Source : BBC NEWS

ছবির উৎস, Chief Adviser’s Press Wing
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা
খলিলুর রহমান বলেছেন, বাংলাদেশ ‘করিডর’ নিয়ে কারও সাথে আলোচনা করেনি। কিন্তু বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে ত্রাণ সরবরাহের একটি ‘চ্যানেল’ তৈরির জাতিসংঘের প্রস্তাব বাংলাদেশ
বিবেচনা করছে।
বুধবার দুপুরে ঢাকার ফরেন সার্ভিস একাডেমিকে একটি সংবাদ
সম্মেলনে এসব কথা বলেন অন্তর্বর্তী সরকারের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ও প্রধান
উপদেষ্টার রোহিঙ্গা বিষয়ক হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ খলিলুর রহমান। সেই সময় তিনি সাংবাদিকদের
বিভিন্ন প্রশ্নেরও উত্তর দেন।
খলিলুর রহমান বলেন, ”জাতিসংঘের যে কার্যক্রম মিয়ানমারে চলছে,
সেটা রাখাইনে আর চলা সম্ভব না। কারণ যুদ্ধাবস্থার কারণে মানবিক ত্রাণ রাখাইনে নিয়ে
যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। গত মার্চ মাসে জাতিসংঘের মহাসচিব বাংলাদেশে এসে বলেছিলেন, রাখাইনের
ত্রাণ সাহায্য দিতে পারি কি-না। আমরা বিষয়টা বিবেচনা করছি। কিন্তু এতে বেশ কিছু আবশ্যকতা
আছে।”
তিনি জানান, জাতিসংঘের তরফ থেকে আরাকান আর্মিকে জানানো হয়েছে, এই
সাহায্য বা সহায়তা প্রাপ্তি বা বিতরণের ব্যাপারে কোনোরকম প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা
যাবে না। কাউকে বঞ্চিত করা যাবে না। যুদ্ধের কাজে ব্যবহার করা যাবে না।
”আর আমাদের তরফ থেকে শঙ্কা হচ্ছে, আরাকানের যে নতুন রাজনৈতিক,
প্রশাসনিক ও নিরাপত্তামূলক প্রশাসন তৈরি হয়েছে, সেখানে আমরা রোহিঙ্গাদের অংশগ্রহণের
চিহ্ন দেখছি না। আমরা আরাকান আর্মিকে সরাসরি বলেছি, আমরা কোনোরকম অ্যাথনিক ক্লিনজিং (জাতিগত নির্মূল অভিযান) সহ্য করবো না। তাদের বলেছি, তারা যদি শুধু রাখাইনদের নিয়ে রাজ্য পরিচালনা করতে চায়,
তাহলে তারা হবে একটি বর্ণবাদী রাষ্ট্র।”
তিনি বলেন, ”বাংলাদেশ মনে করে এই সমস্যার একমাত্র সমাধান হচ্ছে, রোহিঙ্গাদের
প্রত্যাবাসন করা। এই কাজ করার সবগুলো অপশন আমাদের টেবিলে থাকবে। আমাদের সকল
কূটনৈতিক ও অন্যান্য প্রচেষ্টা দিয়ে এই সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করবো। আমরা এই সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধান করতে চাই।”
জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান বলেন, ”জাতিসংঘের সাহায্য নিয়ে বাংলাদেশে একটি করিডর
দেয়ার যে গুজব তৈরি হয়েছে, আমি দ্ব্যর্থহীনভাবে বলে দিচ্ছি, করিডর নিয়ে আমাদের
সাথে কারো কোনও কথা হয়নি এবং কারো সাথে কোনও কথা হবে না।”
”আমরা কাউকে করিডর দিচ্ছি না।
আমরা যেটা করছি, যেহেতু আরাকানে কোনও সাহায্য-সহযোগিতা, এইড উপকরণ অন্য কোনও সাপ্লাই
রুট দিয়ে দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। জাতিসংঘ আমাদের বললো, কিছুটা দূরে তো বর্ডার। আপনার এইটুকু
আমাদের সাহায্য করবেন, যাতে আমরা ওপারে নিয়ে যেতে পারি। জাতিসংঘ তার বিভিন্ন সহযোগীদের
মাধ্যমে রাখাইনের ভেতরে যেসব চ্যানেল আছে, সেটা ব্যবহার করে রাখাইনের জনগণের কাছে
মানবিক সাহায্য পৌছে দেবেন,” তিনি বলেন।
খলিলুর রহমান বলেন, ”আমরা করিডর নিয়ে কারো সাথে কোনও ধরনের কথা বলি নাই এবং কথা
বলবো না। আরাকানের যে অবস্থা, তাতে করিডরের কোনও প্রয়োজন নেই। করিডর সৃষ্টি করে লোকজনের
যাতায়াতের ব্যবস্থা করার কোনও প্রয়োজনীয়তা এখন নেই। যেটা প্রয়োজন আছে, সেটা হলো ত্রাণ সরবরাহ করা”।
”এটা করতে পারলে সেখানকার পরিস্থিতি কিছুটা স্থিতিশীল হবে এবং সেই অবস্থায় রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন নিয়ে আলোচনা করতে পারবো। আরাকানের অবস্থা যতদিন অস্থিতিশীল থাকবে, ততদিন আমরা প্রত্যাবাসন নিয়ে কথা বলতে পারবো না। আর প্রত্যাবাসনের কথা বলতে না পারলে প্রত্যাবাসন কৌশলের কথাও বলতে পারবো না,” বলেন খলিলুর রহমান।
রাখাইনে নিয়ে যাওয়ার পরে ব্যবস্থাপনা কীভাবে হবে, এই প্রশ্নের জবাবে খলিলুর রহমান বলেন, ”পুরো কন্ট্রোল থাকবে
জাতিসংঘের, ওপারে নিয়ে যাওয়ার পরে সেখানকার নিরাপত্তা, সবকিছু তাদের দায়িত্ব। আমাদের
দায়িত্ব সীমান্ত পর্যন্ত, সেখানে মাদক পাচার হচ্ছে কিনা, অন্য কিছু হচ্ছে কিনা,
সেটা আমরা দেখবো। দু্ই পক্ষ সম্মত হলে, কনফ্লিট কমলেই শুধু আমরা যাবো।”
ত্রাণ সরবরাহের সুযোগ দেওয়া হলে কোন রুটে সেটা হতে পারে, এমন
প্রশ্নের জবাবে মি. রহমান বলেন, ”দুই পক্ষ, সকল পক্ষ যদি রাজি হয়, তাহলে আমরা সবার
সঙ্গে বসে সেটা ঠিক করবো। এটা কেবলমাত্র সরকারের নয়, সকল অংশীজনের সাথে বসে আমরা
সেটা ঠিক করবো। এখনো সেই পর্যায়ে আমরা যাইনি।”
করিডর ইস্যুতে সেনাবাহিনীর সাথে কোনও মতপার্থক্য তৈরি হয়েছে
কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ”সেনাবাহিনীর সাথে কোনও মতপার্থক্য নেই।
সেনাপ্রধানের সাথে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। এ নিয়ে আমরা এক সমতলে অবস্থান করছি। এ
নিয়ে কোনও ফাঁকফোকর নেই।”
তিনি বলেন, ”পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাথে সমন্বয়হীনতার সুযোগ নেই, আর
সেনাবাহিনীর সাথে আমি খুব ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছি।”
গত ২৭শে এপ্রিল পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলেছিলেন, জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে শর্ত সাপেক্ষে মিয়ানমারের বেসামরিক লোকজনের জন্য করিডর দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
সেই প্রসঙ্গে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান বলেন, ”ফরেন অ্যাডভাইজারের সাথে আমার রোজ কথা হয়। উনি করিডর শব্দটা বলেই কিন্তু সেটা কারেক্ট করেছিলেন, উনি পাথওয়ে বলেছিলেন। সেটা ছিল স্লিপ অব ট্যাং, সেটা পরে কারেক্ট করেছিলেন, উনি কিন্তু পরে সেটা আর কখনোই বলেননি।”
যুক্তরাষ্ট্রের চাপের কারণে সরকার এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে
কিনা, “এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমেরিকা কেন, আমরা কারও চাপের মুখে নেই। কেউ
চাপ দিচ্ছে না। যুক্তরাষ্ট্র, চীন, সবার সাথে কথা বলছি। তাহলে (চাপ) যেটা নেই, সেটা তো আমি
অনুভব করতে পারছি না।”

ছবির উৎস, Chief Adviser’s Press Wing