Source : BBC NEWS

ছবির উৎস, PRABIR BISHWAS
২ ঘন্টা আগে
ব্যবসার সম্ভাবনা দেখতে বাংলাদেশে এসে জিম্মি হয়ে পড়া তিন শ্রীলঙ্কান নাগরিককে অভিযান চালিয়ে উদ্ধার করেছে পুলিশ। তারা আজ নিজ দেশে ফিরে গেছেন বলে একজন পুলিশ কর্মকর্তা বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছেন।
দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলা বাগেরহাটের একটি এলাকা থেকে বুধবার দিবাগত রাতে তাদের উদ্ধার করা হয়।
ওই তিন শ্রীলঙ্কান হলেন মালাভি পাথিরানা, তার স্ত্রী পাথিরানা, থুপ্পি মুদিইয়ান সেল্যাগ নীল।
বৃহস্পতিবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ পুলিশের খুলনা রেঞ্জের উপ মহাপরিদর্শক বা ডিআইজি মো. রেজাউল হক জানান, বাগেরহাটের মোল্লাহাট এলাকার শহিদুল শেখ নামে এক ব্যক্তির আমন্ত্রণে তারা বাংলাদেশে এসেছিলেন।
বাগেরহাটের পুলিশ সুপার মো. তৌহিদুল আরিফ বিবিসি বাংলাকে জানান, তারা অ্যাকুরিয়াম ফিসের ব্যবসার সঙ্গে জড়িত বলে জানা গেছে।
“ফরিদপুরে অ্যাকুরিয়াম ফিস উৎপাদনের প্রতিষ্ঠান দেখানোর কথা বলে তাদের আমন্ত্রণ জানান শহিদুল শেখ,” বলেন মি. আরিফ।
গত ২২শে এপ্রিল ঢাকায় পৌঁছান তারা। রাতে তাদের বাগেরহাটে নিয়ে যাওয়া হয়।
ডিআইজি মি. হক জানান, “বাগেরহাটে এনে তাদের কাছে পাঁচ কোটি টাকা মুক্তিপণ চাওয়া হয়। তারা এতো টাকা দিতে পারবে না বলে জানায়, তখন অপহরণকারীরা শ্রীলঙ্কায় তাদের (জিম্মিদের) পরিবারের কাছে ফোন করে থেকে মুক্তিপণ দাবি করেন। বাংলাদেশের একটি নম্বর থেকে এ মুক্তিপণ দাবি করা হয়।”
“আড়াই কোটি টাকার মুক্তিপণ প্রদানে রাজি হওয়ায় তাদের মধ্যে মৌখিক চুক্তি হয়,” যোগ করেন তিনি।
পরে পরিবার থেকে হাইকমিশনের মারফতে বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষকে জানানো হলে পুলিশ অভিযান চালায়।
এর মধ্যে শ্রীলঙ্কা থেকে ব্যাংকের মাধ্যমে টাকা আনার চেষ্টা করা হয় বলেও জানান মি. হক।
“তারা চারটা ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নাম্বার পাঠিয়েছিল জিম্মিদের পরিবারকে,” যোগ করেন তিনি।
এ ঘটনায় চার জনকে আটক করে পুলিশ। তারা হলেন – কাজী এমদাদ হোসেন, শহিদুল শেখ ও জনি শেখ এবং এস এম সামসুল আলম।
শুক্রবার বিবিসি বাংলাকে পুলিশের উপ মহাপরিদর্শক রেজাউল হক জানান, এই ঘটনায় একটি মামলা হয়েছে।
“আটককৃতদের মধ্যে তিনজন জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় একটি জবানবন্দি দিয়েছেন,” বলেন তিনি।

ছবির উৎস, PRABIR BISHWAS
পুলিশ বলছে, পাথিরানাদের সঙ্গে এমদাদ ও শহীদুলের পরিচয় হয়েছিল সামাজিক মাধ্যমে। সেই পরিচয়ের সূত্র ধরেই তাদের ব্যবসার প্রলোভন দেখিয়ে বাংলাদেশে আসার আমন্ত্রণ জানানো হয়।
তিন শ্রীলঙ্কান নাগরিককে মঙ্গলবার রাতে কিংবা ভোরে বাগেরহাটের মোল্লাহাটে নিয়ে যাওয়া হয়।
পুলিশের সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, শ্রীলঙ্কায় পরিবারের সদস্যদের পক্ষ থেকে হাইকমিশনে জানানোর পর তারা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে এ জিম্মি পরিস্থিতির ব্যাপারে অবগত করে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে।
এরপর পুলিশ হেড কোয়ার্টার হয়ে স্থানীয় পর্যায়ে খবর পৌঁছায় বুধবার সন্ধ্যার পর।
“রাত নয়টার দিকে আমরা মিসিং এর খবর পাই,” বিবিসি বাংলাকে বলেন বাগেরহাটের পুলিশ সুপার তৌহিদুল আরিফ।
তবে, পুলিশের কাছে প্রাথমিকভাবে দুই জনের ‘অপহরণের’ তথ্য ছিল।
প্রযুক্তির সাহায্যে মোল্লাহাট উপজেলার দক্ষিণ আমবাড়ি এলাকায় তাদের অবস্থানের ব্যাপারে নিশ্চিত হয় আইনশৃঙ্খলবাহিনী।
কাজী এমদাদ হোসেনের বাড়িতে তাদের রাখা হয়েছিল বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়েছে।
সেই বাড়ি ঘেরাও করে অভিযান চালিয়ে তিন শ্রীলঙ্কান নাগরিককে উদ্ধার ও তিন বাংলাদেশিকে আটক করা হয়।
উদ্ধারের পর তাদের খুলনায় নিয়ে যাওয়া হয়।
সেখানে তাদের সঙ্গে নিয়ে সংবাদমাধ্যমকে ব্রিফ করেন পুলিশের খুলনা রেঞ্জের ডিআইজি।
উদ্ধারকৃতরা সুস্থ আছেন বলে তিনি জানান।
সংবাদ সম্মেলনে মালাভি পাথিরানা বলেন, খুব অল্প কিছু খারাপ লোকের জন্য বাংলাদেশের মানুষের বিরুদ্ধে কোনো নেতিবাচক ধারণা পোষণ করতে চান না তিনি।
সেখান থেকে ঢাকায় ফিরে শুক্রবার দুপুরে দেশের উদ্দেশে রওনা হন শ্রীলঙ্কান নাগরিকরা।