Home LATEST NEWS bangla সর্বশেষ সংবাদ ইসরায়েলের হামলায় গাজায় চিকিৎসক মায়ের ৯ শিশু সন্তান নিহত

ইসরায়েলের হামলায় গাজায় চিকিৎসক মায়ের ৯ শিশু সন্তান নিহত

4
0

Source : BBC NEWS

মৃতদেহ সরাচ্ছে সিভিল ডিফেন্সের সদস্যরা

ছবির উৎস, Getty Images

এক ঘন্টা আগে

গাজায় একটি বাড়িতে ইসরায়েলের বিমান হামলায় একজন নারী চিকিৎসকের দশ শিশু সন্তানের মধ্যে ৯ জনই মারা গেছে।

ওই চিকিৎসক খান ইউনিসের নাসের হাসপাতালে কাজ করতেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে ডাঃ আলা আল-নাজ্জারের স্বামী ও তাদের এক সন্তান আহত অবস্থায় বেঁচে গেছে।

ওই হাসপাতালের চিকিৎসক ব্রিটিশ সার্জন গ্রায়েমে গ্রুম বিবিসিকে বলেছেন, এটি অসহনীয় নিষ্ঠুরতা, বহু বছর ধরে শিশুদের জন্য কাজ করা একজন চিকিৎসক তার প্রায় সব সন্তান হারিয়েছেন।

ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী বলেছে, তারা শুক্রবার খান ইউনিসে সন্দেহভাজন কিছু জায়গায় বিমান হামলা চালিয়েছে।

একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, ধ্বংসস্তূপ থেকে পোড়া দেহ উদ্ধার করা হচ্ছে। বিবিসি ছবিটির সত্যতা যাচাই করেছে।

আইডিএফ বলছে, খান ইউনিস একটি বিপজ্জনক যুদ্ধ এলাকা। অভিযান শুরুর আগে ওই এলাকা থেকে বেসামরিক নাগরিকদের সরিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে দাবি করেছে তারা।

শনিবার এক বিবৃতিতে আইডিএফ বলেছে, গাজায় একশরও বেশি টার্গেটে তারা হামলা করেছে।

বিবিসি বাংলায় আরও পড়ুন:
দশ সন্তানের মধ্যে বেঁচে থাকা একমাত্র শিশু আদম (১১)

ছবির উৎস, Al-Najjar family

এতে ৭৪ জন নিহত হয়েছে বলে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় দাবি করেছে।

মন্ত্রণালয়ের ডিরেক্টর ডাঃ মুনির আলবোরশ সামাজিক মাধ্যম এক্স এ জানিয়েছেন, আল-নাজ্জারের স্বামী তাকে কর্মস্থলে নামিয়ে বাসায় ফেরার পরপরই হামলাটি হয়।

তাদের সবচেয়ে বড় সন্তানের বয়স ছিলো ১২ বছর। শিশুদের বাবা নিজেও একজন চিকিৎসক, যিনি মারাত্মক আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন মি. গ্রুম।

তিনি বলেন, শিশুদের বাবার কোন রাজনৈতিক বা সামরিক যোগসূত্র তো নয়ই, এমনকি তিনি সামাজিক মাধ্যমেও খুব একটা পরিচিত নন।

মি. গ্রুম বলেন, ওই দম্পতির যে সন্তানটি বেঁচে আছে তার বয়স ১১। “তার বাঁ হাত প্রায় ঝুলে ছিলো,” তিনি বিবিসিকে বলছিলেন।

“যেহেতু তার বাবা মা দুজনেই চিকিৎসক সে কারণে হয়তো গাজার সুবিধা পাওয়াদের মধ্যে সে একজন। কিন্তু অপারেশনের টেবিলে সে নিজেকে ১১ বছরেরও চেয়ে ছোট ভাবছিলো”।

“আমাদের ছোট ছেলেটি হয়তো বাঁচবে কিন্তু তার বাবার অবস্থা আমরা জানি না,” বলছিলেন তিনি।

গাজার সিভিল ডিফেন্সের মুখপাত্র মাহমুদ বাসাল শুক্রবার টেলিগ্রামে জানিয়েছেন, হামলার পর আল-নাজ্জারের বাসা থেকে তারা আটটি মৃতদেহ ও আহত কয়েকজনকে উদ্ধার করেছেন।

প্রাথমিকভাবে হাসপাতাল থেকে আট শিশুর মৃত্যুর খবর দেওয়া হয়েছিলো। দুই ঘণ্টা পর জানানো হয় যে, মোট নয়টি শিশু মারা গেছে সেখানে।

গাজায় খাদ্য সংকট তীব্র হয়েছে, দুর্ভিক্ষের ঝুঁকি তৈরি হয়েছে বলে সতর্ক করেছে জাতিসংঘ

ছবির উৎস, EPA

আরেকজন চিকিৎসক ইউসেফ আবু আল-রিশ জানিয়েছেন, আল-নাজ্জারের পরিবারের পাশে দাঁড়াতে তিনিও অপারেশন রুমে এসেছিলেন। তাদের মধ্যে আত্মীয়তার সম্পর্ক রয়েছে।

বার্তা সংস্থা এএফপিকে তিনি বলেছেন: “যথেষ্ট হয়েছে। আমাদের দয়া করুন। আমরা সব দেশ, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, জনগণ, হামাস এবং অন্য সবাইকে অনুরোধ করছি আমাদের ক্ষমা করুন। ঘরবাড়ি হারিয়ে, ক্ষুধায় আমরা বিপর্যস্ত”।

শুক্রবার জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, গাজা যুদ্ধ ‘সবচেয়ে নিষ্ঠুর অধ্যায়ে’ আছে এখন। ত্রাণ কার্যক্রমের ওপর ইসরায়েলের অবরোধের নিন্দা করেছেন তিনি।

ইসরায়েল চলতি সপ্তাহে অবরোধ কিছুটা তুলে নিয়েছে। দেশটির একটি সামরিক সংস্থা বলছে শুক্রবার ৮৩টি ট্রাকে করে খাবার ও ঔষধসহ জরুরি পণ্য গাজায় গেছে।

জাতিসংঘ বারবার বলছে, যে পরিমাণ ত্রাণ যাচ্ছে তা ওই ভূখণ্ডের ২১ লাখ মানুষের প্রয়োজনের তুলনায় কিছুই নয়। তাদের মধ্যে প্রতিদিন ৫-৬শ ট্রাকের ত্রাণ নিয়ে যাওয়া দরকার।

অল্প পরিমাণ খাদ্যের কারণে গাজায় নৈরাজ্যময় পরিস্থিতি দেখা যাচ্ছে। ত্রাণবহরে সশস্ত্র হামলা হচ্ছে এবং রুটির জন্য দোকানে হামলে পড়ছে মানুষ।

জাতিসংঘ চলতি মাসেই একটি দুর্ভিক্ষের ঝুঁকির কথা জানিয়েছে। সেখানকার অনেক মানুষ বিবিসিকে বলেছে, তাদের খাবার নেই এবং ক্ষুধাক্রান্ত অপুষ্ট মায়েরা তাদের শিশু সন্তানদের মাতৃদুগ্ধ পান করাতে পারছেন না।

পানির সংকট তীব্রতর হয়েছে। আবার অভিযান অব্যাহত খাকায় বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যাও বাড়ছে।

ইসরায়েলের দাবি হলো, হামাসের ওপর চাপ বাড়াতে তারা এ হামলা করছে।

এছাড়া হামাস মানবিক সহায়তা চুরি করছে এমন অভিযোগও করেছে ইসরায়েল।