Home LATEST NEWS bangla সর্বশেষ সংবাদ অবশেষে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেনের মধ্যে খনিজ সম্পদ নিয়ে চুক্তি সই

অবশেষে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেনের মধ্যে খনিজ সম্পদ নিয়ে চুক্তি সই

4
0

Source : BBC NEWS

মার্কিন ট্রেজারি সেক্রেটারি স্কট বেস্যান্ট এবং ইউক্রেনের ফার্স্ট ডেপুটি প্রাইম মিনিস্টার ইউলিয়া সভিরিডেনকো

ছবির উৎস, US Department of the Treasury

কয়েক মাস ধরে দর কষাকষির পর অবশেষে ইউক্রেনের জ্বালানি ও খনিজ সম্পদকে যৌথভাবে কাজে লাগাতে একটি চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেন।

রাশিয়ার সাথে যুদ্ধের কারণে ইউক্রেনের ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতিকে পুনরুজ্জীবিত করতে এই চুক্তির আওতায় উভয় দেশ মিলে একটি পুনর্গঠন বিনিয়োগ তহবিল গঠন করবে।

যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি সেক্রেটারি স্কট বেস্যান্ট বলেন, এই চুক্তি প্রমাণ করে দুই দেশই ইউক্রেনে দীর্ঘস্থায়ী শান্তি ও সমৃদ্ধির জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। কিয়েভের কাছে এই চুক্তি মূলত যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক সহায়তা পাওয়ার পথ সুগম করার মাধ্যম হিসেবেই গুরুত্বপূর্ণ।

নবায়নযোগ্য জ্বালানি, প্রতিরক্ষা খাত ও ভারী শিল্প অবকাঠামোর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ গ্রাফাইট, টাইটানিয়াম ও লিথিয়ামের মতো বিরল খনিজ পদার্থের বিশাল মজুদ রয়েছে ইউক্রেনে। পুরো বিশ্বে যে পরিমাণ এসব পদার্থ আছে, তার একটি বড় অংশই ইউক্রেনে আছে।

এই চুক্তিটি এমন এক সময়ে হলো যখন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চীনের বাণিজ্যযুদ্ধ চলছে। এদিকে, বর্তমান বিশ্বের প্রায় ৯০ শতাংশ বিরল খনিজ পদার্থ রয়েছে চীনের দখলে।

সম্পর্কিত খবর:
ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ভলোদিমির জেলেনস্কি

ছবির উৎস, EPA

গতকাল বুধবার বিকালে যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি বিভাগ এক বিবৃতিতে জানায়, ২০২২ সালে ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন শুরুর পর থেকে যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে যে বিপুল পরিমাণ অর্থ ও সরঞ্জাম সহায়তা দিয়েছে, এই পুনর্গঠন বিনিয়োগ তহবিল গঠনের মাধ্যমে তা স্বীকৃতি পাচ্ছে।

এক ভিডিও বার্তায় ট্রেজারি সেক্রেটারি স্কট বেস্যান্ট বলেন, এই চুক্তি “ইউক্রেনের প্রবৃদ্ধিতে সম্পদ উন্মোচনে” সহায়তা করবে।

ট্রাম্প প্রশাসনের সাধারণ ভাষার তুলনায় ঘোষণাপত্রের ভাষায় ইউক্রেনের প্রতি অনেক বেশি সংহতি প্রদর্শন করা হয়েছে। এতে “রাশিয়ার পূর্ণমাত্রার আগ্রাসন” শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে।

পাশাপাশি, আরও বলা হয়েছে, “এই যুদ্ধে যেসব দেশ বা ব্যক্তি রাশিয়াকে অর্থায়ন বা অস্ত্র সরবরাহ করেছে, তারা ইউক্রেন পুনর্গঠনের কোনো সুবিধা পাবে না।”

ইউক্রেনের ফার্স্ট ডেপুটি প্রাইম মিনিস্টার ইউলিয়া সভিরিদেঙ্কো গতকাল বুধবার চুক্তি স্বাক্ষরের জন্য ওয়াশিংটনে যান। চুক্তি স্বাক্ষরের পর তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সের এক (পূর্বের টুইটার) পোস্টে লেখেন, এই তহবিল “আমাদের দেশে বৈশ্বিক বিনিয়োগ আকৃষ্ট করবে।”

চুক্তির বিভিন্ন দিক তুলে ধরে তিনি জানান, চুক্তিতে খনিজ, তেল ও গ্যাস খাতের প্রকল্প অন্তর্ভুক্ত থাকবে। তবে সম্পদের মালিকানা ইউক্রেনেরই থাকবে।

বিরল খনিজ পদার্থের বিশাল মজুদ রয়েছে ইউক্রেনে

ছবির উৎস, Bloomberg via Getty Images

তিনি জানান, অংশীদারিত্ব সমান সমান হবে এবং কিয়েভের সংসদে এটি অনুমোদিত হতে হবে।

এই চুক্তির আওতায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে নতুন বেশ কিছু সহায়তা দেবে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি হলো, এয়ার ডিফেন্স সিস্টেমস বা আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা।

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বারবার এই চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য জোর দিয়ে আসছেন। তার কথা একটাই, ভবিষ্যতে ইউক্রেনকে নিরাপত্তা নিশ্চয়তা দেওয়ার আগে এই চুক্তি হওয়া আবশ্যক।

চুক্তির খসড়া অনুযায়ী, ভবিষ্যৎ নিরাপত্তা সহায়তার বিনিময়ে ইউক্রেন তার কিছু প্রাকৃতিক সম্পদে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে প্রবেশাধিকার দেবে।

তবে ডোনাল্ড ট্রাম্প শুরুতে যা চেয়েছিলেন, তার তুলনায় এটি অনেকটাই কম। তিনি ২০২২ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া সব সামরিক সহায়তার মূল্য ফেরত চেয়েছিলেন।

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট মি. জেলেনস্কি ওয়াশিংটন থেকে কিছু ছাড় আদায় করে নিতে পেরেছেন।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কর্তৃপক্ষ বলেছিলো যে শেষ মুহূর্তে ইউক্রেন কিছু শর্ত পরিবর্তনের চেষ্টা করছে। আর এজন্যই এই চুক্তি চূড়ান্ত করতে দেরি হয়।

বুধবার বিকেলে যুক্তরাষ্ট্রের এক সূত্র জানায় যে পুনর্গঠন তহবিল পরিচালনা কিংবা আর্থিক স্বচ্ছতার মতো কিছু বিষয় নিয়ে দুই দেশের মাঝে মতভেদ ছিল।

গত সপ্তাহে দুই দেশের প্রতিনিধিরা যাবতীয় নথিপত্রে স্বাক্ষর করেন।

বিবিসি বাংলা’র সাম্প্রতিক খবর:
ইউক্রেনে অনেক গুরুত্বপূর্ণ খনিজ সম্পদ আছে

ছবির উৎস, Getty Images

এই চুক্তিটি গত ফেব্রুয়ারিতে স্বাক্ষরিত হওয়ার কথা ছিল।

কিন্তু হোয়াইট হাউজে ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ভলোদিমির জেলেনস্কি’র বাকবিতণ্ডার কারণে এটি বাধাগ্রস্ত হয়। তখন মি. ট্রাম্প ইউক্রেনের প্রধানমন্ত্রী ভলোদিমির জেলেনস্কিকে “তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ নিয়ে জুয়া খেলার” অভিযোগে অভিযুক্ত করেছিলেন।

গত সপ্তাহে পোপ ফ্রান্সিসের শেষকৃত্যের সময় দুই দেশের নেতার মাঝে রোমে সরাসরি সাক্ষাৎ হয় এবং তারপরই এই চুক্তি স্বাক্ষরের ঘোষণা এলো।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ নিয়ে মস্কো ও ওয়াশিংটনের মাঝেও আলোচনা চলছে।

মার্কিন গণমাধ্যম নিউজনেশন নেটওয়ার্ককে গতকাল বুধবার রাতে ফোনে ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, ভ্যাটিকান সিটিতে মি. জেলেনস্কিকে তিনি চুক্তিতে সই করতে চাপ দিয়েছিলেন।

তিনি বলেন, “আমি তাকে বলেছিলাম, এমন একটি চুক্তিতে আপনি স্বাক্ষর করলে খুবই ভালো হবে। কারণ রাশিয়া অনেক বড় ও শক্তিশালী। রাশিয়া কেবল এগিয়ে যাচ্ছে।”

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট আরও বলেন, যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে যে বিলিয়ন ডলার সহায়তা দিয়েছে, এই চুক্তির মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র তা আদায় করে নেবে।

তিনি আরও বলেন, “আমি তাদের বলেছিলাম— ‘দেখো, আমাদের বিরল খনিজ দরকার। তাদের অনেক বিরল খনিজ আছে, যা অন্য অনেক স্থানে নাই। এটা তাদের জন্য বিশাল সম্পদ।”