Home LATEST NEWS bangla সর্বশেষ সংবাদ ‘ভারতে দাঙ্গা লাগাতে চেয়েছিল পাকিস্তান’- জম্মু-কাশ্মীর সফরে গিয়ে বলেছেন নরেন্দ্র মোদী

‘ভারতে দাঙ্গা লাগাতে চেয়েছিল পাকিস্তান’- জম্মু-কাশ্মীর সফরে গিয়ে বলেছেন নরেন্দ্র মোদী

5
0

Source : BBC NEWS

কাটরার অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী

ছবির উৎস, Narendra Modi/Facebook

এক ঘন্টা আগে

ভারতে ‘দাঙ্গা’ লাগাতে চেয়েছিল পাকিস্তান, কিন্তু জম্মু ও কাশ্মীরের জনতা যেভাবে রুখে দাঁড়িয়েছেন এবং ‘সন্ত্রাসীদের’ যোগ্য জবাব দিয়েছেন। শুক্রবার জম্মু-কাশ্মীর সফরে গিয়ে এমনটাই বলেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।

“পাকিস্তান মানবতারই বিরোধী নয়, কাশ্মীরিয়তেরও বিরোধী” বলে মন্তব্য করেন তিনি।

‘কাশ্মীরিয়ত’ বলতে বোঝায় ভারত-শাসিত কাশ্মীরে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি এবং ধর্মীয় সমন্বয়ের শতাব্দী প্রাচীন ঐতিহ্যকে।

সেই ঐতিহ্যকেই আঘাত করেছে পাকিস্তান–– অভিযোগ করেছেন প্রধানমন্ত্রী মোদী।

গত ২২শে এপ্রিল পহেলগামে পর্যটকদের ওপর হামলার পর এই প্রথমবার জম্মু-কাশ্মীর সফরে গেলেন তিনি। গত ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারত (ছয় ও সাতই মে-র মধ্যবর্তী রাতে) যে সাম্প্রতিক সামরিক পদক্ষেপ নিয়েছিল, তারও ঠিক এক মাস পূর্ণ হয়েছে আজ।

প্রধানমন্ত্রীর শুক্রবারের এই কর্মসূচি চন্দ্রভাগা নদীর ওপরে তৈরি হওয়া বিশ্বের সর্বোচ্চ রেলসেতুর উদ্বোধন, বন্দে ভারত রেল উদ্বোধনসহ একাধিক উন্নয়নমূলক প্রকল্পের সূচনার জন্য। কিন্তু ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা এবং যুদ্ধ বিরতির পরও দুই দেশের মধ্যে চলমান ‘বাকযুদ্ধের’ আবহে তার এই সফরের দিকে নজর ছিল অনেকেরই।

আরও পড়তে পারেন
পাকিস্তানের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ তুলেছেন প্রধানমন্ত্রী মোদী

ছবির উৎস, Narendra Modi/Facebook

কী বলেছেন প্রধানমন্ত্রী মোদী?

জম্মু-কাশ্মীরের কাটরার অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন জম্মু ও কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আব্দুল্লাহ, এবং কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণবসহ আরও অনেকে। ওই সভায় প্রধানমন্ত্রী অভিযোগ তোলেন, পর্যটনশিল্পকে ঘিরে কাশ্মীরের উন্নতিকে নিশানা করতেই পাকিস্তান হামলা চালিয়েছিল।

তিনি বলেছেন, “পর্যটন থেকে রোজগার হয়। পর্যটন মানুষকে জুড়েও রাখে। কিন্তু দুর্ভাগ্য আমাদের পড়শি দেশ মানবতার বিরোধী, এই মিলমিশের বিরোধী এবং পর্যটনেরও বিরোধী।”

“তারা এমন একটা দেশ যারা দরিদ্র মানুষের রুজি রোজগারেরও বিরুদ্ধে। পহেলগামে ২২ এপ্রিল যা হয়েছে এটা তারই উদাহরণ। পাকিস্তান পহেলগামে মানবতা এবং কাশ্মীরিয়ত দুয়েরই বিরোধী।”

পহেলগাম হামলার সময় অভিযোগ উঠেছিল, পর্যটকদের ধর্ম জিজ্ঞাসা করেছিল হামলাকারীরা। সেই অভিযোগের দিকে ইঙ্গিত করে শুক্রবার প্রধানমন্ত্রী বলেন, “তাদের (পাকিস্তানের) উদ্দেশ্য ছিল ভারতে দাঙ্গা লাগানো। তাদের উদ্দেশ্য ছিল কাশ্মীরের দরিদ্র মানুষের রুজিরোজগারের পথ বন্ধ করা।”

“তাই তারা পর্যটকদের ওপর হামলা করে- সেই পর্যটন যা গত চার-পাঁচ বছর ধরে ক্রমাগত বাড়ছিল। গত কয়েক বছরে রেকর্ড সংখ্যক পর্যটক এখানে এসেছেন।”

“এর উপর ভিত্তি করেই এখানকার দরিদ্র মানুষের সংসার চলে। কেউ কেউ ঘোড়া চালান, কেউ পোর্টার, কেউ গাইড, কেউবা গেস্ট হাউজ চালান- এদের সবাইকে ধ্বংস করার ষড়যন্ত্র ছিল পাকিস্তানের।”

প্রসঙ্গত, পহেলগাম হামলায় নিহতদের মধ্যে একমাত্র কাশ্মীরি ব্যক্তি ছিলেন সৈয়দ আদিল হুসেন শাহ। ঘোড়ায় সওয়ার পর্যটকদের বিভিন্ন জায়গা ঘুরিয়ে দেখাতেন তিনি।

এই কাশ্মীরি যুবকের প্রসঙ্গও উঠে আসে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে। তিনি বলেন, “সন্ত্রাসীদের সামনে রুখে দাঁড়ানো আদিলও তো ওখানে পরিশ্রম করে রোজগার করতেই গিয়েছিল, যাতে সে নিজের পরিবারের ভরণপোষণ করতে পারে। সন্ত্রাসীরা আদিলকেও মেরে ফেলেছে।”

তবে পাকিস্তানকে জম্মু-কাশ্মীরের বাসিন্দারা যোগ্য জবাব দিয়েছেন বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।

তার কথায়, “পাকিস্তানের এই ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে জম্মু-কাশ্মীরের মানুষ যেভাবে দাঁড়িয়েছেন, তারা যে শক্তি দেখিয়েছেন তাতে পাকিস্তানই নয়, বিশ্বের সমস্ত সন্ত্রাসী মানসিকতা সম্পন্নদের একটা কড়া বার্তা গিয়েছে। জম্মু-কাশ্মীরের যুবশক্তি সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধেযোগ্য জবাব দেওয়ার জন্য মনস্থির করে ফেলেছে।”

প্রসঙ্গত, সাম্প্রতিক সময়ে শাহবাজ শরিফ, ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনির, পাকিস্তান পিপলস পার্টির বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি বারেবারে দাবি করেছেন, কাশ্মীরের পরিস্থিতির জন্য ‘দায়ী’ ভারত সরকার।

দিন কয়েক আগে, ভারতের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযানকে ‘রাজনৈতিক হাতিয়ার’ করে মুসলিম সম্প্রদায়কে নিশানা করার অভিযোগ তুলেছিলেন বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি। বিদেশ সফরে গিয়ে তিনি এও বলেছিলেন পাকিস্তান শান্তির পক্ষে যদিও ভারত তা চায় না।

কারও নাম না করেই শুক্রবারের অনুষ্ঠান থেকে পাকিস্তানকে পাল্টা জবাব দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী মোদী।

“এটা সেই সন্ত্রাসবাদ যা এই উপত্যকায় স্কুল জ্বালিয়ে দিয়েছে এবং তাতে তারা শুধু ইমারতই নষ্ট করেনি, দুটো প্রজন্মের ভবিষ্যতকেও নষ্ট করে দিয়েছিল। হাসপাতালও নষ্ট করেছে তারা।”

“এখানকার বাসিন্দারা যে নিজের পছন্দের প্রতিনিধিদের বাছবেন তাও অসম্ভব হয়ে পড়েছিল এই সন্ত্রাসের কারণেই। তারা এত কিছু নষ্ট হতে দেখেছেন বছরের পর বছর ধরে যে তারা স্বপ্ন দেখাও ছেড়ে দিয়েছিলেন। সন্ত্রাসবাদকেই নিজেদের ভাগ্য বলে মেনে নিয়েছিলেন। জম্মু-কাশ্মীরকে সেই পরিস্থিতি থেকে বের করে আনা দরকার ছিল।”

পাকিস্তান অভিযোগ তুলেছিল, ভারত তাদের বেসামরিক নাগরিকদের এবং ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানকে নিশানা করেছে। যদিও ভারত তা আগেই খারিজ করেছে এবং পাল্টা অভিযোগ তুলেছে পাকিস্তানের পক্ষ থেকে সীমান্তবর্তী গ্রামের বেসামরিক মানুষকে নিশানা করা হয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং হাসপাতালকে লক্ষ্য করে ড্রোন হামলার চেষ্টা করেছে পাকিস্তান।

ছয়ই ও সাতই মের মধ্যবর্তী রাতে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযানের প্রসঙ্গ টেনে নরেন্দ্র মোদী বলেন, “পাকিস্তানি সেনাবাহিনী এবং সেখানকার সন্ত্রাসীরা কখনো ভাবেনি কয়েকশো কিলোমিটার এতটা ভেতরে গিয়ে ভারত আঘাত হামলা করতে পারবে। বছরের পর বছর ধরে তারা সন্ত্রাসের যে ঘাঁটি গড়ে তুলেছিল তা মিনিটে ধুলিস্যাৎ হয়ে যায়।”

শুক্রবারের অনুষ্ঠানে নরেন্দ্র মোদী এবং ওমর আব্দুল্লাহ

ছবির উৎস, Narendra Modi/Facebook

বিবিসি বাংলায় অন্যান্য খবর

সফরের গুরুত্ব

নরেন্দ্র মোদীর এই সফরের দিকে নজর ছিল ওয়াকিবহাল মহলের। তার একটা কারণ যেমন পহেলগাম হামলার পর এটাই তার প্রথম সফর তেমনই, সাম্প্রতিক সময়ে কাশ্মীরকে কেন্দ্র করে পাকিস্তানের তরফ থেকে আসা তির্যক মন্তব্যও।

পহেলগাম হামলার আগে আসিম মুনির এক অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, “কাশ্মীরের ভাইদের আত্মবলিদান তারা ভুলবে না”।

তিনি বলেছিলেন, “আপনাদের সন্তানদের পাকিস্তানের কথা বলতে হবে যাতে তারা আমাদের পূর্বপুরুষদের চিন্তা-ভাবনাকে ভুলে না যায়, ভুলে না যায় যে আমরা হিন্দুদের থেকে আলাদা। আমাদের ধর্ম, রীতিনীতি, ঐতিহ্য, চিন্তা-ভাবনা, উদ্দেশ্য সবই আলাদা।”

এই মন্তব্যকে ঘিরে বিতর্কও বাঁধে। তার কয়েকদিনের মধ্যেই পহেলগামে হামলার ঘটনা ঘটে।

এরপর পাকিস্তানের বিরুদ্ধে আঙুল তুলে সিন্ধু জল বণ্টন চুক্তি স্থগিতসহ একাধিক কূটনৈতিক পদক্ষেপ নিয়েছিল দিল্লি। পাল্টা ইসলামাবাদও পদক্ষেপ নেয়।

এরপর ছয় ও সাতই মে’র মধ্যবর্তী রাতে পাকিস্তানের ভেতরে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ভারত। জানানো হয়, পাকিস্তানের ভেতরে থাকা ‘সন্ত্রাসী ঘাঁটি’কেই নিশানা করা হয়েছে।

পাকিস্তানও পাল্টা সামরিক প্রতিক্রিয়া জানায়; ফলত দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা চরমে গিয়ে থেকে এবং আন্তর্জাতিক মহল উদ্বেগ প্রকাশ করে।

শেষপর্যন্ত ১০ই মে যুদ্ধবিরতি হয়। সেই নিয়েও অবশ্য কম বিতর্ক হয়নি হয়নি।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রথম জানান, যুক্তরাষ্ট্র দুই দেশের মধ্যে মধ্যস্ততা করেছে। পাকিস্তান তার এই দাবিতে সম্মতি জানালেও ভারত জানায়, যুদ্ধবিরতি নিয়ে দুই দেশের ডিজিএমও-র কথা হয়েছে। শুধুমাত্র দুই দেশই সরাসরি এর সঙ্গে যুক্ত ছিল।

অন্যদিকে, মার্কিন প্রেসিডেন্টের এই দাবি ছিল এই যুদ্ধবিরতির আলোচনায় ‘ট্রেড টক’ বা ‘বাণিজ্য নীতি সংক্রান্ত’ আলোচনা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে, সেই দাবিকেও খারিজ করেছে ভারত।

পহেলগাম হামলার পর ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে যে সাম্প্রতিক উত্তেজনা দেখা গিয়েছিল, সেই বিষয়ে আন্তর্জাতিক স্তরে নিজেদের দেশের অবস্থান স্পষ্ট করতে সচেষ্ট হয়েছে দুই দেশ।

ভারত প্রথমে আন্তর্জাতিক স্তরে নিজেদের প্রতিনিধি দল পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়। পাকিস্তানও একই কথা ঘোষণা করে। সেই মতো দুই দেশই বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এবং জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে নিজেদের প্রতিনিধি পাঠিয়েছে।

ভারত আন্তর্জাতিক মহলের কাছে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ‘সন্ত্রাসী কার্যকলাপে’ ইন্ধন জোগানোর অভিযোগ তুলেছে। পাকিস্তান পাল্টা অভিযোগ তুলেছে ভারত বিনা প্ররোচনায় হামলা চালিয়েছে।

পাকিস্তানের বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারিসহ বিভিন্ন পাকিস্তানি নেতারা কাশ্মীরের পরিস্থিতিতে ভারতের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন, নরেন্দ্র মোদীর সমালোচনাও করেছেন।

সেই আবহে পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রীর এই জম্মু-কাশ্মীর সফর বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছিল।