Home LATEST NEWS bangla সর্বশেষ সংবাদ কেমন ছিল ২০১৮ সালের নিরাপদ সড়ক আন্দোলন

কেমন ছিল ২০১৮ সালের নিরাপদ সড়ক আন্দোলন

3
0

Source : BBC NEWS

নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলন

ছবির উৎস, Getty Images

দিনটির কথা হয়তো অনেকেরই মনে আছে, ২০১৮ সালের ২৯শে জুলাই ছিল সেদিন।

প্রতিদিনের মতো ওইদিনও কলেজ ছুটির পর বাসায় ফেরার জন্য বাসের অপেক্ষায় ছিলেন শহীদ রমিজউদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের শিক্ষার্থীরা। ঢাকার বিমানবন্দর সড়কে কুর্মিটোলা হাসপাতালের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন তারা।

এ সময় আব্দুল্লাহপুর থেকে মোহাম্মদপুর রুটে চলাচলকারী জাবালে নূর পরিবহন লিমিটেডের দুই বাসের বেপরোয়া প্রতিযোগিতা শুরু হয়। বাস দুটির প্রতিযোগিতায় প্রাণ হারান রাস্তায় অপেক্ষায় থাকা দুই জন শিক্ষার্থী।

সেই ঘটনায় আহত হয়েছিল আরও অন্তত ১০ জন।

নিহতদের একজন ওই কলেজেরই দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী রাজীব এবং অপরজন একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী দিয়া খানম মিম।

ঘটনার পরপরই বিক্ষোভে ফেটে পড়ে শিক্ষার্থীরা। সড়ক অবরোধ, যানবাহন ভাঙচুর করে সেদিন ওই কলেজের বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা।

সেই আন্দোলন দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছিল। রাজপথে নেমে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ব্যাপক আলোড়ন ফেলেছিল।

প্রায় সাত বছর আগে ২০১৮ সালের ওই আন্দোলনের সময় নালন্দা স্কুলের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিলেন আদৃতা রায়। এখন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী।

সেই আন্দোলনের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে মিজ রায় জানান, আন্দোলন খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার খবরে বন্ধুরা মিলে এতে যোগ দেবেন বলে ঠিক করেন।

বিবিসি বাংলাকে মিজ রায় বলেন, “ওইদিন স্কুল ইউনিফর্ম পড়ে আমরা প্রথমে নালন্দা ও সহজ পাঠের শিক্ষার্থীরা ধানমন্ডি ২৭ নম্বরে আই হসপিটালের সামনের রাস্তা অবরোধ করি। “

সেদিন সেন্ট জোসেফ ও ধানমন্ডির অন্যান্য স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরাও তাদের সাথে যোগ দেয়।

ওই স্থানে ওইদিন গাড়ির লাইসেন্স চেকিং, ড্রাইভারের লাইসেন্স, মানববন্ধন করেন তারা।

পরে সায়েন্স ল্যাবে আরও বড় জমায়েতের খবরে সেখানে গিয়েই মূলত আন্দোলনের বড় রূপ দেখতে পান সেদিনের এই স্কুল শিক্ষার্থী।

তিনি বলেন, “আমরা ছিলাম হয়তো দুইশ – আড়াইশ। কিন্তু সায়েন্সল্যাবে গিয়ে আসলে বড় রূপটা দেখি …. হাজার হাজার শিক্ষার্থী। আমাদের অনেকেরই জীবনে প্রথম এতো বড় রূপ (আন্দোলন) দেখি।”

বিবিসি বাংলার অন্যান্য খবর:
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।

তবে সেই বিক্ষোভ শুধু ঢাকাতেই থেমে থাকেনি, ঢাকাসহ সারা দেশের সব স্কুল–কলেজের শিক্ষার্থীদের মাঝে ছড়িয়ে পড়ে। আন্দোলনের একপর্যায়ে তাদের সাথে একাত্মতা পোষণ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও।

দেশের প্রায় সব শ্রেণি-পেশার মানুষের সমর্থন দেখা গিয়েছিলো ওই আন্দোলনে।

২৯ শে জুলাই থেকে আটই অগাস্ট পর্যন্ত টানা ১১ দিন ধরে চলে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন।প্রাথমিকভাবে শিক্ষার্থী নিহতের বিচার দাবি করলেও পরে এটি বড় মাইলফলক আন্দোলনে রূপ নেয়।

এর কারণ মনে করা হয়, বাংলাদেশে রাজনৈতিক দলের লেজুড়বৃত্তিক ছাত্র রাজনীতির পুরোপুরি বাইরে গিয়ে নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীরা সংঘবদ্ধ হয়ে নেমেছিল এই আন্দোলনে।

গত ১২ই মে থেকে শুরু হয়েছে নিরাপদ সড়ক সপ্তাহ। এই প্রতিবেদনে আমরা পেছনের সেই সময়ে ফিরে যাওয়ার চেষ্টা করেছি।

আন্দোলন শুরু ও সংগঠিত হয় কীভাবে?

সড়কে নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবিতে বাংলাদেশে এর আগে বিভিন্ন সময় আন্দোলন হলেও ২০১৮ সালের মতো আলোড়ন আর কখনোই হয়নি।

পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের ওপর তৎকালীন ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠন ছাত্রলীগ, যুবলীগের নেতা-কর্মীদের হামলা আন্দোলনকে আরও তীব্র করে।

স্কুল শিক্ষার্থী হিসেবে সে সময় রাজনৈতিক বোধ বা জ্ঞান তৈরি না হলেও দুজন কলেজ শিক্ষার্থীর ‘এত সহজে মৃত্যু’ মানতে না পারাই মূলত আন্দোলনে যোগ দিতে স্পৃহা তৈরি করে বলে জানান আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী আদৃতা রায়।

বেশিরভাগ স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরাই এই বোধ থেকে সেসময় আন্দোলনে যোগ দিয়েছিল বলে মনে করেন তিনি। আন্দোলনে যোগ দেয়ার কথা উল্লেখ করে মিজ রায় বলেন, “সায়েন্সল্যাবে শিক্ষার্থীদের বেশ কিছু পোস্টারে লেখা কথাগুলো মনে দাগ কাটে আমার, যা পুরো নাড়িয়ে দেয় আমাকে।”

পরে শাহবাগে আরও বড় জমায়েতের কথা শুনে সেখানে যান মিজ রায় ও তার বন্ধুরা। সায়েন্সল্যাব থেকে হেঁটে শাহবাগ গিয়ে দেখেন হাজার হাজার শিক্ষার্থী। অনেকের হাতে প্রতিবাদের ভাষায় লেখা নানা পোস্টার।

‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ স্লোগান দিয়ে শিক্ষার্থীরা ওই সময় সড়কে যানবাহনের ফিটনেস পরীক্ষা করে, দেশে প্রথমবারের মতো ইমার্জেন্সি লেন তৈরি করে, অনেকটাই শৃঙ্খলা তৈরি করে প্রশংসিত হন।

যানবাহনের ফিটনেস ও চালকের লাইসেন্স পরীক্ষা শুরু করলে দেশের বহু গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির যানবাহনও আটকে যায় শিক্ষার্থীদের হাতে।

রাস্তায় রাস্তায় ওইসময় স্কুল-কলেজের ইউনিফর্ম পরিহিত শিক্ষার্থীদের গাড়ির ফিটনেস লাইসেন্স, চালকের লাইসেন্স চেক করতে দেখা যায়। পাশাপাশি অ্যাম্বুলেন্স ও ফায়ার সার্ভিসের গাড়ির জন্য পথ করে দিতেও দেখা গিয়েছিল।

তবে আন্দোলন শুরু হওয়ার দুইদিন পরই ঢাকার বাইরে সারা দেশ থেকে শিক্ষার্থীদের ধর- পাকড়ের খবর আসে। এই খবরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রীদের সাথে একাত্মতা পোষণ করে আন্দোলনে যোগ দেন।

সে সময় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞানের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন শাকিল উজ্জামান।

মি. জামান বিবিসি বাংলাকে বলেন, “এ আন্দোলন একক নেতৃত্বে ছিল না। একক নেতৃত্বে থাকলে ভয়-ভীতি দেখিয়ে আন্দোলন বন্ধ করে দিত। কিন্তু এটা প্রতিষ্ঠানকেন্দ্রিক হওয়ায় তা সম্ভব হয়নি।”

পাঁচই অগাস্ট, ২০১৮ সালে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের ছবি

আন্দোলন দমাতে ‘হেলমেট বাহিনী’

২৯শে জুলাই আন্দোলন শুরু হলেও প্রথমদিকে পুলিশের মারমুখী ভূমিকা ছিল না। কিন্তু সপ্তম দিন অর্থাৎ চৌঠা অগাস্ট থেকে ঢাকার রাস্তায় মারমুখী হয়ে ওঠেছিল পুলিশ।

শিক্ষার্থীদের দমাতে লাঠিচার্জ, কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে পুলিশ।

পাশাপাশি তৎকালীন ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠন ছাত্রলীগ, যুবলীগের নেতা-কর্মীরা শিক্ষার্থীদের ওপর হামলাও চালায়; যা কিনা আন্দোলনের গতিকে আরও তীব্র করে।

সে সময়ের বিভিন্ন সংবাদপত্র, টেলিভিশনে এরকম অসংখ্য ছবি প্রকাশ বা প্রচার করা হয়েছিলো যাতে পুলিশের উপস্থিতিতেই মাথায় হেলমেট পরে আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা করতে দেখা যায়। অনেকে তাদের ‘হেলমেট বাহিনী’ বলেও উল্লেখ করেছেন তখন।

আন্দোলনের সপ্তম ও অষ্টম দিনে জিগাতলা ও সায়েন্স ল্যাবরেটরি এলাকায় পুলিশের দফায় দফায় কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ এবং লাঠিপেটার ঘটনায় কমপক্ষে ৫০ জন আহত হয়েছিলেন বলে সেসময় বিবিসি বাংলার এক সংবাদে উল্লেখ করা হয়েছিল।

২০১৮ সালের চৌঠা অগাস্ট ও পাঁচই অগাস্ট পুলিশের সামনে হেলমেট মাথায় দিয়ে একদল যুবক লাঠি, হকিস্টিক ও কিরিচ নিয়ে আন্দোলনকারীদের পেটানোর পাশাপাশি সাংবাদিকদেরও হামলা করেছিল।

পাঁচই অগাস্ট জিগাতলা ও সায়েন্স ল্যাবরেটরিতে ওই বিক্ষোভের নেতৃত্বে ও অংশগ্রহণে ছিলেন মূলত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা, ছিলেন বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও।

স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কেন নেমেছেন?–– বিবিসি বাংলার এই প্রশ্নে সেসময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থী জানিয়েছিলেন, জিগাতলায়

(চৌঠা অগাস্ট) স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীর ওপর হামলার প্রতিবাদে তারা এই বিক্ষোভ করেন।

পরদিন পাঁচই অগাস্ট নিজের দুঃসহ স্মৃতির কথা মনে করে বিবিসি বাংলাকে আদৃতা রায় বলেন, “সবচেয়ে ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা হইছে যেইদিন হেলমেট বাহিনী (হেলমেট পরে যারা শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালিয়েছিল) নামলো।”

“হেলমেট বাহিনী নামছিলো জিগাতলার দিকটায়। আওয়ামী লীগের অফিসটাকে কেন্দ্র করে জিগাতলা ও ধানমন্ডির দিকে। তখন কিন্তু পরিস্থিতি থমথমে। সারা দেশে যে হামলা হচ্ছে সেটা শুনতে পাচ্ছি,” বলেন মিজ রায়।

সায়েন্সল্যাবে আন্দোলন

ছবির উৎস, EPA

ওই হামলার দিন সায়েন্সল্যাব এলাকার প্রধান সড়ক বন্ধ থাকার খবর পেয়ে ধানমন্ডি লেক দিয়ে প্রধান সড়কে যাওয়ার জন্য বের হওয়ার চেষ্টা করেছিলেন তারা।

“ওইদিন পুরা শহরটা থমথমে ছিল, পিন পড়লে সেই আওয়াজও শোনা যাবে এমন। মোড়ে মোড়ে হেলমেট বাহিনী, পুলিশ। সেই খবর অনুযায়ী আমরা ধানমন্ডি লেক দিয়ে বের হচ্ছিলাম। হঠাৎ করে জীবনে প্রথম গুলি বা সাউন্ড গ্রেনেডের আওয়াজ শুনছিলাম আমরা,” বলেন মিজ রায়।

তারপরই হুড়মুড় করে শিক্ষার্থীদের একটা বড় দলকে ছুটে আসতে দেখেন তিনি।

মিজ রায় বলেন, “ওই শিক্ষার্থীদের পেছনে হেলমেট পরে হকিস্টিক, লাঠি নিয়ে ছাত্রলীগ হামলা চালাইতেছে। তখন আমি বুঝতে পারি নাই কেন ছাত্রলীগ অংশগ্রহণ না করে এর বিপরীতে, বিরুদ্ধে দাঁড়াইছে।”

ওইদিন নিরাপদে আশ্রয় নিতে ৪০ থেকে ৫০ জন শিক্ষার্থী তার ধানমন্ডির বাসায় যান বলে জানান মিজ রায়। ওইদিন শিক্ষার্থী ধর্ষণের মতো অনেক গুজব ছড়িয়ে পড়েছিল বলেও জানান তিনি।

পরে রাতে তার বাসায় থাকা শিক্ষার্থীদের তাদের অভিভাবকরা যার যার বাসায় নিয়ে যায়।

সে দিনের ঘটনার ব্যাপারে সে সময় বিবিসি বাংলাকে আওয়ামী লীগের নেতারা বলেছিলেন, হেলমেট পড়া যুবকরা তাদের কর্মী নয় বা তাদের কোনো কর্মী সমর্থক এই হামলা করেনি। এদের কাউকে তারা চেনেন না।

ধানমন্ডি এলাকায় গলির রাস্তায় ওই সময় বুলেট পেয়েছিলেন বলেও জানান আদৃতা রায়।

পোস্টারে স্লোগান নিয়ে আন্দোলন

নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের সময় আলোকচিত্রী শহিদুল আলম বেশ কয়েকবার ফেসবুক লাইভে এসে তখনকার পরিস্থিতি নিয়ে তার মতামত প্রকাশ করেছিলেন।

পাশাপাশি কাতার-ভিত্তিক টেলিভিশন চ্যানেল আল জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ওই আন্দোলনের প্রসঙ্গে সরকারের কঠোর সমালোচনা করেছিলেন তিনি।

পাঁচই অগাস্ট রাতে আন্দোলনে উসকানি দেয়ার অভিযোগে ধানমন্ডির বাসা থেকে গ্রেফতার হয়েছিলেন শহিদুল আলম। তথ্য প্রযুক্তি আইনের একটি মামলায় তাকে রিমান্ডেও নেয়া হয়েছিল।

দৃক গ্যালারির প্রতিষ্ঠাতা শহিদুল আলমের গ্রেফতারের খবরে সেই সময় বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে প্রতিবাদ জানানো হয়েছিল। শহিদুল আলমের রিমান্ড চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে একটি রিটও দায়ের করা হয়েছিল।

আদালত তখন পুলিশের হেফাজত থেকে তাকে দ্রুত হাসপাতালে সরিয়ে নেয়ার নির্দেশ দিয়েছিল।

২০১৮ সালের পাঁচই অগাস্টের ছবি

পরিস্থিতির পরিবর্তন আসলে দৃশ্যমান হয়নি

২০১৮ সালের ২৯শে জুলাই দুইজন শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার খবরে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ার সাতদিন পর প্রথমবারের মতো বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

গণভবনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে অন্তত ছয়বার শিক্ষার্থীদের প্রতি ঘরে ফেরার আহ্বান করেন।

ট্রাফিক সপ্তাহ শুরু হওয়ার কথা জানিয়ে সেদিন তিনি বলেছিলেন, “কারণ আমাদের ছোট বাচ্চারা করেছে, খুব ভালো কথা। কিন্তু এখন আর তাদের দেখার দরকার নেই। তারা যদি কেউ ভলান্টিয়ার করতে চায়, পুলিশকে বলেছি তাদের কাজে লাগাতে পারে।”

“কিন্তু প্রত্যেকটা গাড়ি চেক করা, গাড়ির কাগজ-ফিটনেস দেখা, সবকিছু দেখা, এটা পুলিশের দায়িত্ব। আমরা ট্রাফিক সপ্তাহ চালু করেছি, এটা তারা দেখবে,” বলেছিলেন তিনি।

গুজব ছড়ানোর বিষয়ে কঠোর সমালোচনা করে তিনি বলেছিলেন, “যেহেতু আমরা দেখতে পাচ্ছি একটা শ্রেণি আছে যাদের কাজই হচ্ছে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করা। যারা চেষ্টা করে যাচ্ছে, এমন একটা পরিস্থিতিতে একটা অবস্থান তৈরি করা যায় কিনা।”

আওয়ামী লীগ অফিসে সমানে ঢিল মারা এবং অফিসের ভেতর কর্মীরা আন্দোলনকারীদের ছোড়া ঢিলে আহত হওয়ার অভিযোগও করেছিলেন সেদিন তিনি।

তৎকালীন নৌ -পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান এ দুর্ঘটনার সঙ্গে ভারতের মহারাষ্ট্রে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বাস খাদে পড়ে গিয়ে ৩৩ জন মারা যাওয়ার ঘটনা তুলনা করে সেসময় শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে পড়েন।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা তার পদত্যাগও দাবি করে। আন্দোলন বন্ধ করতে নয় দফা দাবি বেঁধে দেন শিক্ষার্থীরা।

মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে সড়ক আইন পরিবর্তনে সরকারকে বাধ্য করেছিলেন শিক্ষার্থীরা।

পরে বিক্ষোভ শান্ত করতে সরকার দাবি মানাসহ নানা প্রতিশ্রুতি দিলেও অধিকাংশই বাস্তবায়ন হয়নি।

যদিও সড়কে দুর্ঘটনা পরিস্থিতির সেরকম কোনো পরিবর্তন আসলে দৃশ্যমান হয়নি।

গত বছরের পাঁচই অগাস্ট গণ-অভ্যুত্থানের মুখে আওয়ামী লীগের শাসনের পতন হয়।

শিক্ষার্থীদের আন্দোলন

ছবির উৎস, AFP

জুলাই অন্দোলনের অনেকের শুরুটা ছিল নিরাপদ সড়কের আন্দোলনে

লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতিতে অনাগ্রহ থাকা স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের ওই আন্দোলন থেকেই ২০২৪ সালের জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের দিকে অগ্রসর করে নিয়ে গিয়েছিলো বলে মনে করেন শিক্ষার্থী আদৃতা রায়।

কারণ আন্দোলনটি ছিল নেতাবিহীন কিন্তু সুশৃঙ্খল, সংঘবদ্ধ।

সে সময় পুলিশ ও ছাত্রলীগের (বর্তমানে নিষিদ্ধ ছাত্র সংগঠন) প্রশ্নবিদ্ধ ভূমিকাই তার রাজনৈতিক বোধ ও সচেতনতা তৈরি করে বলে মনে করেন মিজ রায়।

“পুলিশকে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা দেখার বিষয়টি আমাদের নিজেদের ‘বড় আই ওপেনার’ ছিল,” মন্তব্য করেন মিজ রায়।

তিনি বা তার বন্ধু ও সেসময়কার শিক্ষার্থীদের জন্য একই অবস্থা বলে মনে করেন তিনি।

“শুধু আমি না আমার অনেক বন্ধুর ২০১৮ এর এই আন্দোলনটা বা ধাওয়া খাওয়া বা মার খাওয়াটা আলটিমেটলি একটা বড় ধাক্কা ছিল। যা আলটিমেটলি আমাদের ২০২৪ এর আন্দোলনে পুশ করেছে,” বলেন মিজ রায়।

ওই সময়কার আন্দোলনকারী স্কুল-কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।

যদিও সে সময় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও কোটা সংস্কার আন্দোলনের আহ্বায়ক শাকিল উজ্জামান এ বক্তব্যের বিরোধিতা করেন।

মি. জামানের মতে, ২০১৮ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলনের ‘ব্যাকআপ সুবিধাই’ নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা পেয়েছিলেন।

“কোটা সংস্কার আন্দোলনের একটা সংগঠিত শক্তি ছিল বিধায় নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের ছাত্রদের পুরা ব্যাকআপ হিসেবে কাজ করতে পারছি। ওই সংগঠিত শক্তি বা কমিউনিটি থাকায় আমরা শিক্ষার্থীদের লিড (নেতৃত্ব) দিছে। ওই কমিউনিটি যদি না থাকতো তবে নিরাপদ সড়ক আন্দোলন সংগঠিত হইতো না,” বলেন মি. জামান।

বর্তমানে গণঅধিকার পরিষদের উচ্চতর পরিষদ সদস্য মি. জামান।

এদিকে, রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মোহাম্মদ মজিবুর রহমান অবশ্য মনে করেন, এককভাবে নিরাপদ সড়ক আন্দোলন জুলাই গণঅভ্যুত্থানের জন্ম দেয়নি।

বরং ওই আন্দোলন শিক্ষার্থীদের মাঝে রাজনৈতিক সচেতনতা, ন্যায্য প্রাপ্য আদায় ও অধিকারবোধের জন্ম দেয়।

“এককভাবে বলা যাবে না নিরাপদ সড়ক আন্দোলন জুলাই অভ্যুত্থানের জন্ম দিয়েছে। কিছুটা প্রভাব তো ছিলই। কিন্তু প্রযুক্তির উৎকর্ষতার সাথে সাথে শিক্ষার্থীদের মাঝে অধিকার বোধ, রাজনৈতিক সচেতনতার জন্ম হয়। মূলত নিজের প্রাপ্য অধিকার নিয়ে সচেতনতার বোধ তৈরি হয় সেসময় তাদের,” বলেন মি. রহমান।

দীর্ঘদিন মত প্রকাশের স্বাধীনতা না থাকা, ভোটের অধিকার থেকে বঞ্চিত হওয়ার ফলে মূলত নিরাপদ সড়ক আন্দোলনে অধিকার সচেতনতা তৈরি হয় বলে মনে করেন মি. রহমান।