Home LATEST NEWS bangla সর্বশেষ সংবাদ ট্রাম্পকে চিঠি দিচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টা, কী বলতে চাইছে বাংলাদেশ?

ট্রাম্পকে চিঠি দিচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টা, কী বলতে চাইছে বাংলাদেশ?

3
0

Source : BBC NEWS

আগামী দু'দিনের মধ্যে সরকারের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠি পাঠানো হবে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে

বাংলাদেশি পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্র যে বাড়তি শুল্ক আরোপ করেছে, সেটির বিষয়ে দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে চিঠি দিতে যাচ্ছেন অর্ন্তবর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।

আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সরকারের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে ওই চিঠি পাঠানো হবে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।

মার্কিন প্রেসিডেন্টের পাশাপাশি দেশটির বাণিজ্য বিষয়ক দপ্তর ‘অফিস অব দ্য ইউনাইটেড স্টেটস ট্রেড রিপ্রেজেন্টেটিভ’কেও (ইউএসটিআর) আলাদাভাবে চিঠি দেওয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।

“দুইটা চিঠি আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে যাবে। একটা চিঠি যাবে আমাদের প্রধান উপদেষ্টার তরফ থেকে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে। আর একটা চিঠি যাবে আমাদের কমার্স অ্যাডভাইজারের (বাণিজ্য উপদেষ্টার) তরফ থেকে ইউএসটিআরের কাছে,” রোববার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেন মি. আলম।

চিঠিতে কী কী বিষয় উল্লেখ করা প্রয়োজন, সে বিষয়ে মতামত জানতে রোববার ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেছে সরকার।

“সবার সঙ্গে কথা হয়েছে। কথা হওয়ার পরেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে,” বলেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব মি. আলম।

কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রকে এই চিঠি দেওয়ার উদ্দেশ্য কী?

সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যাচ্ছে যে, বাড়তি শুল্কহারের বিষয়টি মার্কিন সরকার যাতে পুর্নবিবেচনা করে, সে বিষয়ে আলোচনা শুরু করার জন্যই চিঠি পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

“তারা (যুক্তরাষ্ট্র) তো বলেছে যে, এটা নেগোশিয়েবল (সমঝোতার যোগ্য)। বিষয়টা নিয়ে আলোচনা করা যাবে। তো সেই জায়গা থেকেই আমরা (চিঠি) দিচ্ছি,” ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক শেষে বিবিসি বাংলাকে বলেন উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান।

সেই সঙ্গে, দু’দেশের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য আরও কীভাবে বৃদ্ধি করা যেতে পারে, চিঠিতে সেবিষয়ে আলোকপাত করা হবে বলে জানা যাচ্ছে।

উল্লেখ্য যে, ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতা গ্রহণের পর সম্প্রতি বিভিন্ন দেশের পণ্যের ওপর ‘রিসিপ্রোকাল ট্যারিফ’ বা পাল্টা শুল্ক ঘোষণা করা হয়েছে।

যেসব দেশ এতদিন মার্কিন পণ্যের ওপর উচ্চ শুল্ক নির্ধারণ করে রেখেছিলো, সেইসব দেশের পণ্যে পাল্টা শুল্ক আরোপ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন দেশটির কর্মকর্তারা।

এরই অংশ হিসেবে, সম্প্রতি বাংলাদেশের পণ্যের ওপর ৩৭ শতাংশ বাড়তি শুল্ক আরোপ করেছে ট্রাম্প প্রশাসন, যা আগামী নয়ই এপ্রিল থেকে কার্যকর হওয়ার কথা রয়েছে।

তবে আরোপিত শুল্কের বিষয়ে আলোচনার পথ উন্মুক্ত রেখেছে মার্কিন সরকার। বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে ইতোমধ্যে ৫০টির বেশি দেশ যোগাযোগ করেছে বলে জানিয়েছেন মার্কিন কর্মকর্তারা।

বাংলাদেশও সেই পথ অনুসরণ করতে যাচ্ছে।

আরও পড়তে পারেন:
বাংলাদেশি পণ্যে ৩৭ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র

ছবির উৎস, Getty Images

বৈঠক শেষে যা বললেন উপদেষ্টারা

যুক্তরাষ্ট্রের বাড়তি শুল্কহারের বিষয়ে আলোচনা করার জন্য রোববার সচিবালয়ে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন অন্তর্বর্তী সরকারের বেশ কয়েকজন উপদেষ্টা।

অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে প্রায় দেড় ঘণ্টা ধরে বৈঠক চলে।

সেখানেই যুক্তরাষ্ট্রকে চিঠি পাঠানোর বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

চিঠিতে শুল্ক পুর্নবিবেচনার পাশাপাশি দু’দেশের মধ্যে আমদানি-রপ্তানির হার বাড়ানোর বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে বলে সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

এক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আরও বেশি পণ্য ও সেবা আমদানির কথাও ভাবছে সরকার।

“কারণ ওদের (যুক্তরাষ্ট্র) কনসার্নটা (উদ্বেগ) হচ্ছে, আমরা তাদের কাছ থেকে কম আমদানি করি, রপ্তানি বেশি করি। সেই জায়গা থেকেই এটা চিন্তা করা হচ্ছে,” ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক শেষে বিবিসি বাংলাকে বলেন উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান।

ইউএসটিআরের হিসেবে, ২০২৪ সালে বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় এক হাজার ৬০ কোটি ডলার বাণিজ্য হয়।

এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ২২০ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি করেছে বাংলাদেশ। অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানি হয়েছে প্রায় ৮৪০ কোটি ডলারের মতো।

ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতা গ্রহণের পর সম্প্রতি বিভিন্ন দেশের পণ্যের ওপর 'রিসিপ্রোকাল ট্যারিফ' বা পাল্টা শুল্ক ঘোষণা করেছে যুক্তরাষ্ট্র।

ছবির উৎস, Getty Images

এ অবস্থায় অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশের পণ্যের ওপরও বাড়তি ৩৭ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে ট্রাম্প প্রশাসন।

হঠাৎ এই শুল্ক বাড়ানোর ফলে বাংলাদেশকে এখন পণ্য রপ্তানির জন্য গড়ে প্রায় ৫২ শতাংশ শুল্ক দিতে হবে, যা নিয়ে রীতিমত উদ্বেগ প্রকাশ করেন দেশটির ব্যবসায়ীরা।

এমন পরিস্থিতিতে রোববার ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে শুল্ক পুর্নবিবেচনার জন্য ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে চিঠি পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।

“আমরা তাদের (যুক্তরাষ্ট্রের) সাথে আলোচনা করছি। আমাদের যোগাযোগ হচ্ছে। আমেরিকা থেকে যদি কিছু আমদানি করা লাগে, আমরা সেটি করবো। এতে করে আমাদের বাণিজ্য ঘাটতিটা কমবে। তবে তাদের সাথে সম্পর্ক রাখা লাগবে,” রোববার বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের বলেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ।

দু’দেশের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়ানোর ক্ষেত্রে যেসব প্রতিবন্ধকতা রয়েছে, সেগুলো দূর করার চেষ্টা করা হবে বলেও জানান অর্থ উপদেষ্টা।

“আমেরিকার ইকনোমি বেটার ইকনোমি। তাদের সাথে আমাদের ট্যারিফ-নন ট্যারিফ ব্যারিয়ার যেগুলো আছে সেগুলো দূর করা হবে। এজন্য আলোচনা করা হবে কোনো অসুবিধা যেন না হয়,” বলেন মি. আহমেদ।

পরিকল্পনা উপদেষ্টাও একই কথা জানান।

“এটা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে আমরা কেউ জানিনা। এতে করে বিশ্ব অর্থনীতি বড় ধরনের নাড়াচাড়া খাবে। আমরা একটা কাজ করব, যাতে করে আমাদের আরএমজিটা রক্ষা পায়। যেন আমরা প্রতিযোগিতায় টিকতে পারি,” ব্রিফিংয়ে বলেন পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ।

যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শুল্ক তালিকা

ব্যবসায়ীরা কী বলছেন?

বাড়তি শুল্কহার পুর্নমূল্যায়ন ও বাণিজ্য সম্প্রসারণের লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্রকে চিঠি দেওয়ার সিদ্ধান্তে স্বস্তি প্রকাশ করেছেন ব্যবসায়ী নেতারা।

“সরকারের যে পরিকল্পনা, তাতে আমরা কিছুটা স্বস্তিতে আছি। আমাদের কমপিটিটিভ যেন না কমে, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করা হলে আমরা এটা ওভারকাম করতে পারবো,” বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের বলেন ব্যবসায়ী নেতা সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর।

একই কথা বলেছেন স্কয়ারের টেক্সটাইলসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তপন চৌধুরীও।

“আমরা আসলেই যতটা চিন্তিত ছিলাম। আজকের আলোচনায় আমরা একটা নির্দেশনা পেয়েছি,” বলেন মি. চৌধুরী।

যুক্তরাষ্ট্র সরকারের কাছে বাংলাদেশ আর কী কী জিনিস কিনতে পারে, সে বিষয়ে নজর দেওয়ার তাগিদ দিয়েছেন ব্যবসায়ী নেতারা।

একই সঙ্গে বাংলাদেশের জন্য পোশাক খাতের বাইরেও অন্যান্য পণ্যের রপ্তানি বাড়ানোর প্রতিও নজর দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তারা।