Source : BBC NEWS

৩৭ মিনিট আগে
বাংলাদেশে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবিতে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের বাসভবন যমুনার সামনে শুক্রবার সকালেও একইভাবে অবস্থান নিয়ে আছেন জাতীয় নাগরিক পার্টি বা এনসিপি’র নেতা-কর্মীরা।
দুপুরে জমায়েতের ডাক দিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ।
প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার সামনের সড়কে ফোয়ারার সামনে এই জমায়েতের ডাক দেয়া হয়েছে। সেখানে মঞ্চ নির্মাণের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।
দল মত নির্বিশেষে সবাইকে এই জমায়েতে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানান এই এনসিপি নেতা।
হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে স্পষ্ট ভাষায় বলতে চাই, যতক্ষণ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের নিবন্ধন বাতিল করে তাদের নিষিদ্ধ না করা হবে ততক্ষণ আমরা রাজপথ ছাড়ব না।’
আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবিতে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার সামনে বৃহস্পতিবার রাত ১০টা থেকে অবস্থান নেয় এনসিপির শতাধিক নেতাকর্মী।
এরপর রাত ১টার দিকে মিছিল নিয়ে যমুনার সামনে এসে অবস্থান কর্মসূচিতে যোগ দেন এনসিপি’র আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। তার সঙ্গে দলের কেন্দ্রীয় নেতারাও ছিলেন।
এদিকে এ অবস্থান ঘিরে যমুনার সামনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অতিরিক্ত সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।
রমনা থানার কর্তব্যরত পুলিশ কর্মকর্তা মেহেদী হাসান সিয়াম সকাল ৮টায় বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, “তারা সারারাত এখানে ছিল। এখনও আছে এবং সকাল থেকে এই ভিড় আবার বাড়তেছে।”
তিনি বলেন, “রাতে অনেকে চলে গেছিলো। এখন শ’খানেকের মতো আছে।”
সেখান থেকে ঘোষণা করা হয়, আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা ও এর নেতাদের বিচারের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ না দেওয়া পর্যন্ত তাদের আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।
রাতে এনসিপির এই কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে যমুনামুখী ও এর চারপাশের রাস্তায় সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। তবে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের এনসিপির কর্মসূচিতে যোগ দিতে মিছিল নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে পুলিশ বাধা দেয়নি।

কেন এই অবস্থান কর্মসূচি?
আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা ও ছাত্র-জনতার আন্দোলনে হত্যাকাণ্ডের বিচার দ্রুত করার দাবিতেই এই অবস্থান কর্মসূচি পালন করছে এনসিপি।
গতকাল রাত দুইটার দিকে নাহিদ ইসলাম তার সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে বলেন যে ক্ষমতাগ্রহণের পর অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম দায়িত্ব ছিল আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা।
“আমরা সরকারের বাইরে এবং ভেতরে সেই দাবি বলেছি। কিন্তু আজকে নয় মাস পরেও আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের জন্য আমাদের আবার রাজপথে নামতে হয়েছে।”
তার বক্তব্যের আগে তিনি মাইকে স্লোগান দেন– ‘ব্যান করো ব্যান করো, আওয়ামী লীগকে ব্যান করো’, ‘আমার ভাই কবরে, খুনি কেন বাইরে’ এবং ‘ওয়ান টু থ্রি ফোর, আওয়ামী লীগ নো মোর’।
নাহিদ ইসলাম তার ভেরিফায়েড অফিশিয়াল ফেসবুক প্রোফাইলে সবাইকে যমুনার সামনে একত্রিত হওয়ার আহ্বান জানিয়ে গতকাল রাতে লেখেন, “ফ্যাসিস্ট ও খুনি আওয়ামী লীগের বিচার নিয়ে টালবাহানা হচ্ছে। আওয়ামী লীগের নিবন্ধন বাতিল ও নিষিদ্ধের ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে না। আসামিদের জামিন দিয়ে দেওয়া হচ্ছে।”
“জুলাইয়ে আমাদের প্রতিশ্রুতি ছিল খুনিদের বিচার। এবং মুজিববাদীরা বাংলার মাটিতে আর কখনও রাজনীতি করতে পারবে না। আজ রাতেই ফয়সালা হবে আওয়ামী লীগের বিষয়ে।”
আওয়ামী লীগের বিচার, নিবন্ধন বাতিল ও রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধের সুস্পষ্ট রোডম্যাপ না আসা পর্যন্ত আমরা রাজপথ থেকে উঠবেন না বলেও ঘোষণা দেন এনসিপি প্রধান।

ছবির উৎস, Facebook/Hasnat Abdullah
হঠাৎ কেন এমন কর্মসূচি
যদিও হঠাৎ করে এখন এ ধরনের কর্মসূচি নেওয়ার ক্ষেত্রে এনসিপির নেতাদের অনেকে সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের দেশত্যাগের ঘটনাকে তুলে ধরছেন।
নাহিদ ইসলাম তার ফেসবুক পোস্টে বর্তমান সরকারের উদ্দেশে লিখেছেন, “অবৈধ ফ্যাসিস্ট সরকারের রাষ্ট্রপতিকে চোখের সামনে পালিয়ে যেতে দেওয়া হয়েছে। (আওয়ামী লীগের) বিচার প্রশ্নে সরকারের প্রতি আমাদের অনাস্থার জায়গা তৈরি হইছে।”
কিন্তু দলটির নেতাদের কেউ কেউ অনানুষ্ঠানিক আলােচনায় ভিন্ন প্রেক্ষাপটের কথাও বলছেন।
তাদের কথায়, বৈষম্যবিরােধী ছাত্র নেতৃত্বের বেরিয়ে যাওয়া একটি অংশের নতুন একটি প্ল্যাটফর্ম আত্মপ্রকাশ করতে যাচ্ছে, এ বিষয় বিবেচনায় নিয়ে এনসিপি’র নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ ও উজ্জীবিত রাখাও তাদের লক্ষ্য।
এনসিপি গঠনের শুরুতেই বৈষম্যবিরােধী ছাত্র আন্দােলনের নেতৃৃত্বের একটা অংশ বেরিয়ে যান। এটি ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক নেতাদের অংশ হিসেবে পরিচিত।
এখন ছাত্রশিবিরের সাবেক নেতা আলী আহসান জুনায়েদের নেতৃত্বে ইউনাইটেড পিপলস বাংলাদেশ বা আপ বাংলাদেশ নামের নতুন একটি প্লাটফর্ম গঠন করেছেন।
সেই নতুন প্লাটফরম আজ শুক্রবার ঢাকায় শহীদ মিনারে এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আত্মপ্রকাশ করতে যাচ্ছে। এর আগের দিনে এনসিপি যমুনার সামনে অবস্থান কর্মসূচি নিয়েছে।

‘নিষিদ্ধ হচ্ছে যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগ’
এনসিপি’র অবস্থান কর্মসূচি শুরুর আগমুহূর্তে রাত পৌনে দশটার দিকে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া ফেসবুকে একটি পোস্ট দেন।
তাতে তিনি ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগ নিষিদ্ধ হতে যাচ্ছে বলে জানান।
পোস্টে তিনি লিখেন, সপ্তাহখানেক আগেই প্রক্রিয়াটি শুরু হয়েছে। সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে বিষয়টি এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে আছে।
তবে এ প্রসঙ্গে হাসনাত আব্দুল্লাহ আবার ফেসবুকে ঘোষণা দিয়েছেন, “যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবকলীগ নিষিদ্ধ করার প্রহসন মেনে নেওয়া হবে না।”
“আওয়ামী লীগকে সন্ত্রাসী ও ফ্যাসিস্ট সংগঠন হিসেবে ঘোষণা করে নিষিদ্ধ করতে হবে। আইসিটিতে দল হিসেবে বিচার করার বিধান যুক্ত করতে হবে।”