Home LATEST NEWS bangla সর্বশেষ সংবাদ প্রধান উপদেষ্টার নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন জামায়াতের

প্রধান উপদেষ্টার নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন জামায়াতের

4
0

Source : BBC NEWS

ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের আলোচনা

ছবির উৎস, PID

৭ মিনিট আগে

বিএনপি, এনসিপি, ইসলামী আন্দোলন, নাগরিক ঐক্য, গণ অধিকার পরিষদসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল অংশ নিলেও মঙ্গলবার ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনায় অংশ নেয়নি বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, যা নিয়ে তৈরি হয়েছে নানা আলোচনা।

গত ১৩ জুন লন্ডনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার বৈঠকের পর যৌথ বিবৃতি এবং যৌথ সংবাদ সম্মেলনের পর এক বিবৃতি দিয়েছিল জামায়াতে ইসলামী। যেখানে প্রধান উপদেষ্টার নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল দলটি।

এমন প্রেক্ষাপটে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন আয়োজিত মঙ্গলবারের সভায় অংশ নেয়া থেকে বিরত থাকে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী।

দলটির কয়েকজন শীর্ষ নেতা বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছেন, প্রধান উপদেষ্টার নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে বলেই এমন অবস্থান নিয়েছেন তারা।

জামায়াত নেতারা জানান, মঙ্গলবার অংশ না নিলেও বুধবারের আলোচনায় অংশ নেবেন কিনা সে বিষয়ে তারা বিবেচনা করবেন।

সরকারের পক্ষ থেকে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে বলেও তারা দাবি করেন।

“আমরা আশা করি সরকারের উদ্যোগটা সফল হোক এবং আমরা যেন যেতে পারি কালকে সেরকম একটা পরিস্থিতি তৈরি হোক,” বিবিসি বাংলাকে জানান বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের।

এদিকে, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বুধবারের আলোচনায় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী অংশ নেবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।

মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক সংবাদ সম্মেলনে এই কথা বলেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের আলোচনায় বিভিন্ন দলের নেতারা

জামায়াত নেতারা যা বলছেন

চলতি মাসের ১৭, ১৮ ও ১৯ তারিখে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংস্কার কমিশনগুলোর দেয়া প্রস্তাব নিয়ে দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনার বিষয়টি আগেই জানানো হয়েছিল জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের পক্ষ থেকে।

সেই অনুযায়ী, মঙ্গলবার দুপুর পৌনে ১২টার দিকে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমির দোয়েল হলে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের আলোচনা শুরু হয়।

আজকের আলোচনায় ছিল সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ, দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট সংসদ (নিম্নকক্ষ ও উচ্চকক্ষ), প্রধান বিচারপতির নিয়োগ প্রক্রিয়াসহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজ, সদস্য আব্দুল মুয়ীদ চৌধুরী, সফর রাজ হোসেন, বদিউল আলম মজুমদার, ইফতেখারুজ্জামান এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা সেখানে অংশ নেন।

তবে এদিন উপস্থিত ছিলেন না বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কোনো প্রতিনিধি।

ঐকমত্য কমিশনের আলোচনায় অংশ না নেয়ার কারণ হিসেবে সম্প্রতি লন্ডনে অনুষ্ঠিত প্রধান উপদেষ্টা ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের বৈঠকের বিষয়টিই সমানে আনছেন জামায়াত নেতারা, যা নিয়ে গত ১৪ জুন বিবৃতিও দিয়েছিল দলটি।

সেই বিবৃতিতে প্রধান উপদেষ্টার নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী।

দলটির সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার মঙ্গলবার বিবিসি বাংলাকে বলেন, “আমাদের বিবৃতিতেই পুরো বক্তব্য এসে গেছে। প্রধান উপদেষ্টার নিরপেক্ষতা নিয়েই প্রশ্নটা উঠেছে জাতির সামনে।”

বিবৃতির উল্লেখ করে তিনি বলেন, “প্রধান উপদেষ্টা নিরপেক্ষ থাকতে পারেননি। ফলে উনি‌ই (প্রধান উপদেষ্টা) বলুন নিরপেক্ষ উনি কীভাবে থাকবেন এবং আমরা যে আস্থা রেখেছি একটা নিরপেক্ষ নির্বাচন তার নেতৃত্বে হবে, এটা উনার ভূমিকা দিয়েই প্রমাণ করতে হবে,” বলছিলেন মি. পরওয়ার।

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর লোগো

ছবির উৎস, Jamaat-e-Islami Facebook

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বৈঠকে শুরু থেকেই জামায়াতে ইসলামীর প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দিয়ে আসছিলেন দলটির নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের আলোচনায় অংশ না নেয়া প্রসঙ্গে তিনি বিবিসি বাংলাকে বলেন, “আমরা তো আজ যাইনি। আমাদের সাথে গভর্নমেন্টের পক্ষ থেকে দফায় দফায় কথা বলা হচ্ছে, আমরা কাল যাবো কিনা সেটি বিবেচনা করবো।”

“কাল (বুধবার) যাবো না বলছি না, যাবো সেটাও বলছি না। তবে আমরা আশা করি উনারা যেভাবে যোগাযোগ বা কথাবার্তা বলছেন, কিছু জিনিস ব্যাখ্যা করছেন তাতে আমরা কাল যেতেও পারি,” জানান মি. তাহের।

ঐকমত্য কমিশনের আলোচনায় অংশ না নেয়ার কারণ হিসেবে জামায়াতের আরেক নেতা, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আজাদ বিবিসি বাংলাকে বলেন, “আমরা আমাদের বিবৃতিতে আগেই বলেছি। সেইম কজ। যেহেতু আমরা একটা স্ট্যান্ড নিয়েছি, তারই একটা পার্ট আরকি।”

সরকারের সঙ্গে কোনো আলোচনা হয়েছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে মি. আজাদ বলেন, “আলোচনা তো সবসময়ই চলছে, আলোচনা তো আর বন্ধ নাই। এটি আমাদের আজকের দিনের জন্য একটা অবস্থান।”

জামায়াতের অংশ না নেয়া প্রসঙ্গে সরকার যা বলছে

রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনার বিষয়ে মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে কথা বলেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। সেখানেও উঠে আসে জামায়াতে ইসলামীর আলোচনায় অংশ না নেয়ার বিষয়টি।

গণমাধ্যমের প্রশ্নে জবাবে তিনি জানান, “আমরা তো আশা করছি কাল উনারা জয়েন করবেন। অভিয়াসলি আজ যে ডিসকাশনগুলো ছিল কালকে উনারা সেই জায়গা থেকে শুরু করতে পারবেন। এটা এমন কিছু না,” বলেন মি. আলম।

অন্তর্বর্তী সরকারের নিরপেক্ষতার প্রশ্নে শফিকুল আলম বলেন, “জুলাই গণঅভ্যুত্থানে যারা জয়েন করেছে আমরা সবার সাথে সমান। সবাইকে আমরা মনে করি তারা সবাই আমাদের অংশীজন।”

“আমরা আমাদের সর্বোচ্চ নিউট্রালিটি রাখছি, আমরা মনে করি আমাদের কাজে এবং কথায় আমরা সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ,” বলেন মি. আলম।

প্রধান উপদেষ্টার লন্ডন সফরে যৌথ ঘোষণার মাধ্যমে জামায়াতকে উপেক্ষা করা হয়েছে বলেই তারা প্রতিবাদস্বরূপ ঐকমত্য কমিশনের আলোচনায় অংশ নেয়নি, দলটির এমন বক্তব্যে সরকারের অবস্থান জানতে চাইলে মি. আলম বলেন, “এরকম কিছু আমরা জানি না।”

ঐকমত্য কমিশনের আলোচনা পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনেও আসে জামায়াতের অংশ না নেয়ার প্রসঙ্গ। সেখানেও বুধবারের আলোচনায় দলটির অংশ নেয়ার বিষয়ে জানানো হয়।

লন্ডনে তারেক রহমান ও অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস

ছবির উৎস, CA PRESS WING

ইউনূস-তারেক বৈঠকের পর জামায়াতের বিবৃতিতে যা ছিল

গত ১৩ই জুন লন্ডনের একটি হোটেলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে বৈঠক করেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।

বৈঠকের পর যৌথ বিবৃতি দেয়ার পাশাপাশি যৌথ সংবাদ সম্মেলনও করেছিল দুই পক্ষ।

যেখানে সরকারের পক্ষ থেকে অংশ নেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান এবং বিএনপির হয়ে কথা বলেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।

সংবাদ সম্মেলন ও যৌথ বিবৃতিতে জানানো হয়, তারেক রহমানের প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে প্রধান উপদেষ্টা জানিয়েছেন, “সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা গেলে ২০২৬ সালের রমজান শুরু হওয়ার আগের সপ্তাহেও নির্বাচন আয়োজন করা যেতে পারে”।

সেক্ষেত্রে অবশ্য, “সেই সময়ের মধ্যে সংস্কার ও বিচারের বিষয়ে পর্যাপ্ত অগ্রগতি‌ অর্জন করা প্রয়োজন হবে” বলেও যৌথ বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়।

এর পরদিনই এই বৈঠক নিয়ে বিবৃতি দেয় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী।

তারেক রহমানের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠক শেষে বিদেশে বসে যৌথ সংবাদ সম্মেলনকে “বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতির ব্যত্যয়” বলে উল্লেখ করে দলটি।

একটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠকের পর বিদেশের মাটিতে যৌথ সংবাদ সম্মেলন করায় “আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য হওয়ার বিষয়ে জনগণের মধ্যে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে” বলেও দাবি করে জামায়াতে ইসলামী।

বিবৃতিতে বলা হয়, “এর মাধ্যমে তিনি একটি দলের প্রতি বিশেষ অনুরাগ প্রকাশ করেছেন”।

সেখানে প্রশ্ন তোলা হয়, প্রধান উপদেষ্টার নিরপেক্ষতা নিয়েও।