Source : BBC NEWS

ছবির উৎস, EPA
৮ ঘন্টা আগে
সোমবারের ভয়াবহ বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের পর স্পেন ও পর্তুগালের পরিস্থিতি এখনো পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়নি। সংকট কাটিয়ে ওঠার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা চালানো হচ্ছে বলে জানিয়েছে দেশ দুটির সরকার। বিদ্যুৎ সংযোগ অনেকটাই ফেরানো সম্ভব হলেও কিছু কিছু পরিষেবা এখনো চালুর চেষ্টা চলছে।
স্পেনের ইতোমধ্যেই প্রায় ৯৯. ৯৫ শতাংশ এলাকায় বিদ্যুৎ ফিরে এসেছে বলে জানিয়েছে স্পেনের বিদ্যুৎ সংস্থা রেড ইলেকট্রিকা।
তবে বিদ্যুৎ না থাকার কারণে ব্যাপক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হওয়ায় যে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছিলো দেশটির সরকার তা এখনো চলছে। শৃঙ্খলা বজায় রাখতে সারা দেশে অন্তত ৩০ হাজার পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।
পরিস্থিতি পুরোপুরি স্বাভাবিক হতে আরও সময় লাগবে বলে স্পেনের সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়।
যদিও পর্তুগালে বিদ্যুৎ পরিস্থিতি পুরোপুরি স্বাভাবিক হতে প্রায় এক সপ্তাহ সময় লেগে যেতে পারে বলেও ইঙ্গিত দিয়েছিলেন বিদ্যুৎ কর্মকর্তারা, তবে মঙ্গলবার সকালের দিকে সবখানে বিদ্যুৎ সংযোগ ফেরানো সম্ভব হয় বলে সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়।
এদিকে, ঠিক কী কারণে এতবড় বিদ্যৎ বিপর্যয় ঘটলো সেটি এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
ঘটনার পর অনেকেই ধারণা করছিলেন যে সাইবার আক্রমণের কারণে স্পেন, পর্তুগাল ও ফ্রান্সের আংশিক বিদ্যৎ বিপর্যয় ঘটে থাকতে পারে।
তবে পর্তুগালের প্রধানমন্ত্রী লুইস মন্টিনিগ্রো জোর দিয়ে বলেছেন যে, এখন পর্যন্ত তারা সাইবার আক্রমণের “কোনো ইঙ্গিত” পাননি।
আর স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণ ঘিরে ছড়িয়ে পড়া গুজবের বিষয়ে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন।

ছবির উৎস, Reuters
সমস্যার সূত্রপাত স্পেন থেকে হয়ে থাকতে পারে বলে ধারণা করছেন পর্তুগালের কর্মকর্তারা।
যদিও স্পেন সেটি স্বীকার করেনি। দেশটির কর্মকর্তাদের ধারণা করছেন যে, ফ্রান্সের সঞ্চালন লাইনে সমস্যার কারণে বিদ্যুৎবিভ্রাট ঘটে থাকতে পারে।
ইউরোপের বিদ্যুৎ সংস্থা ইউরেলেকট্রিকের কর্মকর্তা ক্রিস্টিয়ান রুবি বিবিসি রেডিও ফোরের ‘দ্য ওয়ার্ল্ড টুনাইট’কে বলেছেন যে, ফ্রান্স ও স্পেনের মধ্যে যে সঞ্চালন লাইন রয়েছে, সেটিতে বড় ধরনের ত্রুটি দেখা দিয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছেন তারা।
“এর মানে হলো, স্পেনের বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনটি বৃহত্তর ইউরোপীয় সঞ্চালন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে,” বিবিসিকে বলেন মি. রুবি।
তবে এ ঘটনার পেছনে অন্য আরও কারণ থাকতে পারে বলেও জানিয়েছে ইউরেলেকট্রিক।
সোমবার দুপুরের দিকে স্পেনে প্রথম বিদ্যুৎ বিভ্রাটের ঘটনা জানা যায়।
তখন মাদ্রিদের মেয়র বাসিন্দাদেরকে রাস্তায় না থাকা এবং কেবল খুব জরুরি কিছু হলে জরুরি পরিষেবায় ফোন করার পরামর্শ দেন।
স্পেনের পাশাপাশি পর্তুগাল ও ফ্রান্সের একাংশেও বিদ্যুৎ বিভ্রাটের ঘটনা ঘটে।
তবে মঙ্গলবার পর্তুগালের সরকার নিশ্চিত করেছে, সোমবার দেশব্যাপী ব্ল্যাকআউটের পরে বিদ্যুৎ সরবরাহ পুনরুদ্ধার করা হয়েছে।
পানি সরবরাহ এখন পুরো পর্তুগাল জুড়ে চলছে। লিসবন ও পোর্তোর মেট্রো সিস্টেমগুলো কাজ করছে, যদিও কিছু বিলম্ব রয়ে গেছে।
লিসবনের প্রধান বিমানবন্দরে এখনো কিছু পুনরুদ্ধারের কাজ চলছে, তবে সেখানে এবং অন্যান্য প্রধান বিমানবন্দরে বেশিরভাগ ফ্লাইট চলছে।
স্কুলগুলো আবার খোলার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে এবং সরকারের মতে স্বাস্থ্য পরিষেবা এখন সম্পূর্ণ স্থিতিশীল।

ছবির উৎস, EPA
গণপরিবহনে স্থবিরতা, ভোগান্তি
বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে স্পেন ও পর্তুগালের গণপরিবহনে স্থবিরতা নেমে আসে। সড়কে ট্রাফিক লাইট কাজ করছিল না বলে জানিয়েছেন দেশ দু’টির পুলিশ কর্মকর্তারা। এসে সড়কে তীব্র বিশৃঙ্খলা ও যানজট সৃষ্টি হয়।
এছাড়া অনেক এলাকায় ট্রেন চলাচলও বন্ধ হয়ে যায়।
স্পেনের পরিবহনমন্ত্রী অস্কার পুয়েন্তে জানিয়েছেন, সোমবার রাত পর্যন্ত বিভিন্ন স্পেশনে অন্তত ১১টি ট্রেন আটকা পড়ে। সেগুলোতে বহু যাত্রীও আটকা পড়েন বলে জানা যাচ্ছে।
বিদ্যুৎ বিভ্রাট যখন ঘটে, তখন মাদ্রিদের একটি ট্রেনে অবস্থান করছিলেন গ্যাব্রিয়েলা শ্যাভেজ নামের একজন যাত্রী।
তিনি বিবিসিকে বলেন, ট্রেন চলা অবস্থায় হঠাৎ করেই বিদ্যুৎ চলে যায়। এরপর ট্রেনের কোনো কিছু কাজ না করায় যাত্রীরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন।
পরে কর্মকর্তারা এসে আটকে পড়া ট্রেন থেকে যাত্রীদের বের করার ব্যবস্থা নেন।

ছবির উৎস, EPA
“তারা সবাইকে ট্রেন থেকে নামিয়ে দিয়েছে। কিন্তু আমাদের কতক্ষণ অপেক্ষা করতে হবে তা আমাদের জানা নেই,” সোমবার ঘটনার পর বিবিসিকে বলেন মি. শ্যাভেজ।
ট্রেন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বাসের ওপর যাত্রীদের চাপ বেড়েছে। মাদ্রিদে অনেক বাসে যাত্রীদের গাদাগাদি করে গন্তব্যস্থলে যেতে দেখা গেছে।
বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের কারণে বিমানের সিডিউলও বাতিল করা হয়েছে। এ অবস্থায় বিপাকে পড়েছেন স্পেন ও পর্তুগালে অবস্থানরত পর্যটকরা।
এয়ারলাইন সংস্থা ইজিজেট বিবিসিকে জানিয়েছে যে, লিসবন ও মাদ্রিদে তাদের কার্যক্রমে কিছুটা ব্যাঘাত ঘটছে। পরিস্থিতি “অস্বাভাবিক” বলে মন্তব্য করেন কর্মকর্তারা।
বিমান পরিবহন নিয়ে কাজ করা সংস্থা সিরিয়াম জানিয়েছে যে, সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত পর্তুগালে ৯৬টি এবং স্পেনে অন্তত ৪৫টি ফ্লাইট বাতিল করা হয়।
হাসপাতালগুলোর সেবা কার্যক্রমেও ব্যাপক ব্যাঘাত ঘটে।
দীর্ঘসময় ধরে বিদ্যুৎ না থাকায় কোথাও কোথাও মোবাইলের নেটওয়ার্কেও বন্ধ হয়ে যায়। ফলে পরিবার-পরিজনদের সঙ্গে যোগাযোগও করতে পারছিলেন না তারা।

ছবির উৎস, Getty Images
স্পেন ও পর্তুগালের সরকার বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধানে বৈঠক করেছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে দেশ দু’টিতে একাধিক কমিটিও গঠন করা হয়েছে।
সোমবার হঠাৎ সারা দেশে বিদ্যুৎবিভ্রাট শুরু হওয়ার পর স্পেনের পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোও স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধ হয়ে যায়।
স্প্যানিশ তেল কোম্পানি মোয়েভ জানায়, তাদের তেল শোধনাগারগুলোর কার্যক্রমও বন্ধ হয়ে যায়।
বিদ্যুৎ বিভ্রাটের শুরুতে স্পেনের কিছু ব্যবসা প্রতিষ্ঠান জেনারেটর চালু করে প্রাথমিকভাবে কাজ চালালেও কয়েক ঘণ্টার মধ্যে সেগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়।
বাড়ি-ঘরে চার্জার লাইট ও মোমবাতি জ্বালিয়ে কাজ চালান বিদ্যুৎবিহীন এলাকার বাসিন্দারা।
স্পেনে সোমবার টেনিস ও ফুটবলের যেসব ম্যাচগুলো ছিল, সেগুলোও বাতিল করা হয়।
তবে বিদ্যুৎ ফিরতে শুরু করায় এখন ধীরে ধীরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।
সোমবার মধ্যরাতে বিদ্যুৎ ফিরতে শুরু করলে মাদ্রিদসহ স্পেনের অনেক এলাকার বাসিন্দাদের উচ্ছ্বাস প্রকাশ করতে দেখা গেছে।