Home LATEST NEWS bangla সর্বশেষ সংবাদ ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের প্রবেশপথ ও চারদিকে সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ, যা জানা যাচ্ছে

ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের প্রবেশপথ ও চারদিকে সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ, যা জানা যাচ্ছে

4
0

Source : BBC NEWS

ঢাকা সেনানিবাস ঘিরে সভা, সমাবেশ, মিছিল অনির্দিষ্টকালের জন্য নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে

ছবির উৎস, NurPhoto/Getty Images

এক ঘন্টা আগে

ঢাকা সেনানিবাস বা ক্যান্টনমেন্ট ঘিরে সব ধরনের সভা, সমাবেশ, মিছিল, শোভাযাত্রা, বিক্ষোভ প্রদর্শন অনির্দিষ্টকালের জন্য নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। রোববার থেকে এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করা হবে বলে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর বা আইএসপিআর এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে।

শনিবার আইএসপিআরের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “রোববার হতে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত কচুক্ষেত সড়ক, বিজয় সরণী হতে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় হয়ে বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ জাহাংগীর গেট সংলগ্ন এলাকা, বিএএফ শাহীন কলেজ হতে মহাখালী ফ্লাইওভার সংলগ্ন এলাকা, সৈনিক ক্লাব মোড়, ভাষানটেক, মাটিকাটা, ইসিবি চত্বর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় সকল প্রকার সভা, সমাবেশ, মিছিল, শোভাযাত্রা, বিক্ষোভ প্রদর্শন নিষিদ্ধ করা হলো।”

আইএসপিআর জানায়, সর্বসাধারণের চলাচল ও জনশৃঙ্খলা রক্ষার স্বার্থে এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

একই দিন গণমাধ্যমে আরেকটি বিজ্ঞপ্তি পাঠায় আইএসপিআর। এতে জানানো হয়, নাশকতা ও বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টির অভিযোগে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বরখাস্তকৃত সৈনিক নাইমুল ইসলাম ও তার দুই সহযোগীকে গ্রেপ্তার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।

সেখানে বলা হয়, বরখাস্তকৃত ওই সৈনিক রোববার ঢাকা সেনানিবাসের প্রবেশপথে বিক্ষোভ সমাবেশের নামে বড় ধরনের নাশকতা সৃষ্টির পরিকল্পনা করছিলেন এবং বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় এ সংক্রান্ত বিভিন্ন উসকানিমূলক প্রচারণা চালিয়ে আসছিলেন।

বরখাস্ত হওয়া এই সেনাসদস্যের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।

এ নিয়ে আরো পড়তে পারেন
আইএসপিআরের লোগো

ছবির উৎস, ISPR

নাঈমুলকে নিয়ে আইএসপিআরের বক্তব্য

ঢাকা সেনাবাহিনীর ঘিরে ‘নাশকতার পরিকল্পনা’র অভিযোগে সেনাবাহিনী থেকে বরখাস্ত হওয়া সৈনিক মো. নাইমুল ইসলামকে শনিবার দুপুরে ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট সংলগ্ন বটতলা এলাকা থেকে আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছে আইএসপিআর।

গণমাধ্যমে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে আইএসপিআর জানায়, বরখাস্তকৃত ওই সেনা সদস্য গত বছরের পাঁচই অগাস্টের পর থেকে শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে বরখাস্ত/অব্যাহতিপ্রাপ্ত সাবেক সেনা সদস্যদের সাথে নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে উসকানিমূলক বক্তব্য দেয়াসহ বিভিন্ন ‘নাশকতামূলক’ কার্যক্রম চালানোর পরিকল্পনা করে আসছিলেন।

এরই ধারাবাহিকতায় নাইমুল রোববার (১৮ই মে) ঢাকা সেনানিবাসের প্রবেশপথে বিক্ষোভ সমাবেশের নামে বড় ধরনের নাশকতা সৃষ্টির পরিকল্পনা এবং বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় এ সংক্রান্ত বিভিন্ন উসকানিমূলক প্রচারণাও চালিয়ে আসছিলেন।

বিজ্ঞপ্তিতে আইএসপিআর জানায়, এ ধরনের শৃঙ্খলা বহির্ভূত কর্মকাণ্ড থেকে নিবৃত্ত করতে সেনাবাহিনীর একটি প্রতিনিধি দল শনিবার দুপুর দুইটায় ঢাকার খিলক্ষেত বটতলা বাজার এলাকায় তার (নাইমুলের) সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করলে, নাইমুল তার কিছু সহযোগীসহ উপস্থিত একজন সেনাসদস্যদের ওপর দেশীয় অস্ত্র নিয়ে অতর্কিত হামলা চালায়।

তাৎক্ষণিকভাবে নিকটস্থ সেনা ক্যাম্প থেকে একটি টহল দল ঘটনাস্থলে পৌঁছে নাইমুল ও তার দুই সহযোগীকে আটক করে বলেও জানিয়েছে আইএসপিআর।

গণমাধ্যমে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে আইএসপিআর জানিয়েছে, বরখাস্ত নাইমুলকে স্ত্রীর কাছে যৌতুক দাবি, শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন এবং বিভিন্ন সামরিক শৃঙ্খলাপরিপন্থি কাজে জড়িত থাকার অপরাধে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছিল।

বরখাস্ত সেনাসদস্য নাইমুলের বিরুদ্ধে আনুষঙ্গিক আইনি কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলেও জানানো হয় আইএসপিআরের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে।

তবে, নাইমুল ইসলামকে আটক ও পরবর্তী আইনি প্রক্রিয়া কী তা জানতে বিবিসি বাংলার পক্ষ থেকে ঢাকার ক্যান্টনমেন্ট ও খিলক্ষেত থানায় যোগাযোগ করা হয়। ওই দু’টি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা (ওসি) জানিয়েছেন, নাইমুলের আটকের বিষয়ে তাদের কাছে কোনো ধরনের তথ্য নেই।

ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট এলাকা

ছবির উৎস, MUNIR UZ ZAMAN/AFP via Getty Images

আগেই যে পরামর্শ দেয়া দিয়েছিল সেনাবাহিনী

এর আগে গত বুধবার গণমাধ্যমে একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠানো হয় আইএসপিআরের পক্ষ থেকে। সেখানে সেনাবাহিনীর সাবেক সদস্যদের দাবি-দাওয়া নিয়ে নেতিবাচক কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দেয়া হয়েছিল বাহিনীর পক্ষ থেকে।

ওইদিন আইএসপিআরের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “সাম্প্রতিক সময়ে কতিপয় সাবেক সেনাসদস্যের পক্ষ থেকে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তি সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করার কিছু আবেদন উত্থাপিত হয়েছে যা সেনাসদর সর্বোচ্চ গুরুত্বের সাথে গ্রহণ করেছে। মানবিক ও প্রশাসনিক বাস্তবতা বিবেচনায় নিয়ে এ সকল আবেদনসমূহ যথাযথভাবে পর্যালোচনার উদ্দেশ্যে ইতিমধ্যে সেনা সদরে উচ্চপর্যায়ের একটি পর্ষদ গঠিত হয়েছে এবং এই পর্ষদের কার্যক্রম চলমান রয়েছে।”

বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, এ সংক্রান্ত মোট ৮০২টি আবেদন গৃহীত হয়েছে, যার মধ্যে ১০৬টি আবেদন চূড়ান্ত নিষ্পত্তির লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট রেকর্ডে পাঠানো হয়েছে। বাকি ৬৯৬টি আবেদন পর্যায়ক্রমে যাচাই-বাছাই এবং মূল্যায়ন সাপেক্ষে নিষ্পত্তির কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

বিষয়টি সময়সাপেক্ষ হলেও সেনাবাহিনী সর্বোচ্চ আন্তরিকতা এবং দায়িত্ববোধের সাথে কাজ করে যাচ্ছে বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়।

“সরকার ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, সাবেক সেনাসদস্যদের প্রাপ্য সম্মান, মর্যাদা ও ন্যায্য দাবিসমূহের প্রতি সর্বোচ্চ শ্রদ্ধাশীল এবং ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী বিশ্বাস করে—পারস্পরিক শ্রদ্ধা, সহানুভূতি ও যথাযথ প্রক্রিয়া মেনে চলার মাধ্যমেই প্রতিটি সমস্যা শান্তিপূর্ণভাবে সমাধান করা সম্ভব,” বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়।

এ বিষয়ে যে কোনো ধরনের নেতিবাচক কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকার এবং যেকোনো পরিস্থিতিতে ধৈর্য্য, শৃঙ্খলা ও সহনশীলতা বজায় রাখার জন্য পরামর্শ প্রদান করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।

প্রসঙ্গত, গত বছর আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সেপ্টেম্বরে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে চাকরিচ্যুত সেনাসদস্যরা বকেয়া বেতন-ভাতাসহ চাকরি পুনর্বহালের দাবি জানিয়ে ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবে একটি সংবাদ সম্মেলন করেন।

ওই একই সময় সময় অর্ধশতের বেশি চাকরিচ্যুত সেনাসদস্য প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন করে তাদের দাবি বাস্তবায়নের আহ্বান জানান। ‘সহযোদ্ধা’ নামে চাকরিচ্যুত সেনাসদস্যদের একটি প্ল্যাটফর্ম থেকে তারা এসব দাবি তুলে ধরেছিলেন।

এরপর ডিসেম্বর মাসে চাকরিতে পুনর্বহাল ও বিচার ব্যবস্থার সংস্কারসহ তিন দফা দাবিতে ঢাকা সেনানিবাসের শহীদ জাহাঙ্গীর গেটের সামনে অবস্থান নেন চাকরিচ্যুত ও বাধ্যতামূলক অবসরে সশস্ত্র বাহিনীর একদল সদস্য। পরে তাদের আবেদনের পরামর্শ দেয় কর্তৃপক্ষ।

এরপরও বিভিন্ন সময়ে সাবেক সেনাসদস্যদের জাহাঙ্গীর গেট বা রাওয়া ক্লাব এলাকায় নানা কর্মসূচি পালন করতে দেখা গেছে।

বিবিসি বাংলার অন্যান্য খবর
গত সপ্তাহে কাকরাইল মসজিদের সামনে যমুনার একপাশে আন্দোলনে নামে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা

ছবির উৎস, SRS ALI

ঢাকার যে সব স্থানে ডিএমপির নিষেধাজ্ঞা

শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর বিভিন্ন দাবি দাওয়া নিয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকার বিভিন্ন জায়গায় নিয়মিত রাস্তা আটকে সভা সমাবেশ করতে দেখা যায়।

বিশেষ করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার আশপাশে গত কয়েক মাসে বেশ কিছু সভা-সমাবেশও অনুষ্ঠিত হয়।

যদিও অনেক সময় নিষেধাজ্ঞা দিয়েও সে সব সভা-সমাবেশ বা রাস্তা অবরোধের মতো ঘটনাগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ বা ডিএমপি।

সর্বশেষ গত ১০ই মে ডিএমপি’র জারি করা এক গণবিজ্ঞপ্তিতে সচিবালয়, প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবন যমুনা এবং এর আশপাশের এলাকায় সব ধরনের গণজমায়েত, মিছিল ও সমাবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

গত সপ্তাহে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শিক্ষার্থীরা কাকরাইল মোড় এলাকায় আন্দোলন ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করে।

পরে গত ১৫ই মে ডিএমপি থেকে আরেকটি একটি গণবিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়।

ওই গণবিজ্ঞপ্তিতে, প্রধান বিচারপতির বাসভবন, বিচারপতি ভবন, জাজেস কমপ্লেক্স, সুপ্রিম কোর্টের গেটসহ নয়টি স্থানে সভা, সমাবেশ, বিক্ষোভ, সভাযাত্রা ও বিক্ষোভ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, জনশৃঙ্খলা এবং প্রধান উপদেষ্টার নিরাপত্তা রক্ষায় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ অর্ডিন্যান্স এর ২৯ ধারায় অর্পিত ক্ষমতাবলে সভা, সমাবেশ, মিছিল, শোভাযাত্রা ও বিক্ষোভ প্রদর্শন ইত্যাদি নিষিদ্ধ করা হয়।

এতে বিভিন্ন দাবি-দাওয়া আদায় ও প্রতিবাদ কর্মসূচির নামে যখন-তখন সড়ক অবরোধ করে যান চলাচলে বিঘ্ন না ঘটানোর জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে পুনরায় অনুরোধও করা হয় ডিএমপির পক্ষ থেকে।