন ১১টি ছক্কা, এর আগে মুরলী বিজয় ২০১০ সালে চেন্নাই সুপার কিংসের হয়ে ১২৭ রানের ইনিংসে ১১টি ছক্কা হাঁকিয়েছিলেন।

বৈভব সুরিয়াবংশীর ১০১ রানের ইনিংসে ৯৪ রানই এসেছে চার ও ছক্কা থেকে।

গুজরাট টাইটান্সের অনেকেই এগিয়ে এসে ১৪ বছর বয়সী এই ক্রিকেটারকে অভিবাদন জানান

ছবির উৎস, Getty Images

জয়পুরে বৈভব সুরিয়াবংশীর প্রদর্শনী কেমন ছিল

আইপিএল-২০২৫ এর পয়েন্ট তালিকায় রাজস্থান রয়ালসের অবস্থান খুব একটা ভালো না। জয়পুরে গুজরাট টাইটানসের বিপক্ষে ম্যাচে টসে জিতে ফিল্ডিং নেয় রাজস্থান।

শুরুতে ব্যাট করে জস বাটলার ও শুভমন গিলের শতকে ভর করে গুজরাট টাইটান্স ২০৯ রান তোলে।

কিন্তু এই ২০৯ রানকে ‘সামান্য’ মনে হচ্ছিল ম্যাচের একটা পর্যায়ে।

বৈভব সুরিয়াবংশী ব্যাট হাতে নেমে প্রথম ওভারেই ভারতের জাতীয় দলের ফাস্ট বোলার মোহাম্মদ সিরাজের বলে ছক্কা হাঁকিয়ে শুরু করেন।

তার ব্যাটে এইদিন আর কেউ নিস্তার পাননি, ১০৫ টেস্ট খেলা ইশান্ত শর্মা, বিশ্ব টি-২০ ক্রিকেটের অন্যতম সেরা বোলার রশিদ খান- সবার বল বাউন্ডারি ছাড়া করেছেন বৈভব সুরিয়াবংশী।

ম্যাচের তৃতীয় ওভারে ইশান্ত শর্মাকে তিন ছক্কা, দুই চার মেরে ব্যাটিং ছন্দ ঠিক করে নেন বৈভব। এই ওভারে ২৮ রান এসেছিল।

এরপর ভারতের আরেক টেস্ট ক্রিকেটার ওয়াশিংটন সুন্দরকে পরের ওভারেই দুটি ছক্কা ও একটি চার মেরে মোট ২১ রান তোলেন। এই ওভারেই বৈভব সুরিয়াবংশী ১৭ বলে অর্ধশতক পূর্ণ করেন।

২১০ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নামা রাজস্থান ছয় ওভারেই ৮৭ রান তুলে কাজটা সহজ করে এনেছে ততক্ষণে।

এরপর রশিদ খান নিজের প্রথম দুই ওভারে ৯ রান দিয়ে খানিকটা লাগাম টানার চেষ্টা করেন বটে। কিন্তু দশম ওভারে আফগানিস্তানের তরুণ অলরাউন্ডার করিম জানাতের ছয় বলেই বাউন্ডারি হাঁকান বৈভব সুরিয়াবংশী, তিন ছক্কা ও তিন চার মেরে ৩০ রান তোলেন সেই ওভারে।

পরের ওভারের দ্বিতীয় বলে রশিদ খানকে ছক্কা মেরে ৩৫ বলে শতক পূর্ণ করেন বৈভব সুরিয়াবংশী।

এই মুহূর্তটা ছিল দেখার মতো, যখন কোচ রাহুল দ্রাবিড় হুইলচেয়ার থেকে উঠে দাঁড়িয়ে তাকে অভিবাদন জানিয়েছেন, গোটা স্টেডিয়াম বৈভব সুরিয়াবংশীর নামে কেঁপে উঠছিল, আর মাঠে থাকা ‘ভুক্তভুগী’ প্রতিপক্ষ গুজরাটের ক্রিকেটারদের কেউ কেউ হাতে তালি দিয়ে বৈভব সুরিয়াবংশীর কৃতিত্বকে সম্মান জানাচ্ছিলেন।

৩৮ বলে ১০১ রানে যখন আউট হন বৈভব সুরিয়াবংশী তখন গুজরাট টাইটান্সের অনেকেই এগিয়ে এসে এই ক্রিকেটারকে অভিবাদন জানান।

রাজস্থান রেকর্ড গড়ে ম্যাচটা জিতেছে ২৫ বল হাতে রেখে, টি-২০ ক্রিকেট ইতিহাসে এর চেয়ে কম বলে ২০০ রান তাড়া করেনি কোনো দল।

ম্যাচ শেষে ম্যান অফ দ্য ম্যাচ পুরস্কার পেয়ার সময় বৈভব সুরিয়াবংশী বলেন, “আইপিএলে এটা আমার তৃতীয় ম্যাচ, আর তাতেই সেঞ্চুরি করলাম। অনেক দিন ধরে যা প্র্যাকটিস করছিলাম, তার ফল এখন দেখতে পাচ্ছি।”

তিনি আরও যোগ করেন, “আমি মাঠ দেখি না, শুধু বলের দিকে খেয়াল রাখি। জেয়সওয়ালের সাথে খেললে ভালো লাগে, সাহস পাই। আর পরামর্শও দেয়, তাই সহজে খেলতে পারি।”

আইপিএলে সেঞ্চুরি করাটা যেন ‘স্বপ্নের মতো’ বলছেন বৈভব সুরিয়াবংশী।

ভারতের অনুর্ধ্ব ১৯ দলের হয়ে বৈভব সুরিয়াবংশী

ছবির উৎস, Getty Images

‘বস বেবি’ বৈভব সুরিয়াবংশী

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার ব্যাটিং দেখে ক্রিকেট ভক্তরা নাম দিয়েছেন ‘বস বেবি! অনেকে লিখছেন এই অ্যানিমেটেড চরিত্রের মতোই ছড়ি ঘুরিয়েছেন বৈভব সুরিয়াবংশী।

তবে তার নাম কিন্তু হুট করেই আসেনি। গত বছর দেড়েক ধরেই বৈভব সুরিয়াবংশীর নাম ভারতের ক্রিকেট অঙ্গনে শোনা যাচ্ছিল, এবার নিজেকে বৈশ্বিক পরিচয় দিলেন ব্যাট হাতে।

বৈভব সুরিয়াবংশী আইপিএলের ইতিহাসে প্রথম খেলোয়াড়, যিনি ২০০৮ সালে এই টুর্নামেন্ট শুরুর পরে জন্মগ্রহণ করেছেন এবং আইপিএলে খেলেছেন।

গত বছরের মেগা নিলামে রাজস্থান রয়্যালস তাকে দলে নেয়। দিল্লি ক্যাপিটালসের সঙ্গে তীব্র বিডিং-এর পর তাকে কিনে নেয় রাজস্থান।

বিড শুরু হয়েছিল ৩০ হাজার ইউএস ডলার থেকে, আর শেষ পর্যন্ত রাজস্থান তাকে দুই লাখ ইউএস ডলারে দলে ভেড়ায়।

ট্যাক্স ও আনুষঙ্গিক হিসাব বাদ দিলেও এই ১৪ বছর বয়সী ক্রিকেটার এরই মধ্যে দুই কোটির বেশি টাকার মালিক। কারণ ওই দুই লাখ ডলারের বাইরে এখন প্রতি ম্যাচে ম্যাচ ফি পাচ্ছেন, সাথে আইপিএলের বিশাল বিজ্ঞাপন বাজার তো আছেই।

নিলামের সময় তার বয়স ছিল মাত্র ১৩ বছর এবং তিনি আইপিএলে চুক্তি পাওয়া সবচেয়ে কম বয়সী ক্রিকেটার হয়ে ইতিহাস গড়েন।

তবে এখানে একটা বিতর্ক তৈরি করেছে ২০২৩ সালে দেয়া তার এক সাক্ষাৎকার, যেখানে তার বয়স ১৪ উল্লেখ করা হয়। এই প্রতিবেদন যখন লেখা হচ্ছে তখন জনপ্রিয় ক্রিকেট পোর্টাল ইএসপিএন ক্রিকইনফোর দেয়া তথ্য অনুযায়ী বৈভব সুরিয়াবংশীর বয়স ১৪ বছর ৩২ দিন।

গত বছর তিনি অস্ট্রেলিয়ার অনূর্ধ্ব-১৯ দলের বিরুদ্ধে যুব টেস্ট ম্যাচে ওপেনিংয়ে ব্যাট করে ৫৮ বলে সেঞ্চুরি করেন, যেখানে ছিল চারটি ছক্কা।

এই ইনিংসের মাধ্যমে তিনি অনূর্ধ্ব-১৯ আন্তর্জাতিক ম্যাচে সবচেয়ে কম বয়সী সেঞ্চুরিয়ান হন। এর আগে নিজের রাজ্য বিহারের হয়ে অনূর্ধ্ব-১৯ প্রতিযোগিতায় অপরাজিত ৩৩২ রান করেছিলেন।

মাত্র ১২ বছর বয়সে তিনি বিহারের হয়ে মুম্বাইয়ের বিরুদ্ধে চার দিনের প্রথম শ্রেণির টুর্নামেন্ট, রঞ্জী ট্রফিতে খেলেছিলেন।

ভারতীয় গণমাধ্যমের অলিখিত রীতি অনুযায়ী স্বাভাবিকভাবেই তার এই পারফরম্যান্সের পরে তার নামের সাথে কিংবদন্তি শচীন টেন্ডুলকারের তুলনা শুরু হয়ে যায়, শচীন ১৫ বছর বয়সে মুম্বাইয়ের হয়ে অভিষেক করেছিলেন।

তবে শচীন মাত্র ১৬ বছর বয়সে প্রথম টেস্ট খেলেছিলেন, তবে এই যুগে এসে এটা টি২০ ব্যাটার বৈভব সুরিয়াবংশীর জন্য কঠিনই হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

Skip X post

X কনটেন্টের জন্য কি অনুমতি দেবেন?

এই নিবন্ধে Xএর কনটেন্ট রয়েছে। কোন কিছু লোড করার আগে আমরা আপনার অনুমতি চাইছি, কারণ তারা হয়ত কুকি এবং অন্যান্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে থাকতে পারে। আপনি সম্মতি দেবার আগে হয়ত X কুকি সম্পর্কিত নীতি এবং ব্যক্তিগত বিষয়ক নীতি প়ড়ে নিতে চাইতে পারেন। এই কনটেন্ট দেখতে হলে ‘সম্মতি দিচ্ছি এবং এগোন’ বেছে নিন।

সতর্কবাণী: বিবিসির নয় এমন ওয়েবসাইটের কনটেন্টের জন্য বিবিসি দায়ী না

End of X post

ছবির কপিরাইট

X -এ আরো দেখুনবিবিসি। বাইরের কোন সাইটের তথ্যের জন্য বিবিসি দায়বদ্ধ নয়।

শচীন মুগ্ধ বৈভবকে দেখে

বৈভব সুরিয়াবংশীর খেলা দেখে শচীন টেন্ডুলকার এক্স হ্যান্ডেলে নিজের ভেরিফাইড অ্যাকাউন্টে লিখেছেন, “বৈভবের নির্ভীক মনোভাব, ব্যাটের গতি, দ্রুত বলের অবস্থান অনুমান এবং বলের পেছনে শক্তি সঠিকভাবে ব্যবহার করার দক্ষতাই ছিল তার দুর্দান্ত ইনিংসের মূল রহস্য। ফলাফল ৩৮ বলে ১০১।”

ভারতের সাবেক ক্রিকেটার যুবরাজ সিং একই প্ল্যাটফর্মে লিখেছেন, “আপনি ১৪ বছর বয়সে কী করছিলেন? এই ছেলে কিন্তু পৃথিবীর সেরা বোলারদের সামনে দাঁড়িয়ে চোখের পলক না ফেলেই খেলে যাচ্ছে! বৈভব সুরিয়াবংশী, এই নামটা মনে রাখবেন। নির্ভীক মনোভাব নিয়ে খেলছে। পরবর্তী প্রজন্মকে এভাবে নিজেকে মেলে ধরতে দেখা সত্যিই গর্বের।”

বিহারের হয়ে এখন পর্যন্ত পাঁচটি ম্যাচ খেলেছেন সুরিয়াবংশী, যেখানে তার সর্বোচ্চ স্কোর ৪১ এবং ব্যাটিং গড় ১০। ঘরোয়া একদিনের ক্রিকেটে ছয় ম্যাচে তার সর্বোচ্চ রান ৭১, গড় ২২।

এই পরিস্থিতিতে সাবেক ভারতীয় ওপেনার বীরেন্দ্র শেবাগ সম্প্রতি তাকে সতর্ক করে বলেছেন, “অনেক খেলোয়াড় প্রথম দুই-একটি ম্যাচে খেলে জনপ্রিয়তা পায়, এরপর তারা ভাবে তারকা হয়ে গেছে এবং কিছুই করে না।”

শেবাগ আরও বলেন, “বিরাট কোহলি ১৯ বছর বয়সে শুরু করেছিল এবং টানা ১৮টি আইপিএল মৌসুম খেলেছে। বৈভবেরও সেই লক্ষ্য থাকা উচিত। কিন্তু যদি সে ভাবে প্রথম বলেই ছক্কা মেরে এবং কোটি টাকা আয় করে সে সফল হয়ে গেছে, তাহলে হয়তো তাকে আগামী মৌসুমেই দেখা যাবে না।”