Home LATEST NEWS bangla সর্বশেষ সংবাদ সামাজিক মাধ্যমে ‘পাকিস্তানপন্থি’ পোস্টের অভিযোগে ভারতে গ্রেফতার শতাধিক মানুষ

সামাজিক মাধ্যমে ‘পাকিস্তানপন্থি’ পোস্টের অভিযোগে ভারতে গ্রেফতার শতাধিক মানুষ

4
0

Source : BBC NEWS

অধ্যাপক আলি খান মাহমুদাবাদকে বুধবার জামিন দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট - ফাইল ছবি

ছবির উৎস, Prof. Ali Khan Mahmudabad

এক ঘন্টা আগে

ভারত-পাকিস্তান সংঘর্ষ চলাকালীন সেনাবাহিনীর মুখপাত্র কর্নেল সোফিয়া কুরেশিকে নিয়ে একটি মন্তব্য করার কারণে দিল্লির যে অধ্যাপককে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ, তাকে বুধবার সুপ্রিম কোর্ট অন্তর্বর্তীকালীন জামিন দিয়েছে।

ভারতের নামকরা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় – অশোকা ইউনিভার্সিটির রাজনীতি বিজ্ঞানের ওই অধ্যাপকের নাম আলি খান মাহমুদাবাদ।

সংঘর্ষের মধ্যেই আটই মে এক পোস্টে অধ্যাপক আলি খান লেখেন, “কর্নেল সোফিয়া কুরেশির প্রশংসা করছেন অনেক দক্ষিণপন্থি ভাষ্যকার, এটা দেখে আমি খুশি। তবে এরা যদি একইভাবে গণপিটুনি, নির্বিচারে বুলডোজার চালানো এবং বিজেপির ঘৃণা ছড়ানোর শিকার হওয়া মানুষদের হয়েও আওয়াজ তুলতেন যাতে এই মানুষগুলো ভারতের নাগরিক হিসেবে নিরাপত্তা পায়।”

সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করা এই মন্তব্যের কিছু শব্দ বিচার-বিবেচনা করে দেখার জন্য সিনিয়র পুলিশ কর্মকর্তাদের দিয়ে একটি বিশেষ তদন্ত দল গঠন করার কথাও বলেছে সুপ্রিম কোর্ট।

গত ১৮ই মে হরিয়ানা পুলিশ মি. খানকে গ্রেফতার করে।

তবে অধ্যাপক আলি খান একা নন, পহেলগামের হত্যাকাণ্ড এবং তারপরে পাকিস্তানের সঙ্গে সংঘর্ষের আবহাওয়ায় একশোরও বেশি মানুষকে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে গ্রেফতার করা হয়েছে পাকিস্তানের সমর্থনে সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করার কারণে।

বিবিসি বাংলায় আরও পড়তে পারেন
উত্তর প্রদেশের বদায়ুঁ জেলায় এক ধৃত

ছবির উৎস, X/BUDAUNPOLICE

দুটি রাজ্যে ১০০-র বেশি গ্রেফতার

অনেক রাজ্য থেকেই গ্রেফতারির খবর পাওয়া গেলেও সব থেকে বেশি মানুষ গ্রেফতার হয়েছেন আসাম আর উত্তর প্রদেশে।

আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা জানিয়েছেন যে তার রাজ্যে এখন পর্যন্ত ৭৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আর উত্তর প্রদেশে গ্রেফতার হয়েছেন অন্তত ৩০ জন।

আসামে যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে, তাদের মধ্যে রয়েছেন এআইইউডিএফের এক বিধায়ক আমিনুল ইসলামও। গত ২৩ এপ্রিল পহেলগাম হামলা নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করার অভিযোগ ওঠে আমিনুল ইসলামের বিরুদ্ধে। পরের দিন অসমের নগাঁও পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে।

পরে নগাঁওয়ের জেলা আদালত মি. ইসলাম জামিন পেলেও সঙ্গে সঙ্গেই আবার তাকে জাতীয় নিরাপত্তা আইনে আটক করা হয়।

আবার উত্তরপ্রদেশ থেকে বিবিসি-র দুই প্রতিনিধি সৈয়দ মজিজ ইমাম এবং শাহবাজ আনোয়ারের পাঠানো তথ্য অনুযায়ী, সে রাজ্যে যে ৩০ জন গ্রেফতার হয়েছেন, তাদের ১৮টি জেলা থেকে ধরা হয়েছে।

ধৃতদের মধ্যে আছেন বরেলি জেলার বাসিন্দা মুহম্মদ সাজিদ। পুলিশের ভাষ্য মতে তিনি একটি পোস্টে ‘পাকিস্তান জিন্দাবাদ’ লিখেছিলেন।

পশ্চিম উত্তর প্রদেশের মেরঠের এক সেলুন মালিক ও তার সহযোগীর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হয় সাতই মে। তারা সামাজিক মাধ্যমে ‘পাকিস্তানের সমর্থনে’ পোস্ট করেছিলেন।

মুজফ্ফরনগর জেলার পুলিশ আনোয়ার জামিল নামে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে একই অভিযোগে এফআইআর দায়ের করে। একটি ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর মি. জামিলের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয় বলে পুলিশ জানিয়েছে।

ভারতশাসিত কাশ্মীরে নিরাপত্তা বাহিনী - প্রতীকী ছবি

ছবির উৎস, Getty Images

জম্মু ও কাশ্মীর

শ্রীনগর থেকে বিবিসি-র সংবাদদাতা মাজিদ জাহাঙ্গীর বলছেন যে সামাজিক মাধ্যমে ভারতের বিরুদ্ধে ‘অসন্তোষ’ এবং ‘বিচ্ছিন্নতাবাদী চিন্তাভাবনা’ ছড়ানোর অভিযোগে সেখানকার পুলিশ হিলাল মীর নামে এক সাংবাদিককে গ্রেফতার করেছে।

জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশের সন্ত্রাস দমন শাখা এক বিবৃতিতে বলেছে যে “কাশ্মীরিরা ব্যবস্থার দ্বারা প্রতারিত হয়েছেন – এই কথা বলে যুব-সমাজের ভাবনাকে উসকে দিতে এবং বিচ্ছিন্নতাবাদী চিন্তা তাদের মাথায় ঢোকাতে” যে পোস্ট করেছিলেন মি. মীর, সেজন্যই তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

মি. মীর তুরস্কের আনাদোলু নিউজ এজেন্সির হয়ে কাজ করতেন।

তবে তার এক ঘনিষ্ঠ বন্ধু বিবিসিকে বলেছেন, পুলিশ তাকে ছেড়ে দিয়েছে।

শ্রীনগরের আরেক সাংবাদিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, তার সামাজিক মাধ্যমের টাইমলাইনের একটা পোস্ট সরিয়ে ফেলতে এক শীর্ষ পুলিশ কর্মকর্তা তাকে ফোন করেছিলেন। তিনি ওই পোস্টটি ডিলিট করে দেন।

ফটোগ্রাফার লুজিনা খানকে পুরষ্কৃত করছেন ছত্তিশগড়ের বিজেপির প্রাক্তন মুখম্যমন্ত্রী রমন সিং - ফাইল ছবি

ছবির উৎস, BBC/ALOKPUTUL

পশ্চিমবঙ্গেও গ্রেফতারি

পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের পরিসংখ্যান উদ্ধৃত করে ‘দ্য হিন্দু’ সংবাদপত্র লিখেছে, রাজ্যের নানা জেলা থেকে ছয় থেকে আট জনকে ‘পাকিস্তানপন্থি’ পোস্ট করার জন্য গ্রেফতার করা হয়েছে।

হুগলী, মুর্শিদাবাদ, হাওড়া, বারাসাত, বাঁকুড়া এবং উত্তর দিনাজপুর থেকে এদের ধরা হয়েছে।

আবার কলকাতা সংলগ্ন বারাসাতে একটি গণপিটুনির ঘটনাও ঘটেছে ‘বিতর্কিত’ পোস্ট দেওয়াকে কেন্দ্র করে।

অন্যান্য ধারার সঙ্গেই ধৃতদের বিরুদ্ধে এই অভিযোগও দায়ের করা হয়েছে যে তারা দুটি সম্প্রদায়ের মধ্যে বৈরিতার চেষ্টা করছিলেন।

মধ্যপ্রদেশেও অন্তত সাতজন গ্রেফতার হয়েছেন পহেলগামের ঘটনার পর থেকে।

দামোহ জেলার দুজনকে ধরা হয়েছে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা ছড়ানোর অভিযোগে। ওয়াসিম খান নামে একজন ওই পোস্টটি করেছিলেন এবং তাতে ‘আপত্তিকর মন্তব্য’ করেছিলেন তনভীর কুরেশি–– এই কারণেই তাদের ধরা হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।

জব্বলপুরে এক ব্যক্তির অভিযোগের ভিত্তিতে জেলা পুলিশ উসকানিমূলক ও বিদ্বেষমূলক মন্তব্যের কারণে একজনকে গ্রেফতার করে।

এই রাজ্যে ধৃতদের মধ্যে আছেন ডিন্ডোরি জেলার একটি কলেজের শিক্ষক। তিনি অবশ্য সামাজিক মাধ্যমে নয়, নিজের হোয়াটসআপ স্টেটাসে পহেলগাম হামলা সংক্রান্ত একটি ভিডিও দিয়েছিলেন।

আবার ২৫শে এপ্রিল ইন্দোরে পহেলগাম হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভের সময় ‘পাকিস্তান জিন্দাবাদ’ স্লোগান শোনা যায়।

ওই বিক্ষোভের একটি ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর পুলিশ কংগ্রেস দলের এক পৌর প্রতিনিধি আনোয়ার কাদরি ও আরও এক ব্যক্তিকে আটক করে।

আনোয়ার কাদরি গ্রেফতার হওয়ার আগে বলেছিলেন যে ভিডিওটি বিকৃত করা হয়েছে।

মধ্যপ্রদেশের পাশের রাজ্য ছত্তিশগড়ের বাসিন্দা লুজিনা খান নামে এক নারীকে গ্রেফতার করা হয়েছে ‘অপারেশন সিন্দুর’ নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে প্রশ্ন তোলার অভিযোগে।

তার পোস্ট নিয়ে বিতর্ক উঠলে মিজ. খান তার পোস্টটি মুছে দিয়ে আরেকটি পোস্টে লেখেন, ‘ভারতীয় সেনার সাহসিকতায় আমি গর্বিত। অনিচ্ছাকৃতভাবে একটি পোস্ট হয়ে গিয়েছিল, যেটি দ্বিতীয়বার পড়ার পরে আমার ভুল বুঝতে পেরেছি এবং সেই পোস্টটি সরিয়ে দিয়েছি। আমার পোস্টে যদি মানুষের অনুভূতিতে আঘাত লেগে থাকে তাহলে আমি অন্তর থেকে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। আমি একজন ভারতীয় হিসাবে গর্বিত এবং ভারতীয় সেনাবাহিনীর জন্য গর্বিত।”

লুজিনা খান একজন তরুণী ফটোগ্রাফার। ইনস্টাগ্রামে তার এক লাখের বেশি ফলোয়ার আছে।

কর্ণাটকের পুলিশ এমন একজনের বিরুদ্ধে  অভিযোগ দায়ের করেছিল, যিনি কানাডায় থাকেন - প্রতীকী ছবি

ছবির উৎস, Getty Images

অভিযুক্ত থাকেন কানাডায়

দক্ষিণ ভারতের রাজ্য কর্ণাটকের একটি ঘটনা সামনে এসেছে, যেখানে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে পুলিশ অভিযোগ এনেছিল ভুয়া খবর পোস্ট করার।

ওই পোস্টে লেখা হয়েছিল যে বেলগাভি জেলায় কর্নেল সোফিয়া কুরেশির শ্বশুর বাড়িতে আরএসএসের কর্মীরা হামলা চালিয়ে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে।

ওই ভুয়া পোস্টদাতা এবং সেটিতে সমর্থন দেওয়া দুজনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে পুলিশ।

তবে পরে জানা যায় যে ওই ভুয়া পোস্ট যিনি দিয়েছিলেন, তিনি আসলে কানাডার বাসিন্দা।

আবার এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ, যিনি পহেলগাম হামলার সঙ্গে বিহার রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনের যোগসূত্র রয়েছে বলে একটি ভিডিও পোস্ট করেছিলেন। আদালতে হাজির করা হলে তাকে দুই লাখ টাকার জামিনে ছেড়ে দেওয়া হয়- কারণ তিনি মানসিকভাবে অসুস্থ।

উত্তর পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য মেঘালয়ের বাসিন্দা দুই অপ্রাপ্তবয়স্ককে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ যে তারা সামাজিক মাধ্যমে ‘পাকিস্তানের সমর্থনে’ পোস্ট করেছিলেন।

পুলিশ বলেছে যে ফেসবুকের একটি ভিডিও পোস্টে তাদের গারো ভাষায় ভারত-বিরোধী স্লোগান ও পাকিস্তানপন্থি স্লোগান দিতে দেখা গেছে।

এর আগে, পহেলগামের হামলার পরপরই ফেসবুক পেজে ঘৃণা ছড়ানোর অভিযোগে মেঘালয়ে এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ।