Source : BBC NEWS

ছবির উৎস, Getty Images
৬ ঘন্টা আগে
মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান সাত কার্যদিবসের মধ্যে ট্রাইব্যুনালে হাজির না হলে তাদের অনুপস্থিতিতেই বিচার শুরু হবে। এ কথা জানিয়েছে প্রসিকিউশন।
আজ সোমবার বিচারপতি গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিষয়টিতে শুনানি ছিল।
এই শুনানির জন্য ট্রাইবুনালে দেওয়া পুলিশের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খানকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি এবং তারা পলাতক অবস্থায় ভারতে অবস্থান করছেন।
ট্রাইব্যুনালে শুনানিতে তাদের বিরুদ্ধে জারি হওয়া গ্রেফতারি পরোয়ানা সংক্রান্ত প্রতিবেদন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে পড়ে শোনান চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম।
মি. ইসলাম ট্রাইব্যুনালকে জানান, পুলিশ শেখ হাসিনার বাসস্থানসহ সম্ভাব্য সকল স্থানে বিভিন্ন সময়ে অভিযান পরিচালনা করেছে। কিন্তু তাদেরকে গ্রেফতার করা যায়নি।
পুলিশের প্রতিবেদনের কথা উল্লেখ করে মি. ইসলাম জানান আসামি শেখ হাসিনা দেশ থেকে পালিয়ে চলে গেছেন। তিনি ভারতে অবস্থান করছেন।
একইসাথে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে গ্রেফতার করা সংক্রান্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তার বাসভবনসহ বিভিন্ন স্থানে পুলিশ অভিযান পরিচালনা করেছে।
ছয়ই অগাস্ট থেকে আসামি মি. কামাল অজ্ঞাতস্থানে পলাতক আছেন বলে ট্রাইব্যুনালকে জানিয়েছেন মি. ইসলাম।
গণমাধ্যমের সংবাদের বরাত দিয়ে চিফ প্রসিকিউটর মি. ইসলাম জানান, দোসরা অক্টোবর আসামি ভারতে পালিয়ে গেছেন।
এদিন এই মামলার গ্রেফতারকৃত একমাত্র আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়।
শুনানির পর ট্রাইব্যুনাল সাতদিনের মধ্যে তাদেরকে হাজির হওয়ার জন্য দুইটি জাতীয় পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ দিয়েছে। এ সময়ের মধ্যে ট্রাইব্যুনালে হাজির না হলে তাদের অনুপস্থিতিতেই বিচার শুরু হবে।

ছবির উৎস, Getty Images
শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে জুলাই- অগাস্টে আন্দোলনে মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলার পরবর্তী শুনানি ২৪ শে জুন।
সেদিন আসামিরা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হাজির না হলে আইন অনুযায়ী তাদের অনুপস্থিতিতে বিচার কাজ শুরু করা হবে বলে জানিয়েছেন চিফ প্রসিউটর তাজুল ইসলাম।
আদেশের পর এক সংবাদ সম্মেলনে মি. ইসলাম বলেন, ” পুলিশ রিপোর্ট দিয়েছেন যে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং পত্রপত্রিকার রিপোর্ট থেকে তারা জানতে পেরেছেন যে আসামিদ্বয় গ্রেফতার এড়ানোর জন্য বর্তমানে ভারতে পলাতক অবস্থায় আছেন।”
তাদেরকে পরবর্তীতে গ্রেফতার করা সম্ভব হলে ট্রাইব্যুনালে সোপর্দ করা হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
তবে ট্রাইব্যুনালে নির্দেশ অনুযায়ী সংবাদপত্রের বিজ্ঞপ্তির পরও তারা এক সপ্তাহের মধ্যে হাজির না হলে তাদের অনুপস্থিতিতেই বিচার শুরু হবে।
মি. ইসলাম বলেন, ” পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পরেও যদি আসামিরা আদালতে উপস্থিত না হন তাহলে আদালত তাদের অনুপস্থিতিতেই বিচারের রাস্তায় অগ্রসর হবেন।”
” তারা যদি এই সময়ের মধ্যে উপস্থিত না হন তাহলে আদালত আইনানুযায়ীই পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহণ করবেন এবং তাদের অনুপস্থিতিতেই বিচার কার্য পরিচালিত হবে ” বলেন মি. ইসলাম।
এর আগে ভোরে ট্রাইব্যুনালের শিশু একাডেমি সংলগ্ন ফটকের সামনে একটি ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। পরে পুলিশ জানিয়েছে, আরেকটি ককটেল অবিস্ফোরিত অবস্থায় পাওয়া গেছে।
এ ঘটনায় আইনী প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
গত ১২ই মে জুলাই – অগাস্টের আন্দোলনে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগের মামলায় শেখ হাসিনাসহ তিন জনের বিরুদ্ধে পাঁচটি অভিযোগ আনে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা।
ওইদিন চিফ প্রসিকিউটর বরাবর এই অভিযোগের তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয় ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা।
শেখ হাসিনা ” মাস্টারমাইন্ড, হুকুমদাতা ও সুপিরিয়র কমান্ডার ” হিসেবে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংগঠিত করেছেন বলে তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
যাচাই-বাছাই শেষে গত পহেলা জুন শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দাখিল করে প্রসিকিউশন।
পরে তা আমলে নিয়ে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খানের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়।
একইসাথে গ্রেফতারকৃত সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ মামুনকে এ মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়।

ছবির উৎস, TANVEE/BBC
১৬ই জুলাই থেকে পাঁচই অগাস্ট পর্যন্ত সারাদেশে ১৪ শ ছাত্র – জনতাকে হত্যা এবং ২৫ হাজার মানুষকে আহত করার দায় শেখ হাসিনার বলে অভিযোগে উল্লেখ করেছেন চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম।
মি. ইসলাম সেদিন ট্রাইব্যুনালকে জানিয়েছেন “এই বিচার কেবল অতীতের প্রতিশোধ নয়। ভবিষ্যতের জন্য প্রতিজ্ঞা। ”
নিহতদের তালিকা ট্রাইব্যুনালে দাখিল করেছে প্রসিকিউশন।
শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের আট হাজার ৭৪৭ পৃষ্ঠার ডকুমেন্ট দাখিল করা হয়েছে।
এছাড়া অডিও, ভিডিও, গণমাধ্যমের প্রতিবেদনও দাখিল করেছে প্রসিকিউশন। এ মামলায় ৮১ জন সাক্ষ্য দেবেন বলে ট্রাইব্যুনালকে জানিয়েছেন মি. ইসলাম।
শেখ হাসিনার নির্দেশ, উসকানি, প্ররোচনায় হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগ।
শেখ হাসিনার নির্দেশে আন্দোলন দমনে মরনঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করার প্রমাণ মিলেছে বলেও সেদিন ট্রাইব্যুনালকে জানিয়েছিল প্রসিকিউশন।
গত বছরের পাঁচই অগাস্ট গণবিক্ষোভের মুখে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন করা হয়।
পুনর্গঠিত ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর নিয়োগ পান জামায়াতে ইসলামী সমর্থিত আইনজীবী এবং একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের সময়ে ট্রাইব্যুনালে জামায়াত নেতাদের আইনজীবী হিসেবে থাকা তাজুল ইসলাম।
পুনর্গঠিত ট্রাইব্যুনালে গণ-অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে প্রথম মামলাটি হয় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে।
এই মামলা ছাড়াও শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা রয়েছে।
যার মধ্যে আওয়ামী লীগ শাসনামলের সাড়ে ১৫ বছরে গুম – খুনের ঘটনায় করা মামলা। এতে তাকে আসামি করা হয়েছে।
এছাড়া ২০১৩ সালে রাজধানীর মতিঝিল শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ডের অভিযোগে করা হয়েছে আরেকটি মামলা।