Home LATEST NEWS bangla সর্বশেষ সংবাদ গাজায় হামলা বন্ধের জন্য ইসরায়েলের উপর চাপ বাড়াচ্ছে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও কানাডা

গাজায় হামলা বন্ধের জন্য ইসরায়েলের উপর চাপ বাড়াচ্ছে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও কানাডা

3
0

Source : BBC NEWS

মার্চে যুদ্ধবিরতি শেষ হওয়ার পর ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর হামলায় গাজায় হাজার হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে

ছবির উৎস, Reuters

২০২৩ সালের সাতই অক্টোবর হামাসের হামলার পর ইসরায়েল অস্ত্রসস্ত্রে সজ্জিত হয়ে যে যুদ্ধ শুরু করেছিল, সেই যুদ্ধের অর্থ, অস্ত্র সরবরাহ, পুনরায় সরবরাহ-সবটাই করেছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।

অন্যান্য মিত্ররাও নিজেদের মতো করে কোনও না কোনওভাবে ইসরায়েলের পাশে দাঁড়িয়েছে।

হামাসের হামলায় যে ১২০০ জনকে হত্যা করা হয় (যাদের বেশিরভাগই ইসরায়েলের বেসামরিক নাগরিক ছিলেন) এবং ২৫১ জনকে গাজায় জিম্মি করার পর ইসরায়েলের তরফে নেওয়া পদক্ষেপের প্রতি প্রতি সহানুভূতি ও একাত্মতাও প্রকাশ করেছিল মিত্র দেশগুলো।

কিন্তু এখন মনে হচ্ছে, ইসরায়েল সেই সমর্থন হারিয়ে ফেলেছে। অন্তত ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য ও কানাডার কথা মাথায় রাখলে বিষয়টা তাই দাঁড়াচ্ছে। গাজায় ইসরাইল যেভাবে যুদ্ধ চালাচ্ছে তার তীব্র নিন্দা করেছে এই তিন দেশ।

তাদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ইসরায়েলকে নতুনভাবে আক্রমণ করা অবশ্যই বন্ধ করতে হবে। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু দাবি করেছিলেন, তার এই পদক্ষেপ হামাসকে ধ্বংস ও অবশিষ্ট জিম্মিদের উদ্ধার করতে এবং পুরো গাজাকে সরাসরি ইসরায়েলি সামরিক নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

তিন দেশের বিবৃতিতে প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর সেই যুক্তিকে খারিজ করার পাশাপাশি যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানানো হয়েছে।

একইসঙ্গে ওই তিন দেশের সরকার বলেছে তারা “গাজায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযান সম্প্রসারণের তীব্র বিরোধিতা করে”। সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে যে, “গাজার বাসিন্দাদের দুর্ভোগের মাত্রা অসহনীয় হয়ে পড়েছে।”

দেশগুলোর তরফে অবশিষ্ট জিম্মিদের মুক্তির আহ্বানও জানানো হয়েছে।

পাশাপাশি তারা ইসরায়েলকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছে যে সাতই অক্টোবরের “জঘন্য আক্রমণের” পরে তারা (দেশগুলো) মনে করেছিল “সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ইসরায়েলিদের আত্মরক্ষা করার অধিকার রয়েছে। কিন্তু এখন যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, এটা একেবারে অসামঞ্জস্যপূর্ণ।”

আরও পড়তে পারেন
গাজায় মানবিক পরিস্থিতি অসহনীয় বলে মন্তব্য করা হয়েছে ওই তিন দেশের পক্ষ থেকে।

ছবির উৎস, AFP via Getty Images

প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু গাজায় ‘ন্যূনতম’ খাবার প্রবেশের অনুমতি দেওয়ার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তা সেখানকার মানুষদের জন্য ‘সম্পূর্ণ অপর্যাপ্ত’ বলেও বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে।

বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু পাল্টা প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেছেন, “লন্ডন, অটোয়া এবং প্যারিসের নেতারা সাতই অক্টোবর ইসরায়েলে গণহত্যা হামলার জন্য ব্যাপক পুরষ্কার দিচ্ছেন এবং এই জাতীয় নৃশংসতাকে আরও আমন্ত্রণ জানাচ্ছেন।”

তিনি জোর দিয়ে জানিয়েছেন, হামাস যদি তাদের হেফাজতে থাকা বাকি জিম্মিদের ফিরিয়ে দেয়, অস্ত্র সমর্পণ করে, তাদের নেতাদের নির্বাসনে যাওয়ার কথা মেনে নেয় এবং যদি গাজাকে বেসামরিকীকরণ করা হয় তবেই যুদ্ধের অবসান হতে পারে।

তিনি বলেছেন, “কোনও দেশই এর চেয়ে কম কিছুতে সম্মত হবে বলে আশা করা যায় না এবং ইসরায়েলও মানবে না।”

আন্তর্জাতিক জরিপের উপর ভিত্তি করে গাজায় আসন্ন দুর্ভিক্ষের সতর্কবার্তা জারি করার পর সেখানে চলমান সংঘর্ষ শেষ করার জন্য ইসরায়েলের উপর ব্যাপক পরিমাণে আন্তর্জাতিক চাপ সৃষ্টি হয়েছে।

প্রসঙ্গত, মি. নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালতের ওয়ারেন্টও রয়েছে যা তিনি “ইহুদি-বিদ্বেষী” বলে খারিজ করেছেন।

লন্ডনে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাজ্যের শীর্ষ সম্মেলনে ইউরোপীয় কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট আন্তোনিও কস্তা গাজার মানবিক সংকটকে এমন “এক ট্র্যাজেডি যেখানে আন্তর্জাতিক আইন পদ্ধতিগতভাবে লঙ্ঘন করা হচ্ছে এবং পুরো জনগোষ্ঠীকে অসম সামরিক শক্তির শিকার হতে হচ্ছে” বলে বলে মন্তব্য করেছেন।

যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজায় এক শিশু।

ছবির উৎস, AFP via Getty Images

তিনি বলেছিলেন, “মানবিক সহায়তার জন্য নিরাপদ, দ্রুত ও অবাধ প্রবেশাধিকার থাকতে হবে।”

এদিকে, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর গাজায় সীমিত আকারে ত্রাণ সরবরাহের যে অনিচ্ছুক অনুমতির সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন, তার বিরোধিতা করেছে তারই অতি জাতীয়তাবাদী জোটের অংশীদাররা।

বর্ণবাদে উস্কানি দেওয়া এবং একটা ‘চরমপন্থী’ ইহুদি গোষ্ঠীকে সমর্থন করার অভিযোগে ২০০৭ সালে দোষী সাব্যস্ত হওয়া নিরাপত্তা বিষয়ক মন্ত্রী ইতামার বেন গভির অভিযোগ করেছেন যে, নেতানিয়াহুর ওই সিদ্ধান্ত “হামাসকে জ্বালানী ও অক্সিজেন সরবরাহ করবে এবং আমাদের জিম্মিরা টানেলের মধ্যে নিস্তেজ হয়ে পড়বে।”

এদিকে ইসরায়েলি সেনারা অনেকটাই অগ্রসর হতে পেরেছে এবং বিমান ও আর্টিলারি হামলায় বহু ছোট শিশুসহ আরও অনেক ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে সোমবার গাজায় মাত্র পাঁচটা ট্রাক প্রবেশ করেছে।

ইসরায়েলের তরফে গাজা ধ্বংস এবং হাজার হাজার ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিক হত্যার যারা বিরোধিতা জানিয়ে আসছেন, তারা অবশ্য বলবেন যে ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য এবং কানাডার সরকার মুখ খুলতে অনেকটাই দেরি করে ফেলছে।

এদের মধ্যে অনেকেই গাজায় মৃত্যু ও ধ্বংসযজ্ঞের প্রতিবাদে কয়েক মাস ধরে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন। তারা সামরিক অভিযান এবং সশস্ত্র ইহুদি বসতি স্থাপনকারীদের অভিযানের সময় পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনি নাগরিকদের হত্যা এবং তাদের জমি জোর করে দখল করার প্রতিবাদও জানিয়েছেন।

কিন্তু কখনও কখনও যুদ্ধের রাজনীতিতে, কোনও একটা ঘটনা প্রতীকী শক্তি বহন করে যা এতটাই তীব্র যে তা সরকারকে কড়া পদক্ষেপ নিতে বাধ্য করতে পারে। এক্ষেত্রে সেটা হলো গত ২৩ মার্চ গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে ১৫ জন প্যারামেডিক ও ত্রাণকর্মী নিহত হওয়ার ঘটনা।

গত ১৮ মার্চ ইসরায়েল দুই মাস ধরে চলা যুদ্ধবিরতি ভঙ্গ করে ব্যাপক বিমান হামলা চালায়।

বিবিসি বাংলার অন্যান্য খবর:
 সমালোচনা খারিজ করে পাল্টা যুক্তি দিয়েছেন বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু।

ছবির উৎস, Kevin Dietsch/Getty Image

আবার যুদ্ধ শুরু হওয়ার পাঁচ দিন পর একটা ইসরায়েলি ইউনিট মেডিকেল কনভয়ের উপর হামলা চালায়। এই হামলায় নিহত ব্যক্তিদের দেহ এবং বুলেটের দাগযুক্ত গাড়িগুলোকে তারা বালি দিয়ে ঢেকে দেয়। গণকবর দেয়া একটি মৃতদেহ থেকে উদ্ধার করা মোবাইল ফোন স্পষ্ট করে দেয় যে ওই হামলার বিষয়ে ইসরায়েল যে বিবরণ দিয়েছিল তা সত্যি নয়।

যে ব্যক্তির কাছ থেকে ওই মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়েছিল, তিনি মৃত্যুর আগে পুরো ঘটনাটা মোবাইলে ক্যামেরাবন্দি করেছিলেন।

ওই প্যারামেডিক ও ত্রাণকর্মীরা ইসরায়েলি সৈন্যদের জন্য সম্ভাব্য ঝুঁকির কারণ হতে পারে বলে ইসরায়েল দাবি করেছিল। কিন্তু ভিডিও থেকে জানা গেছে স্পষ্টভাবে চিহ্নিত এবং আলোকিত অ্যাম্বুলেন্স এবং জরুরি যানবাহনগুলোর উপর পরিকল্পিতভাবে আক্রমণ করা হয়েছিল। এই আক্রমণ ততক্ষণ চলে যতক্ষণ না গাড়ির ভিতরে থাকা সকলের মৃত্যু হয়েছে।

এরপর থেকেই দ্রুত সবাই সচেতন হতে শুরু করে। সেটা শুধুমাত্র ইসরায়েলের সরকার বিরোধীরাই নয়, বরং ইউরোপীয় মিত্ররাও সতর্ক হয়ে যায়।

ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর নেতৃত্বে ইউরোপীয় মিত্ররা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে কঠোর ভাষা ব্যবহার করেছে। ইসরায়েলের আগ্রাসন বন্ধের আহ্বান জানিয়ে যে বিবৃতি প্রকাশ করা হয়েছে তা এখন পর্যন্ত তাদের সবচেয়ে কঠোর সমালোচনা বলে মনে করা হয়।

বিবিসি বাংলায় অন্যান্য খবর
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট  ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ গাজায় মানবিক পরিস্থিতিসহ একাধিক বিষয়কে কেন্দ্র করে ইসরায়েলের সমালোচনা করেছেন।

ছবির উৎস, Reuters

সাম্প্রতিক আলোচনার সঙ্গে যুক্ত এক জ্যেষ্ঠ ইউরোপীয় কূটনৈতিক সূত্র আমাকে বলেছে যে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যে কড়া ভাষা ব্যবহার করা হয়েছে সেখানে “মানবিক পরিস্থিতি, (ইসরায়েলের তরফে) সীমা অতিক্রম করা এবং ইসরায়েলের সরকার দায়সারা কাজ করছে-এই সমস্ত বিষয়কে কেন্দ্র করে তৈরি রাজনৈতিক ক্ষোভের” প্রতিফলিত হয়েছে।

ইসরায়েলের জন্য আরও উদ্বেগের বিষয় হলো, যে বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “নেতানিয়াহু সরকার যখন এই ধরনের জঘন্য কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে তখন আমরা চুপ করে থাকব না। যদি ইসরায়েল নতুনভাবে সামরিক আক্রমণ বন্ধ না করে এবং মানবিক সহায়তার ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার না করে, আমরা এর প্রতিক্রিয়া স্বরূপ আরও দৃঢ় পদক্ষেপ নেব।”

সেই পদক্ষেপ কী হতে পারে সেটা অবশ্য তারা স্পষ্ট করে বলেননি।

তবে নিষেধাজ্ঞা একটা সম্ভাবনা হতে পারে। এর চেয়েও বড় পদক্ষেপ হতে পারে ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত।

যে ১৪৮টা দেশ ইতিমধ্যে ওই সিদ্ধান্তের সঙ্গে সম্মত তাদের তালিকায় যোগ দেওয়ার কথা বিবেচনা করছে ফ্রান্স। আগামী জুন মাসের শুরুতে নিউইয়র্কে একটি কনফারেন্সে সৌদি আরবের সঙ্গে যৌথ সভাপতিত্ব করতে চলেছে ফ্রান্স। সেই সময় এই সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারে তারা। এদিকে, যুক্তরাজ্যও ফিলিস্তিনের স্বীকৃতির বিষয়ে ফ্রান্সের সঙ্গে কথা বলেছে।

ইসরায়েল তাদের এই যুক্তি দিয়ে ঠেকানোর চেষ্টা করছে যে, এমনটা করলে হামাসকে জিতিয়ে দেওয়া হবে। কিন্তু ফ্রান্স, কানাডা ও যুক্তরাজ্যের বিবৃতির সুর থেকে বোঝা যায়, ইসরাইল তাদের উপরে চাপ প্রয়োগের ক্ষমতা হারিয়ে ফেলছে।