Home LATEST NEWS bangla সর্বশেষ সংবাদ পৃথিবীতে শতবর্ষী মানুষের সংখ্যা কীভাবে বাড়ছে?

পৃথিবীতে শতবর্ষী মানুষের সংখ্যা কীভাবে বাড়ছে?

2
0

Source : BBC NEWS

সাম্প্রতিক বছরগুলোয় শতর্বষী মানুষের সংখ্যা বেড়েই চলেছে

ছবির উৎস, Getty Images

৩ ঘন্টা আগে

হোয়াও মারিনহো নেতোর জন্য বরাবরের মতোই ২০২৪ সালের নভেম্বরের শেষ সপ্তাহটাও সাদামাটা হওয়ার কথা ছিল।

ব্রাজিলের উত্তর-পূর্বে আপুইয়ারেস শহরে একটি বৃদ্ধাশ্রমে গত ১০ বছর ধরে একই রকম দিন কাটছিল তার।

তবে, এর মধ্যেই হঠাৎ করে খবরের শিরোনাম হয়ে ওঠেন তিনি।

হঠাৎ একদিন ১১২ বছর বয়সী মি. নেতোকে ‘বিশ্বের সবচেয়ে প্রবীণ পুরুষ’ উল্লেখ করে খবর প্রকাশিত হচ্ছিলো।

যে নার্স তাকে এসব খবরের তথ্য জানান তার সঙ্গে মজার ছলে নেতো বলছিলেন, “একইসঙ্গে আমি বিশ্বের সবচেয়ে সুদর্শন পুরুষও।”

গত ২৫ নভেম্বর ১১২ বছর বয়সে ব্রিটেনের জন টিনিসউডের মৃত্যুর পর গিনেজ ওয়ার্ল্ড বুক অব রেকর্ডস মি. নেতোকে সবচেয়ে প্রবীণ পুরুষের তকমা দেয়।

কিন্তু মজার ব্যাপার হচ্ছে, বিশ্বের সবচেয়ে বেশি বয়সী মানুষের খেতাবটি এখন আরেকজনের কাছে।

১১৬ বছর বয়সী জাপানি নারী তোমিকো ইতুকা গত অগাস্টে নতুন এই রেকর্ড গড়েছেন।

আর আপনারা হয়তো জেনে অবাক হবেন, মি. নেতো বা মিজ. ইতুকার মতো শতবর্ষী মানুষের সংখ্যা বর্তমান পৃথিবীতে বিরল নয়, মানে খুব একটা কম নয়।

বরং এ সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছে।

আরো পড়তে পারেন:
১১২ বছর বয়সী হোয়াও মারিনহো নেতোকে বলা হচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে বয়সী মানুষ, ছবিটি তার ১১০তম জন্মদিনের

ছবির উৎস, Neto family

পৃথিবীতে শতবর্ষী মানুষের সংখ্যা কত?

জতিসংঘের জনসংখ্যা বিভাগের হিসাব অনুযায়ী, ২০২৪ সালে বিশ্বে ১০০ বছরের বেশি বয়সী মানুষের সংখ্যা প্রায় পাঁচ লাখ ৮৮ হাজার।

ধারণা করা হচ্ছে, ২০৩০ সালের মধ্যে শতবর্ষীদের সংখ্যা এক মিলিয়ন অর্থাৎ ১০ লাখের কাছাকাছি পৌঁছে যাবে।

কিন্তু ১৯৯০ সালে শতবর্ষীদের সংখ্যা ছিল ৯২ হাজার।

উন্নত চিকিৎসা ব্যবস্থা, ভালো খাবার, জীবনযাপনের ধরনের মানোন্নয়নের কারণে মানুষের গত আয়ু বাড়ছে।

জাতিসংঘ ১৯৬২ সাল থেকে মানুষের গড় আয়ুর হিসাব রাখা শুরু করে। সে বছর যাদের জন্ম হয় তাদের গড় আয়ু ৫২ বছরের মতো ছিল বলে জানা যাচ্ছে।

ছয় দশক পর বর্তমানে মানুষের গড় আয়ু ৭৩ বছরে দাঁড়িয়েছে। জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞদের ধারণা, ২০৫০ সাল নাগাদ এটা ৭৭ বছরে পৌঁছে যেতে পারে।

জাতিসংঘের হিসাবে, এখন বিশ্বে পাঁচ বছরের কম বয়সী যে পরিমাণ শিশু আছে তার চেয়ে বেশি মানুষ আছে ৬৫ বছরের বেশি বয়সী।

মোদ্দা কথা হলো, ১০০ বছর বাঁচা এখন আর অসম্ভব কোনো বিষয় নয়।

আরো পড়তে পারেন:

সবশেষ ২০২৩ সালে জাতিসংঘের এক হিসাব অনুযায়ী, বিশ্বের মোট জনসংখ্যার শূন্য দশমিক শূন্য শূন্য সাত শতাংশ (০.০০৭%) মানুষের বয়স ১০০ বছরের ওপরে।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, যদিও বেশিরভাগ মানুষের জন্য ১০০ বছরের ঘর ছোঁয়া কঠিন হবে।

২০২৪ সালে ফ্রান্সের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ ডেমোগ্রাফিক স্টাডিসের হিসাবে, ২০২৩ সালে জন্ম নেওয়া ছেলেদের দুই শতাংশ এবং মেয়েদের পাঁচ শতাংশ বছরের হিসাবে তিন অংকের ঘরে পৌঁছাতে পারেন।

জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি

তবে এটাও মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে বেশি বয়স পর্যন্ত বাঁচার সঙ্গে সঙ্গে নানা রকম জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও বাড়ে।

যুক্তরাজ্যের বার্মিংহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষ জীববিজ্ঞানের অধ্যাপক জ্যানেট লর্ড বলছেন, “বেশিদিন বাঁচা আর ভালোভাবে বাঁচা এক নয়।”

তিনি ব্যাখ্যা করছেন, যারা দীর্ঘজীবী হন তাদের মধ্যে পুরুষরা গড়ে জীবনের শেষ ১৬ বছর এবং নারীরা শেষ ১৯ বছরের মতো সময় ডায়াবেটিস, ডিমেনশিয়া বা স্মৃতিভ্রংশের মতো নানা জটিলতায় ভোগেন।

জ্যাঁ কেলমো’র ১২২ তম জন্মদিনের ছবি

ছবির উৎস, Getty Images

শতবর্ষের ওপরে যাওয়ার রহস্য কী?

ফ্রান্সের জ্যাঁ কেলমো ১৯৯৭ সালে ১২২ বছর বয়সে মারা যান।

প্রাতিষ্ঠানিকভাবে তথ্য রেকর্ড শুরুর পর তিনিই একমাত্র মানুষ যিনি ১২০ বছরের বেশি বেঁচে ছিলেন।

১০০ বছর পার করা যদি কঠিন হয়, তবে এর পরের বছরগুলো আরো বেশি কঠিন। শতবর্ষের পরের বয়সকে বলা হচ্ছে ‘সুপার-সেনটেনেরিয়ান’ মানে ‘অতিশতবর্ষী’।

বোস্টন ইউনিভার্সিটির দীর্ঘমেয়াদি এক গবেষণায় দেখা যায়, যুক্তরাষ্ট্রে পাঁচ মিলিয়ন অর্থাৎ ৫০ লাখের মত মানুষের মধ্যে গড়ে কেবল একজনই অতিশতবর্ষী হয় এবং অন্তত ১১০ বছর বাঁচে।

যুক্তরাষ্ট্রের জনশুমারি অনুযায়ী, ২০১০ সালে দেশটিতে ১০০ বছরের বেশি বয়সীদের সংখ্যা যেখানে ৫০ হাজারের মতো ছিল, ২০২০ সালে তা ৮০ হাজার ছাড়িয়ে যায়।

মানুষের বার্ধক্য নিয়ে যে বিজ্ঞানীরা গবেষণা করছেন, তাদের কাছে শতবর্ষীরা আগ্রহের জায়গা দখল করে আছেন।

অধ্যাপক লর্ড বলেন, “দীর্ঘ বার্ধক্যে পৌঁছে যাওয়া মানুষের শরীরে আসলে ঠিক কী ঘটে এ নিয়ে বিজ্ঞানীদের মধ্যে মতভেদ আছে। আমরাও এ বিষয়ে পুরোপুরি নিশ্চিত নই।”

বিবিসি বাংলায় আরো পড়তে পারেন
মানুষের বার্ধক্যের প্রক্রিয়া জানার চেষ্টা করছেন বিজ্ঞানীরা

ছবির উৎস, Getty Images

দীর্ঘজীবনের সঙ্গে সুস্থতার একটি সম্পর্ক রয়েছে বলে ধরে নেওয়া হয়।

ব্রাজিলের মি. নেতোর চোখে কম দেখা ছাড়া আর বিশেষ কোনো শারীরিক জটিলতা নেই। তার যত্নআত্তির দায়িত্বে থাকা নার্স আলেলুইয়া তেইসেইরা বিবিসিকে বলছিলেন, “তাকে কোনো ওষুধপত্র খেতে হচ্ছে না, অথচ তার বয়স ১১২!”

স্বাস্থ্যকর নয় এমন জীবন পদ্ধতি অনুসরণেরও পরও যারা ১০০ পার করে ফেলেন তাদের বিষয়টি বিজ্ঞানীদের বিস্মিত করে।

এক সময় রাখাল হিসেবে জীবনযাপনকারী মি. নেতোর ছেলে আন্তোনিয়ো জানাচ্ছেন, মদ্যপায়ী হলেও তারা বাবার আর কোনো বদভ্যাস ছিল না।

১২২ বছরের জীবনে জ্যাঁ কেলমো ধূমপায়ী ছিলেন এবং অনেক বেশি চকলেট বার খেতেন।

দীর্ঘজীবী হওয়ার প্রক্রিয়াটা কেমন?

২০১১ সালে আমেরিকান জেরিয়াট্রিক সোসাইটির জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখানো হয়, ৯৫ বছর বা এর বেশি বয়সী ৪০০ জনেরও বেশি মার্কিন ইহুদির ওপর গবেষণা চালিয়ে দেখো গেছে, তাদের প্রায় সবারই নানারকম বদভ্যাস ছিল।

তাদের প্রায় ৬০ শতাংশ অতিধূমপায়ী ছিলেন, তাদের প্রায় অর্ধেক সংখ্যক লোক জীবনের বেশিরভা সময় স্থুলতায় আক্রান্ত ছিলেন।

তাদের কেবল তিন শতাংশ ছিলেন শাকাহারী।

ব্যয়াম বা শরীর চর্চার অভ্যাসও ছিল না তাদের অনেকের।

যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটির অফ ব্রাইটনে বার্ধক্য এবং এর সঙ্গে সম্পর্কিত রোগ সংক্রান্ত বিদ্যা বায়োজেরোনটোলজি নিয়ে পড়ান অধ্যাপক রিচার্ড ফেরার।

দীর্ঘজীবনের চেয়েও রোগমুক্ত সুস্থ জীবনের রহস্য জানার ওপর জোর দিচ্ছেন বিজ্ঞানীরা

ছবির উৎস, Getty Images

তিনি বলছেন, “যারা দীর্ঘজীবন পেতে চান তাদের আমরা বলবো শতবর্ষীদের কাছ থেকে জীবনযাপনের পরামর্শ নেবেন না। সহজাতভাবেই তাদের মধ্যে ব্যতিক্রমী কিছু রয়েছে।

কারণ আমরা দীর্ঘজীবী হওয়ার জন্য মানুষকে যা করতে বলি তার পুরোপুরি বিপরীত জীবন কাটিয়েছেন বেশিরভাগ শতবর্ষী।”

বিজ্ঞানীরা ধারণা করছেন, দীর্ঘজীবী হওয়ার সঙ্গে জিনগত বিষয় জড়িত। জীবনজুড়ে আসতে থাকা ঝড়-ঝাপটা তাদের শরীরের ওপর খুব একটা প্রভাব ফেলতে পারেনি।

জিনগত কারণেই তারা অনেক বদভ্যাসের ক্ষতিকর প্রভাবও উৎড়ে যেতে পেরেছেন।

শতবর্ষী মানুষের সংখ্যা বাড়তে থাকায় বিজ্ঞানীরা জানার চেষ্টা করছেন, মানুষের গড় আয়ুও বাড়ছে কিনা।

যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব ওয়াশিংটনের গবেষকরা দাবি করেছেন, এই শতাব্দীতেই হয়তো শতবর্ষী মানুষের আয়ুষ্কাল আরো বাড়বে এবং অনেকেই ১২৫ বা ১৩০ বছর পার করে ফেলবেন।

তবে দীর্ঘজীবনের এই রহস্য ভেদ করতে এখনও আরো অনেক প্রশ্নের উত্তর জানা বাকি।

লন্ডনের কিংস কলেজের এইজিং রিসার্চ বিভাগের পরিচালক ড. রিচার্ড সিয়ো মনে করেন, দীর্ঘজীবনের সঙ্গে জীবনযাপনের মানের সম্পর্কের বিষয়টি জানা খুব জরুরি।

তিনি বলছেন, “কতদিন বাঁচতে পারি সেটা নিয়ে আলোচনার চেয়ে বেশি জরুরি প্রশ্ন হলো, বার্ধক্যকে আমরা কতটা বিলম্বিত করতে পারি, কত বেশি দিন ধরে আমরা সুস্থ-নিরোগ জীবনযাপন করতে পারি।

এটা করা সম্ভব হলেই ভোগান্তি এড়িয়ে উপভোগের বিষয়ে পরিণত হবে দীর্ঘজীবন।”