Home LATEST NEWS bangla সর্বশেষ সংবাদ ‘আমার বাসা পুরোপুরি গুঁড়িয়ে দিয়েছে’ বিবিসিকে বললেন তেহরানে বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তা

‘আমার বাসা পুরোপুরি গুঁড়িয়ে দিয়েছে’ বিবিসিকে বললেন তেহরানে বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তা

2
0

Source : BBC NEWS

তেহরানের আবাসিক এলাকায় ইসরায়েলি হামলার পর উদ্ধার তৎপরতা চালানো হচ্ছে

ছবির উৎস, EPA

ইরানের রাজধানী তেহরানে সোমবার ইসরায়েলের হামলায় সেখানকার বাংলাদেশ দূতাবাসে কর্মরত কর্মকর্তাদের বাসভবনও আক্রান্ত হয়েছে। এর মধ্যে অন্তত একজন কর্মকর্তার বাড়িঘর ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে। তবে হামলার সময় ওই কর্মকর্তা বাড়িতে না থাকায় প্রাণে বেঁচে গেছেন।

“আমার বাসা পুরোপুরি গুঁড়িয়ে দিয়েছে,” বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন ভুক্তভোগী দূতাবাস কর্মকর্তা ওয়ালিদ ইসলাম।

তেহরানে বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তারা মূলত জর্ডান নামের একটি এলাকায় বসবাস করেন, যেটি পড়েছে তেহরানের তিন নম্বর জেলায়।

ওই এলাকায় ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন ভবনসহ বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা রয়েছে, যেগুলোতে সোমবার ঘোষণা দিয়ে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল।

হামলার আগে বাসিন্দাদের সরে যেতে বলা হয়। এতে প্রাণহানি কিছুটা কম হলেও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অসংখ্য স্থাপনা।

“আমাদের আশপাশে এখন আর কিছুই নাই। কেবল কূটনীতিকদের কয়েকটি বাড়ি টিকে আছে, কিন্তু আশপাশে কিছুই নাই,” বলেন ইরানে বাংলাদেশি দূতাবাসের ফার্স্ট সেক্রেটারি ওয়ালিদ ইসলাম।

সোমবার দুপুরে তেহরানের তিন নম্বর জেলায় ইসরায়েলি সেনারা হামলার ঘোষণা দেওয়ার পর সেখানকার বাংলাদেশ মিশনে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ বাংলাদেশি নাগরিকদের সবাইকে ওই এলাকা থেকে সরে যাওয়ার নির্দেশ দেয় ঢাকা।

এরপর তেহরানে অবস্থিত বাংলাদেশের দূতাবাস কমপ্লেক্স ছেড়ে যান সেখানকার কর্মীরা। যদিও বর্তমানে তারা তেহরানের অন্য এলাকায় অবস্থান করছেন।

কিন্তু ইসরায়েলি হামলার ব্যাপ্তি ক্রমেই বাড়তে থাকায় এখন নাগরিকদের তেহরানের বাইরে সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

“আমরা তাদের নিয়ে উদ্বিগ্ন, যারা তেহরানে আছে। তারা হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কার মধ্যে আছে। তাদের এবং আমাদের দূতাবাসে যারা কাজ করছেন, তাদের জন্য এখন কাজ করছি, যাতে এরা নিরাপদে থাকতে পারে,” মঙ্গলবার বিকেলে ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র সচিব রুহুল আলম সিদ্দিক।

তেহরানে বর্তমানে যে চারশ’র মতো বাংলাদেশি অবস্থান করছেন, তারা সবাই অক্ষত রয়েছেন বলে জানিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

আরও পড়তে পারেন:
কূটনীতিক ওয়ালিদ ইসলাম

‘আমাদের বাঁচান’

ইরানে টানা পঞ্চম দিনের মতো হামলা অব্যাহত রেখেছে ইসরায়েল। একের পর এক বোমা বিস্ফোরণে কেঁপে উঠছে তেহরান।

এ অবস্থায় জীবন বাঁচাতে দলে দলে রাজধানী ছাড়ছেন ইরানের বাসিন্দারা। এতে গত কয়েকদিন ধরেই রাস্তায় তীব্র যানজট সৃষ্টি হতে দেখা যাচ্ছে।

এদিকে, অসংখ্য মানুষ গাড়িতে করে শহর ছাড়তে যাওয়ায় পেট্রোল পাম্পগুলোতেও জ্বালানি তেলের সংকট তৈরি হয়েছে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করেও অনেকে তেল পাচ্ছেন না।

এমন পরিস্থিতিতে তেহরান থেকে বের হওয়ার জন্য বাংলাদেশ মিশনের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন সেখানে অবস্থানরত অনেক বাংলাদেশি।

“অনেকেই ফোন দিয়ে কান্নাকাটি করছেন। বলছেন, এখানকার পরিস্থিতি ভালো না ভাই, আমাদের বাঁচান,” বিবিসি বাংলাকে বলেন তেহরানে নিযুক্ত বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তা ওয়ালিদ ইসলাম।

তেহরানের বাইরেও কিছু কিছু শহরে হামলার ঘটনা ঘটেছে। ফলে সেসব জায়গা থেকে অনেকে যোগাযোগ করে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়ার জন্য আকুতি জানাচ্ছেন কর্মকর্তাদের কাছে।

“যেমন, বন্দর আব্বাসে হামলার ঘটনা ঘটেছে। সেখানকার পরিস্থিতিও খারাপ। ফলে ওই এলাকা থেকেও অনেকে ফোন দিচ্ছেন, আর কান্নাকাটি করছেন। এই আর্তনাদ আসলে সহ্য করা যায় না,” বলেন মি. ইসলাম।

বেড়াতে গিয়ে ইরানে আটকে পড়েছেন বাংলাদেশি চিকিৎসক ইকরাম আর আজিজুর রহমান

ছবির উৎস, Ikram R Azizur Rahman

চিকিৎসা করাতে গিয়ে আটকা

বাংলাদেশ থেকে প্রায় ২০ জন মানুষ সম্প্রতি চিকিৎসার উদ্দেশ্যে তেহরানে যান।

“মূলত তারা কিডনি ট্রান্সপ্লান্টেশনের জন্য এখানে এসেছিলেন,” বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তা মি. ইসলাম।

তেহরানে যাওয়ার পর থেকে তারা শহরের বিভিন্ন এলাকায় অবস্থান করছিলেন।

কিন্তু গত শুক্রবার ইরান-ইসরায়েল সংঘাত শুরু হওয়ার পর তাদের হাসপাতাল এলাকায় অবস্থান করার পরামর্শ দেন বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তারা।

“এসময় হাসপাতাল নিরাপদ হবে ভেবেই আমরা এই পরামর্শ দিয়েছিলাম। কিন্তু গত পরশুদিন হসপিটালেই আক্রমণ হয়েছে,” বলেন মি. ইসলাম।

এ ঘটনায় রোগিদের সবাই আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন বলে জানান দূতাবাসের এই কর্মকর্তা।

“তাদেরকে শান্ত করার জন্য আমি সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছি। কীভাবে তাদেরকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া যায়, সেই চেষ্টাও চলছে,” বলেন ওয়ালিদ ইসলাম।

এর বাইরে বেড়াতে গিয়েও কেউ কেউ আটকা পড়েছেন। তেমনই একজন বাংলাদেশি চিকিৎসক ইকরাম আর আজিজুর রহমান।

তার স্ত্রী একজন ইরানি নাগরিক। গত মে মাসে তারা ইরানের মাটিতে পা রাখেন। বাংলাদেশে ফেরার কথা ছিল গত ১৫ই জুন।

“কিন্তু এর মধ্যেই যুদ্ধ শুরু হয়ে যাওয়ায় ১৫ তারিখে ফেরা সম্ভব হয়নি। কবে ফিরতে পারবো, সেটাও বুঝতে পারছি না,” বিবিসি বাংলাকে বলেন ডা. রহমান।

ইরানের বাংলাদেশিদের অবস্থান নিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সংবাদ ব্রিফিং

ছবির উৎস, BSS

সরিয়ে কোথায় নেওয়া হচ্ছে?

বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন সময় পড়াশোনা, ব্যবসা-বাণিজ্য, চাকরিসহ নানান কারণে বহু বাংলাদেশি ইরানে পাড়ি জমিয়েছেন।

সরকারি হিসেবে, বর্তমানে দেশটিতে অবস্থানরত বাংলাদেশি নাগরিকের সংখ্যা প্রায় দুই হাজার।

“এই দুই হাজার বাংলাদেশির মধ্যে চারশ’ জনের মতো তেহরানে রয়েছেন,” মঙ্গলবারের ব্রিফিংয়ে বলেন ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র সচিব রুহুল আলম সিদ্দিক।

জরুরি প্রয়োজনে তারা যেন যোগাযোগ করতে পারেন, সেজন্য ‘হটলাইন’ চালু করেছে তেহরানস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস।

সেইসঙ্গে, ঢাকাতেও আরেকটি হটলাইন চালু করা হয়েছে।

“ইতোমধ্যেই প্রায় একশ জন দূতাবাস ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের হটলাইনে যোগাযোগ করে নিরাপদ স্থানে যাওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন,” সাংবাদিকদের বলেন মি. সিদ্দিক।

মানচিত্রে ইরান ও ইসরায়েল

তাদের সঙ্গে দূতাবাসের ৪০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

কিন্তু তাদেরকে কোথায় নেওয়া হবে?

“আপাতত সবাইকে ভারামিনে সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। আর বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের তেহরানের পাশে সাবেতে রাখার ব্যবস্থা করছি,” বিবিসি বাংলাকে বলেন দূতাবাসের কর্মকর্তা ওয়ালিদ ইসলাম।

যদিও ভারামিন শহরও তেহরানেই অবস্থিত। ফলে পরবর্তীতে সেখানেও হামলা হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন অনেকে।

তেমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে নাগরিকদের দেশে ফিরিয়ে আনা হতে পারে বলে জানাচ্ছেন কর্মকর্তারা।

“এখন সেটা করা সম্ভব হচ্ছে না, কারণ ইরানে বিমান চলাচল বন্ধ রয়েছে। এর মধ্যে যদি একদিনের জন্যও যুদ্ধবিরতি দেয়, তখনই আমরা সবাইকে ইরানের বাইরে পাঠানোর চেষ্টা করবো,” বলেন মি. ইসলাম।

কিন্তু কতদিন নাগাদ সেই সুযোগ সৃষ্টি হতে পারে, সেটি এখনও সুনির্দিষ্ট করে বলতে পারছেন না দূতাবাসের কর্মকর্তারা।