Home LATEST NEWS bangla সর্বশেষ সংবাদ সংস্কৃতি উপদেষ্টাকে প্রশ্ন করার জেরে তিন সাংবাদিকের চাকরিচ্যুতি – যা জানা যাচ্ছে

সংস্কৃতি উপদেষ্টাকে প্রশ্ন করার জেরে তিন সাংবাদিকের চাকরিচ্যুতি – যা জানা যাচ্ছে

4
0

Source : BBC NEWS

সোমবার সচিবালয়ে সংস্কৃতিক বিষয়ক উপদেষ্টার সংবাদ সম্মেলন

ছবির উৎস, SCREEN GRAB

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টার সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্ন করার জের ধরে দুইটি টেলিভিশন মিডিয়ার দু’জন সাংবাদিককে চাকুরিচ্যুত করার অভিযোগ উঠেছে। একই ঘটনার জেরে আরেকটি চ্যানেল একজন সাংবাদিককে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়ে তদন্ত শুরু করেছে।

এসব টেলিভিশন চ্যানেলের মধ্যে একটি এটিএন বাংলা। ওই চ্যানেলটির একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছেন, সোমবার সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টার সংবাদ সম্মেলনে তাদের রিপোর্টারের প্রশ্নের বিষয়টিতে তারা বিব্রত।

এটিএন বাংলার প্রধান নির্বাহী সম্পাদক মনিউর রহমান বিবিসি বাংলাকে জানান, সংবাদ সম্মেলনের প্রশ্নের জের ধরে তাদের টিভি চ্যানেল ঘেরাওয়ের হুমকি দেয়া হয়েছে। যে কারণে ওই প্রতিবেদককে চাকুরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে।

একই কারণে দীপ্ত টিভির একজন সাংবাদিককেও চাকরিচ্যুত করা হয়েছে।

সেই সাথে সোমবার দীপ্ত টিভির সংবাদ প্রচার অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির হেড অব নিউজ এস এম আকাশ।

প্রতিষ্ঠান দুটিতে কর্মরতদের সাথে কথা বলে বিবিসি বাংলা জানতে পেরেছে যে, সোমবার সচিবালয়ে সংস্কৃতি উপদেষ্টার একটি সংবাদ সম্মেলনে ওই দুই প্রতিষ্ঠানের দুই রিপোর্টারের প্রশ্ন ঘিরেই তাদের বরখাস্ত করা হয়েছে।

একই কারণে চ্যানেল আইয়ের এক রিপোর্টারকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়ে তদন্ত শুরু করার কথা জানিয়েছে টেলিভিশন কর্তৃপক্ষ।

এ নিয়ে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বিবিসি বাংলা কথা বলেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর সাথে।

মি. ফারুকী বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, “আজকে সারাদিন আমি বিশ্রামে ছিলাম। আপনার কাছেই প্রথম এটা জানলাম। আমি বা আমার মন্ত্রণালয় এই বিষয়ে একদমই ওয়াকেবহাল না। ঐ প্রতিষ্ঠানগুলোই আসলে বলতে পারবে তাদের এই সিদ্ধান্তের পেছনের কারণ কী”।

অন্যদিকে সন্ধ্যায় সচিবালয়ে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের এক অনুষ্ঠানে উপদেষ্টা মো. মাহফুজ আলম জানিয়েছেন, সরকার দীপ্ত টিভির সংবাদ কার্যক্রম বন্ধ করেনি। এটি দীপ্ত টিভি-কর্তৃপক্ষের অভ্যন্তরীণ সিদ্ধান্ত।

আরো পড়তে পারেন:
সংস্কৃতিক বিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী

ছবির উৎস, SCREEN GRAB

কী হয়েছিল সংস্কৃতি উপদেষ্টার সংবাদ সম্মেলনে?

সোমবার সচিবালয়ে কান চলচ্চিত্র উৎসবে বাংলাদেশি শর্টফিল্ম ‘আলী’র প্রদর্শনীর আমন্ত্রণ নিয়ে সংবাদ সম্মেলন অংশ নেন মোস্তফা সরয়ার ফারুকী।

এই সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত একাধিক সাংবাদিক বিবিসি বাংলাকে জানান, সংবাদ সম্মেলনের এক পর্যায়ে সাংবাদিকরা সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টার কাছে সাম্প্রতিক নানা ইস্যুতে প্রশ্ন করেন।

সেখানে এক পর্যায়ে চ্যানেল চ্যানেল আইয়ের সাংবাদিক রফিকুল বাসার পহেলা বৈশাখের শোভাযাত্রায় শেখ হাসিনার মোটিফ প্রসঙ্গ তুলে সংস্কৃতি উপদেষ্টার কাছে জানতে চান, ”শেখ হাসিনার মোটিফ প্রদর্শন করার বিষয়টি কী ঠিক হয়েছে? নাকি এতে সমস্যা আরো দীর্ঘায়িত হলো?”

পাল্টা প্রশ্ন করে সাংস্কৃতি উপদেষ্টা বলেন, “এবার নববর্ষের থিম কী ছিল”?

তখন সাংবাদিক মি. বাসার পাল্টা প্রশ্ন করেন, “এতে কী ঐক্য হলো? আমরা কি সুন্দর জায়গাতে গেলাম নাকি আরো অসুন্দরের দিকে গেলাম?”

জবাবে উপদেষ্টা মি. ফারুকী বলেন, “মোটিফ কী ব্যবহার করবে এটা চারুকলা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিদ্ধান্ত”।

এই প্রশ্নের উত্তরে সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা জুলাই অগাস্টের আন্দোলনে নিহতের সংখ্যা ১৪০০ ছিল বলে উল্লেখ করেন।

তখন দীপ্ত টিভির রিপোর্টার মিজানুর রহমান উপদেষ্টা মি. ফারুকীর কাছে প্রশ্ন করেন, “জুলাই আন্দোলনে নিহতের সংখ্যা ১৪০০ আপনি কীভাবে বলেন? এটা তো যারা রাজনীতিবিদ তারা বলবে”।

জবাবে সংস্কৃতি উপদেষ্টা বলেন, “আমি জাতিসংঘের রিপোর্টের ভিত্তিতে বলেছি। আপনি রিসার্চ করুন। প্লিজ ডু ইওর ওউন রিসার্চ”।

পরে সাংবাদিক মিজান উপদেষ্টা মি. ফারুকীকে পাল্টা প্রশ্ন করেন, “উপদেষ্টা ফারুকী আপনি তো বললেন ১৪০০ মানুষ যিনি খুন করেছেন, আপনি কিভাবে বুঝলেন একজন মানুষ ১৪০০ মানুষকে খুন করেছে? এটা তো কোর্ট রায় দিবে। আপনি বায়াসড উত্তর দিলেন”।

জবাবে উপদেষ্টা পাল্টা প্রশ্ন করেন, “৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের পরে আপনার মতো একজন সাংবাদিক যদি এসে বলতেন, কী করে আপনি বলছেন এত লোককে পাকিস্তানিরা মেরেছে। কোর্ট তো ভার্ডিক্ট দেয় নাই এখনো। দিস এই অ্যাবসার্ড। ডোন্ট সে দিস”।

এই বিষয়টি নিয়ে কয়েকজন সাংবাদিক উপদেষ্টা ফারুকীকে নানা প্রশ্ন করেন।

সংবাদ সম্মেলনে আরো দুয়েকজন সাংবাদিক এসব বিষয় নিয়ে প্রশ্নের একপর্যায়ে গিয়ে সংবাদ সম্মেলন শেষ হয়।

সেখানে অভিনেতা ইরেশ জাকেরের বিরুদ্ধে জুলাই আন্দোলনের ঘটনায় মামলা নিয়েও প্রশ্ন করা হয়। সেসবের জবাব দেন উপদেষ্টা।

ফেসবুক পোস্টে আন্দোলনের হুমকি দেয়া হয়েছি ফেসবুক পেজ থেকে

ফেসবুকে আন্দোলনের হুমকি

ওই ঘটনার পরপরই ‘জুলাই রেভ্যুলেশনারী অ্যালায়েন্স-জেআরএ’ ফেসবুক পেজ থেকে এই ইস্যু নিয়ে কয়েকটি পোস্ট দেয়া হয়।

সেখানে দীপ্ত টিভির সাংবাদিক মিজানুর রহমান, চ্যানেল আইয়ের সাংবাদিক রফিকুল বাসার ও এটিএন বাংলার রিপোর্টার ফজলে রাব্বির ছবি দিয়ে পোস্ট করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানানো হয়।

ওই চ্যানেলগুলো তাদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নিবে তা দ্রুত জানানোরও দাবি জানানো হয় ফেসবুক পোস্ট থেকে।

ওই পেজের এই পোস্ট সোমবার রাত থেকে অনেককে শেয়ারও করতে দেখা যায়।

মঙ্গলবার দুপুরে ওই তিন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ব্যবস্থা নেয়ার আল্টিমেটাম দিয়ে আবারো ফেসবুকে পোস্ট দেয়া হয়।

তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে “মার্চ টু দীপ্ত টিভি ,চ্যানেল আই ,এটিএন বাংলা ” কর্মসূচি পালনেরও হুমকি দেয়া হয় ওই পেজ থেকে।

জুলাই রেভ্যুলেশনারী অ্যালায়েন্স-জেআরএ পেজটিতে একটি ফোন নম্বর দেয়া রয়েছে। যোগাযোগের জন্য ওই নম্বরটিতে ফোন করা হলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।

সন্ধ্যায় ওই পেজ থেকেই এটিএন বাংলার সাংবাদিক ফজলে রাব্বি ও দীপ্ত টিভির সাংবাদিক মিজানুর রহমানকে তাদের প্রতিষ্ঠান থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে জানিয়ে একটি পোস্ট দেয়া হয়। একই সাথে বরখাস্তের চিঠিও সেখানে আপলোড করা হয়।

বিবিসি বাংলার অন্যান্য খবর
মঙ্গলবার দুপুর থেকে দীপ্ত টিভির খবর বন্ধ করে চ্যানেল কর্তৃপক্ষ

তিন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা, দীপ্ত টিভির খবর বন্ধ

রোববার দুপুরে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল দীপ্ত টিভির সাংবাদিক রহমান মিজানুর রহমানকে বরখাস্ত করা হয়। বরখাস্ত করে দেয়া ওই চিঠিতে কোন কারণ উল্লেখ করা হয়নি।

একই সময় টেলিভিশন চ্যানেলটি তাদের নিউজ স্ক্রলে ঘোষণা দেয়, ‘অনিবার্য কারণবশত দীপ্ত টিভির সকল সংবাদ পরবর্তী ঘোষণা না দেয়া পর্যন্ত স্থগিত থাকবে।

রাতে অব্যাহতি দেয়া হয় প্রতিষ্ঠানটির ডিজিটাল ইনচার্জ মাহমুদুর রহমান শাওনকে।

এ বিষয়ে বিবিসি বাংলা কথা বলে দীপ্ত টিভির হেড অব নিউজ এসএম আকাশের সাথে।

তিনি বিবিসি বাংলাকে জানান, “আমাদের ম্যানেজমেন্টের সিদ্ধান্ত আপাতত, দীপ্ত টেলিভিশনের সংবাদ প্রচার হবে না। এই হচ্ছে তাদের সিদ্ধান্ত। আজকে দুপুর থেকে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়েছে”।

মিজানুর রহমানের বরখাস্তের কারণ কী, জানতে চাইলে তিনি বলেন, “এটা এইচআর বিভাগ করেছে। তারা কাউকে বরখাস্ত করলে কোন কারণ দেখায় না। একই সাথে এটার সাথে নিউজ বন্ধের সাথে কোন সম্পর্ক আছে কী না সেটাও বলা হয়নি”।

আর এটিএন বাংলা থেকে ফজলে রাব্বীকে বরখাস্ত করে যে চিঠি দেয়া হয়েছে তাতে বলা হয়েছে, ‘রিপোর্টিংয়ের কাজে যথাযথ পেশাগত দায়িত্ব পালন না করায় তাকে চাকুরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে।

জানতে চাইলে এটিএন বাংলার প্রধান নির্বাহী সম্পাদক মনিউর রহমান বিবিসি বাংলাকে বলেন, “গতকালের প্রেস কনফারেন্সের বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। এটা নিয়ে জুলাই রেভ্যুলেশন অ্যালায়েন্স পেজে পোস্ট দেয়া হয়েছে। সেখানে দীপ্ত, চ্যানেল আই ও এটিএন বাংলার সাংবাদিককে অভিযুক্ত করা হয়েছে এবং বলা হয়েছে এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে ঘেরাও কর্মসূচি পালন করা হবে। মূলত সে কারণেই এই পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে”।

“আমাদের রিপোর্টার যখন প্রেস কনফারন্সে কাভার করেছে এটিএন বাংলার হয়ে। সে এই প্রশ্ন করার ব্যাপারে আমাদের সাথে কোন পরামর্শ তো করেনি। আমাদের চ্যানেল থেকেও এই রকম প্রশ্ন করতে বলা হয়নি”, যোগ করেন তিনি।

তিনি বলেন, “সেখানে সংস্কৃতি উপদেষ্টা একটা কথা বলেছে। সেটাকে পাল্টা প্রশ্ন করা বা এটাতে ডিজঅ্যাগ্রি করতে তো আমরা রিপোর্টারকে বলে দেই নি। রিপোর্টার হিসেবে আমাদের রিপোর্টার ব্যক্তিগতভাবে প্রশ্নটা করেছে”।

এদিন সন্ধ্যায় চ্যানেল আই তাদের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। সেখানে জানানো হয়, সংস্কৃতি উপদেষ্টার সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্নোত্তর পর্বে পেশাদারিত্ব প্রদর্শন করার অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট রিপোর্টারের বিষয়ে চ্যানেল আই কর্তৃপক্ষ তদন্ত শুরু করেছে।

একই সাথে ওই রিপোর্টারকে তার দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে বলেও জানানো হয় বিজ্ঞপ্তিতে।

এই বিষয়ে ফজলে রাব্বি বিবিসি বাংলাকে বলেন, ”সারাদিন অ্যাসাইনমেন্ট করেছি, অফিসে ফেরার পর আমাকে একটা চিঠি ধরিয়ে দেয়া হয় যে, আমাকে বরখাস্ত করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, আমি নাকি অপেশাদার আচরণ করেছি।”

”এর আগেও আমার সাথে একাধিকবার সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছিল। এবার আমাকে কেন বা কী কারণে অপেশাদার আচরণ বললো, সেটা আমি জানতে পারলাম না। কিন্তু সেটা জানা আমার অধিকার ছিল,” তিনি বলেন।

এই বিষয়ে মঙ্গলবার রাতে রফিকুল বাসার বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, ”আমার যে বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে, তা ঠিক না। আমি যে প্রশ্নটি করেছিলাম, তা ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।”

মি. বাসার জানিয়েছেন, তাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে। অফিস এখন এটি নিয়ে তদন্ত করছে।

উনি এর বাইরে আর কিছু বলতে রাজি হননি।

তবে মিজানুর রহমানের সাথে বিবিসি বাংলার পক্ষ থেকে চেষ্টা করা হলেও তাদের সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

পাঁচই অগাস্টের পটপরিবর্তনের পরে এর আগেও অভ্যুত্থানে অংশ নেয়া নেতা-কর্মীদের চাপে প্রেসক্লাব ও বিভিন্ন গণমাধ্যমে পরিবর্তনের অভিযোগ উঠেছে।

বিভিন্ন গণমাধ্যমে তাদের চাপের কারণে কর্মরতদের পরিবর্তন, ছাটাই বা পরিচালনায় পরিবর্তনের ঘটনা ঘটেছে।

বিশেষ করে গত বছরের ডিসেম্বর মাসে সময় টেলিভিশনে কর্মরত পাঁচ গণমাধ্যমকর্মীর একসঙ্গে চাকরি যাওয়ার ঘটনায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একজন নেতার সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ সামনে আসে।